রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে অবস্থিত ঢাকার ঐতিহ্যবাহি চিকিৎসা কেন্দ্র জনসাধারণ যাকে পিজি হাসপাতাল নামেই চেনে। হাসপাতালটির সঠিক নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমই)। এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়টির চিকিৎসার ওপরে মানুষের আস্থা অপরিসীম। কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে চিকিৎসা সেবা নেয়া অত্যন্ত দুরূহ কাজ। দুর্নীতিতে ডুবে আছে দেশের চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণায় সর্বোচ্চ এই প্রতিষ্ঠানটি। এখানে চিকিৎসার জন্য ডাক্তার ভিজিট ও টেস্ট করানোসহ সকল কাজের জন্য দালালকে পয়সা দিতে হয়। স্বাভাবিক ভাবে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া যায় না বললেই চলে। ফজরের নামাজের সময় থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে।অনুসন্ধানে দেখা গেছে একজন রুগী একটি আল্টা করানো জন্য পিজি হাসপাতালের ক্যান্সার ভবনে পহেলা আগষ্ট সকাল ৬টা থেকে ৩ আগষ্ট ২০২৩ পর্যন্ত ৩দিন লাইনে দাঁড়িয়ে সুযোগ পায়নি। ৩ আগষ্ট বিকেলে দ্বায়িত্বরত আনসার সদস্যদের সাহায্য চাইলে তারা আল্টা করানোটা একটি সাধারণ কাজ হিসেবে উল্লেখ করে। মাত্র ৬০০ টাকা দিলেই কোথাও কোন সিরিয়াল ধরতে হবে না বলে উল্লেখ করে। ক্যন্সার ভবনের তিন তলায় দ্বায়িত্বরত গনি নামের একজন আনসার সদস্য সেখানের সীমা নামের একজন আয়ার নাম্বার দিয়ে বলে তার সাথে যোগাযোগ করতে।
সিমার মোবাইল নম্বরে 01319896634 কল করে তাকে অনুরোধ করা হয় একটা আল্টা করানোর সিরিয়ালের জন্য। সিমার কথপোকথন রেকর্ড করা হয়েছে, সীমা ব্যাংক জমার টাকা ছাড়াও অতিরিক্ত ৬শ টাকা চেয়েছে। সিমা পায় ৫০ টাকা বাকি টাকা উপরে দিতে হয় বলে সাফ জানিয়ে বলে ১টাকাও কম হবে না। সিমার সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলে অজানা কারনে সে সাক্ষাৎ করেনি। অবশেষে খুঁজে পাওয়া গেল সুমি নামের আরেকজন আয়া। তখন দুপুর দেরটা। সুমি জানিয়েছে আজ যেহেতু বৃহস্পতিবার তাই সকালের শিফটে সিরিয়াল পাওয়া যাবে না। বিকালে সিরিয়াল হবে না। একদিন পরে শনিবার সিরিয়ালের জন্য সে ৬শ টাকা অতিরিক্ত দাবি করছে। অথবা কিছু টাকা অগ্রীম দিতে হবে এবং প্রেসক্রিপশনের ফটোকপি চেয়েছে। মোবাইল নাম্বার দিতে না চাইলেও অনুরোধ করে তার মোবাইল নম্বর ০১৭৮৮৪৯০৮৬১ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। সিরিয়াল দিতে শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নিয়োজিত একজন আনসার সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন আল্টা করলে সকাল শিফটে সিরিয়ালে দাঁড়ানো রুগীদের মধ্যে থেকে ৮০জন নেয়া হয়। এছাড়াও ২৫/৩০ জন নেওয়া হয় স্যারদের সুপারিশ ও এখানকার স্টাফ এবং আনসার বা দালালদের টাকা দিয়ে। বিকেল শিফটে লাইনে দাঁড়ানো রুগীদের মধ্যে থেকে নেয়া হয় ১০ জন এবং একই ভাবে অনৈতিক উপায়ে নেয়া হয় আরো ১৫ জন।
