২০২৩-২৪ অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৪৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাতে ১ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এর ফলে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই খাতে দুই হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার’ আমাদের সরকারের বিশেষ অঙ্গীকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ” এর ব্যানারে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো দেশব্যাপী বিস্তৃত হয়েছে। এর ব্যাপক ও বহুমুখী ব্যবহারে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে, দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে এবং সামাজিক গতিশীলতা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় আমরা এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের কাজ শুরু করেছি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের সামনে আছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তি খাতকে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের উপযোগী করে তোলা প্রয়োজন। আমরা ৪টি মূল স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের কাজ করেছি। এ চারটি স্তম্ভ হলো- কানেকটিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ, ই-গভর্নমেন্ট ও আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশন। চারটি ক্ষেত্রেই আমাদের অগ্রগতি ও অর্জন অভূতপূর্ব। আমাদের সরকারের উদ্যোগে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইড ৭৮ হাজার টাকার স্থলে বর্তমানে ৩০০ টাকার কমে সংগৃহীত হচ্ছে। বর্তমানে মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৮ কোটির অধিক এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো ও দক্ষতার বিস্তারের সুফল আমরা কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দেখেছি। ওই সময়ে শিক্ষা, চিকিৎসা, কার্যসম্পাদন, কর্মসংস্থান, সামাজিক সুরক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির নজিরবিহীন ব্যবহারে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব হয়েছে।
স্মার্ট বাংলাদেশের চার স্তম্ভ উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। দেশের জনগণকে তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন ‘স্মার্ট সিটিজেন’ করে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ‘Enhancing Digital Government & Economy (EDGE) 2026 সালের মধ্যে ২০ হাজার তরুণ-তরুণীকে অগ্রসর প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লিডারশিপ, সাইবার সিকিউরিটি, Emerging Technology ইত্যাদি যুগোপোযোগী বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্দেশ্যে Digital Leadership Academy প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে আইটি ও আইটিইএস প্রতিষ্ঠানের মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। এছাড়া, সাধারণ, কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও জীবনব্যাপী শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মে অনলাইনে শিক্ষার সুযোগ তৈরি ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ও ইনোভেশন সেন্টারের মাধ্যমে ৮০ হাজার তরুণ-তরুণীকে অগ্রসর প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করব।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের জনগণকে স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং সহজে সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হবে ‘স্মার্ট গভর্নমেন্ট’ এর মূল লক্ষ্য। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের উপযোগী প্রতিষ্ঠান যেমন- ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার তৈরি এবং সেবা প্রদান পদ্ধতি যেমন-তথ্যবাতায়ন পোর্টাল, মাইগভ প্লাটফর্ম, ই-নথি, ই-নামজারি, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ইত্যাদি উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করছি আমরা। স্মার্ট গভর্নমেন্ট এর আওতায় কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ সকল কাজে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণকে দ্রুততম সময়ে সর্বোত্তম সেবা প্রদান করবেন। ‘স্মার্ট ইকোনমি’র অনুষঙ্গ হবে দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেন, ক্যাশলেস সোসাইটি, স্টার্টআপ ইত্যাদি। স্মার্ট ইকনমিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ সুবিধা দেশের সকল নাগরিকের জন্য সমানভাবে হাতের নাগালের মধ্যে থাকবে। অন্যান্য প্রস্তুতির পাশাপাশি স্টার্টআপের বিকাশে ২০১৫ সাল থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ২ হাজার ৫০০ স্টার্টআপ রয়েছে এবং এ খাতে বিনিয়োগ এসেছে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের। উদীয়মান স্টার্টআপে সহযোগিতা প্রদানের জন্য সরকার স্টার্টআপ বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গঠন করেছে। স্টার্টআপ বাংলাদেশ কর্তৃক মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘শতবর্ষের শত আশা’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ১০০টি স্টার্টআপে বিনিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব স্টার্টআপে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে সরকারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সর্বোপরি ‘স্মার্ট সোসাইটি’ হবে এমন সোসাইটি, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’ এর অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করবে এবং সকলের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে।