ইসরাইলের গত ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত বাস্তুচ্যুত হয়েছে গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ। পাবলিক ওয়ার্কস অ্যান্ড হাউজিং মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলায় অন্তত ৪ হাজার ৮২১টি আবাসিক ভবন, ১২ হাজার ৮৪৫টি আবাসন ইউনিট সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে এখন তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে গাজা। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রথমবারের মতো আশ্রয়শিবির স্থাপন করেছে ইউনাইটেড ন্যাশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি (ইউএনআরডব্লিউএ)। বৃহস্পতিবার গাজার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ইউএনআরডব্লিউএ’র শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আশ্রয়শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে বাস্তুচ্যুত হওয়া অনেক পরিবার। তবে তাঁবুতে এখানো জায়গা হয়নি অনেকের। শিগগিরই তাদের জন্য নতুন তাঁবুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইউএনআরডব্লিউএ।
তবে এই তাঁবুগুলোতেও নেই ন্যূনতম কোনো সহায়তা অথবা স্বাস্থ্য সুবিধা। ময়লা-আবর্জনার স্তূপেই দিন পার করছে পরিবারগুলো। অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এক সদস্য হোদা আরাফাত বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘর সব ভেঙে গেছে। আমিও ধ্বংসস্তূপের ভেতর আটকে ছিলাম। আমার ফুটফুটে মেয়ে নিহত হয়েছে। এই শিশুদের দেখুন, তারাও আমার মতো আহত হয়েছে।’
আশ্রয়শিবিরের আরেকজন বলেন, ‘ইসরাইল আমাদের এখন তাঁবুতে বাস করতে বাধ্য করছে। অথচ আমার বাড়িতে সৌর প্যানেল, ইন্টারনেট, পানি আর বিদ্যুৎ ছিল। এখন আমরা তাঁবুতে থাকছি। এখানে একত্রে ৪০ জন মানুষের সঙ্গে বাস করছি। তাঁবুতে কোনো পানি, বিদ্যুৎ অথবা খাবার নেই। একমাত্র আল্লাহই জানেন আমাদের অবস্থা এখন কী।’
অঞ্চলটিতে ইসরাইলের বিমান হামলায় পর রাফাহ ক্রসিংও অবরোধ করে রেখেছে। কোনো সাহায্যও আসছে না গাজায়। জনগণের কাছে কোনো বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাবার সবখানেই চরম সংকট। বেঁচে যাওয়া কিছু জ্বালানি দিয়ে জেনারেটর চলছে। অথবা নির্ভর করছে কিছু চার্জ থেকে যাওয়া ব্যাটারির ওপর। কিছু কিছু সোলার প্ল্যান্টে চলছে মোবাইল ফোন আর ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার কাজ। ফ্রিজে থাকা খাবার পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অঞ্চলের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিদ্যুতের অভাবে ওয়াশিং মেশিন বন্ধ। পানিও নেই। নোংরা কাপড়ে দিন কাটছে স্থানীয়দের। বেঁচে থাকতে বাধ্য হয়ে মানুষ পান করছে অস্বাস্থ্যকর পানি। বেঁচে থাকার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ফল আর সবজি এখনো আছে। আশপাশে কোনো কৃষিজমি না থাকায় খেত-খামার থেকেও কিছু সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। কৃষকরা কিছু ফল অথবা মাছ ধরার অনুমোদনও সব জায়গায় নেই।
এমনকি সুপার মার্কেটগুলোতেও কোনো খাবার অবশিষ্ট নেই। সুপার মার্কেটের ফ্রিজগুলোতে থেকে যাওয়া খাবার বিদ্যুতের অভাবে পর্যাপ্ত ঠান্ডা না হওয়ায় পচে গেছে।
ইসরাইল মসজিদ, হাসপাতাল এমনকি বেকারিগুলোকেও লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। মানুষের কাছে থেকে পাওয়া কিছু আটা দিয়ে রুটির মতো কিছু তৈরি করে খাচ্ছে। এটাই হয়তো তৃপ্তি করে গ্রহণ করছে কেউ কেউ। কারণ এছাড়া তাদের কাছে কোনো উপায় নেই।
অধিকাংশ মানুষই ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। হামলার সময় অনেকেই বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ফিলিস্তিনি আটকে আছেন। এর মধ্যে কয়েকজনের এখানো বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
গণকবর দেওয়া কয়েকজনকে শনাক্ত পর্যন্ত করা যায়নি। বিপুল সংখ্যক আহত হলেও তাদের হাসপাতালে নেওয়াও সুযোগ পর্যন্ত নেই। এমনকি নিহতদের মর্গেও জায়গা হচ্ছে না। ঘরবাড়ি আর প্রিয়জন হারিয়ে গাজাবাসী এখন অসহায়। বেঁচে থাকাদের দিন কাটছে শঙ্কায়। এত কিছুর পরও তারা হামাসের ওপর ক্ষুব্ধ নয়। ইসরাইলকেই নিজেদের অবস্থার দায়ী করছেন।