পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সর্বশেষ রংপুর সিটি নির্বাচনে প্রায় ৫০ হাজার ভোট পেয়ে আলোচনায় আসে চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম নেতৃত্বাধীন দলটি। এবার পাঁচ সিটিতেও চমক দেখাতে চায়। অন্তত গাজীপুর ও বরিশালে জয়ের টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তাদের নেতাকর্মীরা। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে বিএনপির ভোটও তারা পাবেন বলে মনে করছেন। এই নির্বাচনকে তারা ইলেকশন কমিশনের (ইসি) পরীক্ষা হিসাবে দেখছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তা সিটির ভোট দেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন এসব তথ্য।
তিন সিটিতে ইতোমধ্যে মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন। তারা হলেন-গাজীপুরে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সিলেটে বিভাগীয় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাহমুদুল হাসান এবং খুলনা সিটিতে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও মহানগরীর সভাপতি হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল। বরিশালে জেলা সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক মুফতি সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়েরকে প্রার্থী করা হচ্ছে। তিনি চরমোনাই পীরের ছোট ভাই এবং চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান। মেয়র নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে তাকে দল থেকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন দেওয়া হয় তার আরেক ছোট ভাই সৈয়দ মুহাম্মাদ জিয়াউল করিমকে। তিনি বর্তমানে ওই ইউপির চেয়ারম্যান। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ তাকে মেয়র প্রার্থী হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়ার কথা। রাজশাহীর মেয়রপ্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। গত সিটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসাবে অংশ নেওয়া শফিকুল ইসলামের নাম এবারও আলোচনায় আছে। জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মানুষ ধারণার চেয়েও চমক দেখবে। এমনকি অধিকাংশ সিটি নির্বাচনে তাদের দলীয় মেয়র প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন। সরকারের উচিত হবে নির্বাচন সুষ্ঠু করা এবং পেশিশক্তির ব্যবহার না করা।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান (গাজীপুর সিটির মেয়রপ্রার্থী) বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা-এটা আমাদের আগের সিদ্ধান্ত। এর আগে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আমরা অংশগ্রহণ করেছি। সেখানে দেখেছি, দেশের মানুষ ভোট দিতে পারছে না। সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে তা প্রমাণ করছি, প্রতিবাদ করছি। নির্বাচনের অনিয়মগুলো চিহ্নিত করছি। আমরা এখনো জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিইনি। স্থানীয় সরকার নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, তাহলে আমরা কেন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেব?’
কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে তারা নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতার পরীক্ষা নিতে চান। এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের লক্ষ্য দুর্নীতি, দুঃশাসনমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, মেয়র পদে অংশ নিলেও কাউন্সিলর পদে তেমন কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না তারা। তবে পাঁচ সিটিতেই কিছু ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দেওয়া হবে। বরিশাল ও সিলেটের ব্যাপারে তারা একটু বেশি আশাবাদী। এই শহর দুটিতে ভালো জনসমর্থন রয়েছে, তাই বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। সেজন্য দুই হেভিওয়েট প্রার্থীকেও দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সিলেট ও খুলনায় ভোটের অঙ্কে ভালো অবস্থানে থাকতে চান। আর রাজশাহীতে ওই অর্থে তেমন কোনো অবস্থান নেই।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪০। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ও সমমনা দলের বাইরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নীরবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। রাজনীতিতে তেমন কোনো আলোচনায় না থেকেও ইসলামী শাসনতন্ত্রে বিশ্বাসী এই দলের ভোটের হিসাব চমক তৈরি করছে। গত বছর রংপুর সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির বিজয়ী মেয়র প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হন এ দলের প্রার্থী। তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৪৯ হাজার ৮৯টি। যা আগের সিটি নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের দ্বিগুণ। দলের নেতারা বলছেন, হঠাৎ করে নয়; বরং তাদের এ উত্থান ধারাবাহিক সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার ফল। এর আগেও সিটি নির্বাচনগুলোর ফলাফলে দলের অবস্থান ছিল তৃতীয়। এবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ইসলামী আন্দোলনের।
দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া উপকমিটির সহকারী সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, ‘অন্যান্য রাজনৈতিক দলের যে ব্যর্থতা সেটিই আমাদের সাফল্যের কারণ। নির্বাচন কমিশন পাঁচ সিটিতে কতটা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেন তা আমরা এবার দেখতে চাই। মূলত এর ওপরই নির্ভর করবে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান।’