যশোরের অভয়নগরের এক্তারপুর গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান আব্দুর রহমান। ২০২১ সালে করোনা মহামারির সময় সবাই যখন ঘরবন্দি ছিল, ঠিক তখন শ্রমিক বাবাকে সংসারে সহযোগিতার জন্য কিছু একটা করার চিন্তা করেন।
সেই সময়ের রাজঘাট জাফরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়তেন তিনি। বাড়ির ছাদে পানির হাউজি করে প্রথমে ৫০০ ঝিনুক দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে মুক্তা চাষ শুরু করেন। আর তাতেই আসে সাফল্য। অভাব অনটনের সংসারে জাগে আশার আলো। এরপর বাণিজ্যিকভাবে মুক্তা উৎপাদন শুরু করেন তিনি। রঙিন মাছের সঙ্গে মুক্তা চাষ করে রীতিমত এলাকায় হইচই ফেলে দিয়েছেন তিনি।
আব্দুর রহমান জানান, ৫০০ ঝিনুক নিয়ে যাত্রা শুরু করে এখন এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কয়েক হাজারে। তিন মাস আগে ঝিনুকের পাশাপাশি একই হাউজি কাজে লাগিয়ে আরও কিছু করার চিন্তা থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ছাড়েন রঙিন মাছ। এক্ষেত্রেও আসে বড় সম্ভাবনা। এখন প্রতিমাসে কয়েক হাজার টাকার মুক্তা বিক্রি করেন তরুণ এ উদ্যোক্তা।
আব্দুর রহমান বর্তমানে নওয়াপাড়া সরকারি মহাবিদ্যালয়ে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি মুক্তা ও রঙিন মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
আব্দুর রহমান বলেন, ‘নতুন কিছু করার তাড়না থেকে ইউটিউব দেখে মুক্তা ও রঙিন মাছ চাষ শুরু করি। এখন আমি দেশের নামকরা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে মুক্তা সরবরাহ করি। একইসঙ্গে এই পেশায় যুক্ত হতে আগ্রহী তরুণ বেকারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।’
আব্দুর রহমানের বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘ছেলের ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ডে প্রথম থেকে সহযোগিতা করেছি, এখন আলহামদুলিল্লাহ তার সুফল ভোগ করছি। বাড়ির ছাদে রঙিন মাছের সঙ্গে কীভাবে মুক্তা চাষ হয়, সেই বিষয়টি দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থী ছুটে আসে।’
স্বরখোলা থেকে আসা আব্দুল্লাহ সুমন বলেন, বেকার যুবকদের এ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
অভয়নগরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার ঘোষ বলেন, ‘নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উদ্যোক্তাদের এমন নতুন নতুন উদ্ভাবনী আমরা প্রত্যাশা করি। উপজেলা মৎস্য অফিসের মাধ্যমে আমরা তার পাশে থেকে তাকে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করে যাব।’