সূত্রে জানা যায়, রুগীকে অনুসরন করে এই প্রতিবেদনের তৈরি করছে তার আল্টা করানো জন্য তিন তলায় আল্টা কক্ষে ডাক্তারের সহযোগিতা করে এমন একজনকে বার বার অনুরোধ করায় সে মানবিক দৃষ্টিতে সারা দিয়েছে। তার নাম বিথী। বীথিকে মৌখিক অনুরোধে বলা হয়েছে এই রুগীর বয়স ১ বছর। এতো ছোট্ট শিশুটি ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছে টানা ২০দিন। আল্টা রিপোর্ট খুবই জরুরি। অবশেষে বিথী নিচতলায় মোবাইলে ফোন দেয় নবী নামে এক স্টাফকে যিনি ব্যাংকে ফি দেয়ার জন্য সিরিয়াল টিকেট দেয়। এরপরে বিকেল ৩টায় ব্যাংকে ফি জামা দিয়ে আল্টা করানোর জন্য ৩তলায় চলে যায়। আল্টা কক্ষ গেটে জমা দেয়া রশিদ অনুযায়ী এই ইমার্জেন্সি শিশু রুগী ৭নং সিরিয়াল পেয়েছে। অভিভাবকেরা শিশুকে নিয়ে সেখানে অপেক্ষায় থাকে। আল্টা কক্ষের আরেকজন সহকারী যার নাম আসলাম। আসলামকে দেখা যায় সিরিয়ালের অনুসারে কক্ষে প্রবেশ করানো এবং রিপোর্ট সরবরাহ করতে। আসলাম সিরিয়াল বাদ দিয়ে তার ইচ্ছেমতো পছন্দের রুগী কক্ষে নিয়ে আল্টা করায় এমন ঘটনা দৃষ্টিতে আসলে ৭নং শিশু রুগীর অভিভাবক সহকারী বিথীর অনুমতি নিয়ে আল্টা কক্ষে অপেক্ষমান চেয়ারে বসে তখন একপর্যায়ে সহকারী বিথী তার ম্যাডামকে অনুরোধ করে শিশু রুগীর আল্টা করানোর জন্য। বিথীর অনুরোধ আমলে না নিয়ে সহযোগী অধ্যাপক নাসিম সুলতানা শিশুর আল্টা করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে শিশুর অভিভাবকের ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলে। শিশুর মা তখন কান্না করে বলে এতোটুকু শিশু কথা বলতে পারেনা, সে ২০দিন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত, পেট কিছুটা ফুলে আছে তাই আল্টা করানো খুবই জরুরি এসব কথা বলে বার বার অনুরোধ করে সহযোগী অধ্যাপকে। সহযোগী অধ্যাপক নাসিম সুলতানা আরো ক্ষেপে যায় এবং বলে আল্টা করবো না বলছি তারপরেও এতো কথা কেন? ৩ আগষ্ট বৃহস্পতিবার সারে ৩টা থেকে পৌনে ৪টা ডাক্তার ও শিশুর অভিভাবকের মাঝে শুরু হয় বাদানুবাদ। সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার নাসিম সুলতানাকে জালিম হিসেবে উল্লেখ করে শিশুর মা বলে- “আপনি ডাক্তার না জালিম”। এসময় অপেক্ষায় থাকা সকল রুগী ও রুগীর অভিভাবকরা জড়ো হয়ে যায় আল্টা কক্ষের গেটে। তুমুল ঝগড়াঝাটি হয়। ৭নং সিরিয়াল পেয়ে শিশুর মা যৌক্তিক দাবি করে আল্টা করানোর জন্য শিশুর মা অনুনয়-বিনয় কান্নাকাটি করলেও ডাক্তার নাসিম সুলতানা ছিলো ভ্রুক্ষেপহীন। সহকারী আসলাম বলে কে দিলো এই শিশুর সিরিয়াল? আমি টিকিট দেখলে কোন সিরিয়াল দিতেই দিতাম না। সর্বশেষে এই শিশুর আল্টা করার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। ৩ আগষ্ট বিকেলের রিপোর্ট অনুযায়ী শিশুর আল্টা আইডি নং ৮০৭৫৩।
সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার নাসিম সুলতানার এমন অসৌজন্যমূলক আচারনের বিষয়ে শিশুর মা মৌখিক অভিযোগ করছে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) সভাপতির নিকট। বিএমএ অভিযোগের বিষয়টি লিখিতভাবে চেয়েছেন। তার ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিকট অনুরোধ জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। মৌলিক অভিযোগে বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী প্রফেসর ডাক্তার নাসিমা সুলতানা দালাল চক্রের সিন্ডিকেটের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তাকে নগদ টাকা দিলে কোন সিরিয়াল দরকার হয় না। টকা না দিলে সে এমন আচরণ করে সাধারণ রুগীর সাথে। ওই ঘটনা নিয়ে ডাক্তার নাসিম সুলতানার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানিয়েছেন “ছোট্ট শিশু অসুস্থ তাই তার মা কিছুটা অসুস্থ ছিলো। শিশুর মা বেশি রেগে যাওয়ার পরে আমার তার সঙ্গে থাকা শিশুর বাবাকে বুঝিয়েছি এবং শিশুর মাকে ধৈর্য ধরতে বলছি। শেষ পর্যায়ে আমরা শিশুর আলটা করেছি। আপনি যদি আরো বেশি জানতে চান তাহলে আমার অফিসে আসতে পারেন”