দীর্ঘদিনের বাদানুবাদ আর জোটের কিছু সদস্যের আপত্তিকে পাশ কাটিয়ে অবশেষে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করলো ফিনল্যান্ড। ৩১তম সদস্য হিসেবে এই নিরাপত্তা জোটে যোগ দিয়েছে দেশটি। শিগগিরই নর্ডিক অঞ্চলের এই দেশের পতাকা ন্যাটোর সদরদপ্তরে উত্তোলন করা হবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের কাছে ন্যাটোতে যোগদানের নথি হস্তান্তর করেছেন ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ফিনল্যান্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোর সদস্য ঘোষণা করেন মাকির্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। যিনি ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরুর আগে বারবার ন্যাটোর বিরুদ্ধে সম্প্রসারণের অভিযোগ করেছিলেন।
নর্ডিক অঞ্চলের দেশটি যোগ দেওয়ায় এখন ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার সীমান্তের দৈর্ঘ্য দ্বিগুণ হয়েছে। রাশিয়ার সাথে ফিনল্যান্ডের এক হাজার ৩০০ কিলোমিটারের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোর সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্তির পদক্ষেপে নিজ সীমান্ত এলাকায় সামরিক শক্তি জোরদার করা হবে বলে আগেই অঙ্গীকার করেছে রাশিয়া।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে গত মে মাসে ন্যাটোতে যোগদানের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছিল ফিনল্যান্ড ও তার প্রতিবেশী সুইডেন। এর মধ্য দিয়ে গত কয়েক দশক ধরে সামরিক এই জোট থেকে দূরে থাকার নীতি পরিত্যাগ করে তারা।
ন্যাটোতে ফিনল্যান্ডের সদস্যপদ পাওয়ার পথে শেষ বাধা ছিল তুরস্ক। কিন্তু গত সপ্তাহে তুরস্কের সংসদ হেলসিঙ্কির আবেদন অনুমোদনের পক্ষে ভোট দেয়। তবে সুইডেনের যোগদানের আবেদনে তুরস্কের আপত্তি এখনও বহাল রয়েছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ফিনল্যান্ডে কী ঘটছে তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে রাশিয়া। ন্যাটোর সম্প্রসারণকে ‘রাশিয়ার নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থের লঙ্ঘন’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন তিনি।
এর আগে, ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে জোটনিরপেক্ষ নীতিতে অটল ছিল ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর তারা ন্যাটোর আর্টিকেল ফাইভের সুরক্ষা বেছে নেয়। যেখানে বলা হয়েছ, একজন সদস্যের ওপর হামলা মানেই জোটের সবার ওপর হামলা।
পশ্চিমা এই সামরিক জোটে ফিনল্যান্ড যোগ দেওয়ায় এখন দেশটিতে যদি কোনও আগ্রাসন অথবা আক্রমণ চালানো হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রসহ জোটের সব সদস্য তার সহায়তায় এগিয়ে আসবে।
রাশিয়ার আগ্রাসন ফিনিশ জনমতকে ন্যাটোতে যোগদানের পক্ষে অবস্থান নিতে জোরালো ভূমিকা পালন করেছে। এক জনমত জরিপে দেখা যায়, ফিনল্যান্ডের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এই জোটে যোগদানের পক্ষে তাদের মত দিয়েছেন।
ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এই পদক্ষেপ ফিনল্যান্ডকে নিরাপদ এবং ন্যাটোকে আরও শক্তিশালী করবে।’ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘তিনি বলতে বাধ্য হচ্ছেন যে, এটা সম্ভবত এমন একটি বিষয় যার জন্য আমরা পুতিনকে ধন্যবাদ জানাতে পারি।’
তবে ন্যাটোতে সুইডেনের যোগদানের আবেদন আপাতত আটকে আছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান স্টকহোমের বিরুদ্ধে কুর্দিদের আশ্রয় এবং তাদের রাস্তায় বিক্ষোভের অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। এছাড়া হাঙ্গেরিও এখনও সুইডেনের যোগদানের আবেদনে সায় দেয়নি।