দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে চিনি, পেঁয়াজ ও আদার দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। অনেকটা সিন্ডিকেটের কবলে এসব পণ্য। সরকার চিনির দাম নির্ধারণ করে দিলেও আমদানিকারক, আড়তদাররা তোয়াক্কা করছে না। তারা ইচ্ছেমতে চিনির দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।
চিনির দাম এই বাজারকেন্দি ক (চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ) কয়েকটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে চিনির বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে তারা। নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে। এদিকে বাজার থেকে অনেকটা উধাও হয়ে গেছে মোড়কজাত চিনি। এভাবে দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা।
চট্টগ্রামের বাজারে এখন পেঁয়াজ কেজি ৮০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। আদার দামও বাড়ছে কোনো কারণ ছাড়াই। সবজির বাজারে অব্যাহত আছে তেজী ভাব। ৭০ টাকার কমে কোনো সবজিই মিলছে না। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় নাভিশ্বাস অবস্থা মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষের।
গত ১১ মে সরকার চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয়।
নির্ধারিত দাম হলো প্রতি কেজি পরিশোধিত চিনি (খোলা) মিলগেট মূল্য ১১৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১৭ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১২০ টাকা এবং প্রতি কেজি পরিশোধিত চিনি (প্যাকেট) মিলগেট ১১৯ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১২১ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১২৫ টাকা। কিন্তু এ দামে চট্টগ্রামের কোথাও চিনি বিক্রি হচ্ছে না।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, খুচরা পর্যায়ে দুই দফা চিনির দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। তদারকির অভাবে ভোক্তা পর্যায়ে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না। সরকার প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১২০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে চিনির মণ (৩৭.৩২ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬০০ টাকা। কেজি হিসাবে বিক্রি হচ্ছে ১২৩ দশমিক ৩২ টাকা। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, মিল মালিকরা কয়েক দিন আগে চিনির দাম বাড়িয়েছেন। আমদানিকারকরা নানা অপকৌশলে চিনির দাম বাড়াচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে আমদানিকারকরা ও মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চিনির সরবরাহ কমিয়ে দেয়। এরপর দামও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, সরবরাহ কমার কারণে চিনির দাম বাড়ছে। সাধারণ ক্রেতারা জানান, সরকার প্রথমবার খুচরা পর্যায়ে চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল ১০৪ টাকা। তখন বাজারে চিনি বিক্রি হয়েছে ১২০-১২৫ টাকায়। এখন ১২০ টাকা নির্ধারণ করেছে কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়।
অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও ২০ টাকার বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। সরকার কেবল মূল্য নির্ধারণ করে দায় সারছে। মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের কোনো তদারকি নেই। সরকার চাইলেই ব্যবসায়ীরা নির্ধারণ করে দেওয়া দামে চিনি বিক্রি করতে বাধ্য। কারণ আমাদের দেশে গুটিকয়েক শিল্পগ্রুপ চিনি আমদানি করে পরিশোধন ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত। তাদের কলকাঠিতে চিনির বাজার অস্থির হচ্ছে।
এদিকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে দফায় দফায় বাড়ছে দেশি পেঁয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটিতে নতুন করে দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকার বেশি। চট্টগ্রামের একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে ভালোমানের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। এক মাস আগেও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ৩২ টাকা থেকে ৩৫ টাকা। এখন পাইকারিতেই প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ঠেকেছে ৬০ টাকা থেকে ৬২ টাকায়।
অপর দিকে খুচরা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকার বেশি দামে। গত মার্চ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে। পাশাপাশি স্থলবন্দর দিয়েও আমদানি বন্ধ আছে। তাই এখন পুরোপুরি দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। চাহিদা মেটাতে পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর থেকে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। ফলে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।
সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম তেমন পরিবর্তন না হলেও আদার দাম বেড়েছে। রসুনের (আমদানি ও দেশি) কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায়। আর আদা কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। আমদানি আদা দেশি বলে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। চায়না আদা (বড় আকারের) কেজি ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী কামরুল হাসান জানান, পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় বাজারে সংকট রয়েছে। এ কারণে হুঁ হুঁ করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। আমদানির অনুমতি না দিলে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে।
বাজারদর : চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারে সবজির দামের উত্তাপ কমছে না। দীর্ঘদিন ধরে চড়া সবজির বাজার। অধিকাংশ সবজিই বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকার ওপরে। শুক্রবার প্রতি কেজি বেগুন ৬০, চিচিঙ্গা ৭০, টমেটো ৫০, বরবটি ৮০, পটল ৮০, লতি ৫০, ধুন্দল ৯০, ঢেঁড়শ ১০০, তিতা করলা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারেও মিলছে না স্বস্তি। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩০০, কাতলা ৩০০ থেকে ৩২০, পাঙ্গাস ২২০, শিং ৫৫০, টেংরা ৪৫০, কই ২৫০ ও চিংড়ি ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাবদা ৪০০, টেংরা ৪৫০, শিং ও সমুদ্রের কোরাল ৫০০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১৫ থেকে ২২০, কক ৩৪০ ও পাকিস্তানি লেয়ার ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৮০ থেকে ৮০০ এবং খাসি ১১শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।