• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৭ অপরাহ্ন

পণ্য-সেবার দাম বাড়াতে চাপ পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে, পাঁচ কারণ চিহ্নিত

Reporter Name / ১৩৮ Time View
Update : শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩

দেশে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার নেপথ্যে পাঁচটি কারণ শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এগুলো হলো- রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে দেশের বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। দেশে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো।

ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও করোনার পর থেকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি। এসব কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাচ্ছে। দেশের হালনাগাদ সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে এটি টাকার প্রবাহ বৃদ্ধিজনিত কারণে হয়নি। বেশির ভাগই হচ্ছে আমদানিজনিত কারণে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমার কারণেও মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। এছাড়া গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে।

২০২১ সালের জুনে টাকার প্রবাহ বেড়েছিল ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০২২ সালে মার্চে বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চে বেড়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত দুই বছরে বাজারে আনুপাতিক হারে টাকার প্রবাহ বেশি বাড়েনি; বরং বৃদ্ধির হার কমেছে। চলতি অর্থবছরে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের কারণেও টাকার প্রবাহ কমেছে। তবে চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে টাকার প্রবাহ সাড়ে ১১ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে টাকার প্রবাহ বাড়ার হার বেশ কিছুটা কমবে। কারণ বর্তমানে ঋণের চাহিদা কম। এছাড়া টাকার প্রবাহ যেটুকু বেড়েছে তাও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে। টাকার হিসাবে ঋণ প্রবাহ বাড়লেও অনেক ক্ষেত্রেই ডলারের হিসাবে কমেছে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, এখন যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খুব বেশি কিছু করার নেই। কারণ এখন যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে তা টাকার প্রবাহ বৃদ্ধিজনিত কারণে হয়নি।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত এপ্রিল পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে গত বছরের আগস্টে এ হার ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠেছিল। গত এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশের উপরে রয়েছে। একই সঙ্গে ডলারের সংকটও চলছে এক বছর ধরে। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার প্রায় ২৯ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। এ দুটিই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে মূল্যস্ফীতি ও ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হারে ঊর্ধ্বগতি থাকলে মানুষের আয় ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। এতে মানুষ মূল্যস্ফীতি ও টাকার অবমূল্যায়নের ফাঁদে পড়ে যাবে। এতে অর্থনীতিতে বড় আঘাত আসছে। কারণ সব খাতে ব্যয় বেড়ে যাবে। টাকার প্রবাহ বেড়ে মূল্যস্ফীতির হার আরও উসকে দেবে। ফলে এ সংকট আর বেশি দিন চলতে দেওয়া যাবে না।

তিনি আরও বলেন, এখন দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আমদানির বিকল্প পণ্য উৎপাদন করে আমদানি খরচ কমাতে হবে। বিলাসী পণ্যে নিয়ন্ত্রণ কঠোর করতে হবে। টাকা পাচার বন্ধ করাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। একই সঙ্গে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। এগুলো করলে ধীরে ধীরে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

সূত্র জানায়, সরকার আইএমএফের সঙ্গে ঋণচুক্তি করে ভর্তুকি কমাতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। এতে সরকারের আয় বেড়ে ব্যয় কিছুটা কমলেও ভোক্তার ওপর চাপ বেড়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির হারও বাড়ছে। এসব দাম বৃদ্ধির প্রভাব আগামীতেও মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর মধ্যে তিতাস গ্যাসের দাম আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। অচিরেই এর দাম বাড়তে পারে। বিদ্যুতের দামও বাড়বে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে জ্বালানি তেলের দামও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতিতে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এদিকে করোনার পর থেকে চাহিদা বাড়লেও সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে বিশেষ করে জ্বালানি পণ্যে। এ জন্য বিদ্যুৎ ও শিল্প উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে খরচ। এর প্রভাবেও মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। তবে কৃষি ও খাদ্যপণ্যে কোনো ঘাটতি নেই। তার পরও সিন্ডিকেটের কারসাজিতে এগুলোর দাম বাড়ছে। যা মূল্যস্ফীতিকে প্রভাবিত করছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category