• বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন

টেলিগ্রাম গ্রুপ ‘পমপম’ অনেক তরুণীর জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠে

Reporter Name / ২১৯ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০২৩

ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে ‘পমপম’ নামের একটি গ্রুপ খুলে সক্রিয় তাঁরা। এই গ্রুপের সদস্যরা নানাভাবে তরুণীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেন। কখনো কখনো এই সম্পর্ক প্রেমের পর্যায়েও রূপ নেয়। এরপর কৌশলে তাঁদের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করেন। আবার অনেক তরুণীর ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেন। পরে এসব ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি করেন। টাকা দিতে না পারলে তরুণীদের ভিডিও কলে এনে তাঁদের ইচ্ছেমতো কাজ করাতে বাধ্য করেন। পরে সেগুলোর ভিডিও দেশে–বিদেশে বিক্রি করতেন।

এভাবে তরুণীদের বেকায়দায় ফেলে অর্থ আদায়ে জড়িত একটি চক্রের নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তারা বলছেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ‘ব্ল্যাকমেল’ করে তরুণীদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। পাশাপাশি তরুণীদের বিভিন্ন ভিডিও টেলিগ্রাম গ্রুপে ছড়িয়ে দিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা।

ভুক্তভোগী একাধিক তরুণী ও তাঁদের অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে এই চক্রের সদস্যদের ধরতে মাঠে নামে সিআইডি।ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আবু সায়েম ওরফে মার্ক-সাকারবার্গ, শাহরিয়ার আফসান ওরফে অভ্র, বোগদাদী শাকিল, মশিউর রহমান ওরফে ডিটিআর শুভ, মো. জসীম, কেতন চাকমা ওরফে ক্যাকটাস, শাহেদ ওরফে এল ডোরাডো, মারুফ ওরফে তুর্য এবং নাজমুল সম্রাট ওরফে মিঞা ভাই।

রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী তরুণীরা এই প্রতারকদের কোনো প্রস্তাবে সাড়া না দিলে তাঁদের নাম-পরিচয় আর ব্যক্তিগত তথ্য লাখো গ্রাহকের টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে ভাইরাল করে দেওয়া হচ্ছিল।

মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি, গ্রুপটি আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে কেবল টাকা আদায় করা নয়, ওই সব ভিডিও দেশে-বিদেশে বিক্রি করেও কোটি টাকা আয় করেছে। মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, কানাডা, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের মতো দেশে অবস্থানরত বহু ব্যক্তি গ্রুপটির সদস্য হয়েছেন। তাঁরা অল্প বয়সী মেয়েদের আপত্তিকর ওই সব ছবি–ভিডিও কিনে সংরক্ষণ করেন।’

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানায়, চক্রটির নেতৃত্ব দিতেন আবু সায়েম। তিনি থাকেন চট্টগ্রামে। এনআইডি অনুযায়ী, তাঁর বয়স ২০ বছর। তিনি চট্টগ্রামের শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যালে ডিপ্লোমা করেছেন। তাঁর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকার ওপরে লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এক ভুক্তভোগী তরুণ এবং তাঁর প্রেমিকার ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ‘পমপম’ গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়ায় ডিএমপির তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় সায়েম ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া। আজ সোমবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া। রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে ছবি: সিআইডির সৌজন্যে

সিআইডি সূত্র জানায়,  চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে সায়েমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু শাহরিয়ার আফসান অভ্রকে চট্টগ্রামের হাউজিং এলাকা থেকে এবং বোগদাদী শাকিলকে উখিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সায়েমের মুঠোফোন তল্লাশি করে মার্ক-সাকারবার্গ নামের টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টটি লগইন করা অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে ‘পমপম’ গ্রুপের যত চ্যানেল ও গ্রুপ আছে, সেগুলোর অ্যাডমিনদের আসল নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। এসব অ্যাডমিনের কাজ ছিল সায়েমের হয়ে নতুন নতুন ছবি–ভিডিও জোগাড় করা।

সাবেক প্রেমিকেরাও দেন ছবি–ভিডিও

সিআইডি সূত্র আরও জানায়, এই অপরাধী চক্রের টেলিগ্রাম গ্রুপ ও চ্যানেলগুলোয় গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় সোয়া চার লাখ। আর সেগুলোতে ২০ হাজারের মতো ভিডিও এবং ছবিসহ অন্যান্য কনটেন্ট রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে তাঁদের সদস্য হয়েছেন দেশ-বিদেশের প্রায় সাড়ে ৭০০ মানুষ।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ভুক্তভোগী তরুণীদের সাবেক প্রেমিকেরাও এই টেলিগ্রামে গ্রুপে নতুন নতুন ছবি–ভিডিও দিয়েছেন। ভালো সম্পর্কের সময়ের বিভিন্ন ছবি–ভিডিও তাঁরা সায়েমকে দিয়ে দিতেন। সায়েম তাঁর অ্যাডমিনদের দিয়ে সেগুলোতে মিউজিক বসিয়ে এবং ভুক্তভোগীর ফেসবুক আইডি থেকে ছবি নিয়ে ৩০-৪০ সেকেন্ডের ভিডিও বানিয়ে গ্রুপগুলোতে প্রচার করতেন। এসব দেখে যাঁরা পুরো ভিডিও দেখতে চাইতেন, তাঁদের কাছ থেকে এক থেকে দুই হাজার টাকা করে নেওয়া হতো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category