দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের ভেতরে ও বাইরে বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা। বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনকে পাত্তা না দিলেও বিদেশি তৎপরতাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন তারা। ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ আদায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা যদি আরও চাপ বৃদ্ধিসহ রাজপথের বিরোধী দলকে ব্যবহার করার পন্থা বেছে নেয় তা মোকাবিলা করাই হবে দলটির মূল চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে বিএনপির সামনে মূল ভাবনায় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি। সেটা বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাধা হিসাবে দেখছেন তারা। সব বাধা মোকাবিলা করে কীভাবে একটি সফল আন্দোলন করা যায় সেই পরিকল্পনা আঁটছেন দলটির হাই কমান্ড।
ভূরাজনীতি বড় বাধা আ.লীগের সামনে
বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনকে পাত্তা দিতে নারাজ ক্ষমতাসীনরা
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ। বিষয়টি দলের নীতিনির্ধারক মহল প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও পর্দার আড়ালে চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে তা মোকাবিলার জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায় মনে করে, ১৫ বছরের টানা শাসনে তারা অভূতপূর্ব উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ভুলত্রুটি থাকলেও পরবর্তী মেয়াদে ক্ষমতায় এসে তারা জন-অসন্তোষের সবকিছু সফলভাবে উতরাতে চায়।
তবে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার জন্য সরকার বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনকে পাত্তা দিতে নারাজ। তাদের বিশ্বাস, রাজপথের আন্দোলনে কেউ আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করতে পারবে না। তবে তাদের মাথাব্যথার একটিই কারণ; সেটি হলো-বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা যদি ভূরাজনৈতিক স্বার্থ আদায়ের জন্য আরও চাপ বৃদ্ধি করে, একই সঙ্গে রাজপথের বিরোধী দলগুলোকে ব্যবহার করার পন্থা বেছে নেয়। পাশাপাশি আরও স্যাংশন দিতে চায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা সরকারি দলের চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো এভাবে ব্যাখ্যা করেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিদেশি শক্তি বা ষড়যন্ত্রের মদদে এবং সেটিকে মোকাবিলা করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটা অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু করা আওয়ামী লীগের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, নির্বাচন বন্ধ করার জন্য একটা চক্রান্ত হচ্ছে। এজন্য তিনি বিরোধী দল বিএনপিকে দায়ী করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করব দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে। বিএনপি একদফার আন্দোলন বা আন্দোলনের নামে যদি পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, সেটা মানা হবে না। তখন রাজনৈতিকভাবেই তাদের মোকাবিলা করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতারা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাদের (আওয়ামী লীগের) সামনে বড় চ্যালেঞ্জ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। ইতোমধ্যে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ইস্যুতে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল এ মাসে ঢাকা সফর করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও এ মাসে ঢাকা আসবেন। যুক্তরাষ্ট্রের টিম গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রশ্নে কোনো ছাড় দিতে নারাজ। নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি না হলে পরবর্তী সময়ে তারা কী পদক্ষেপ নিতে পারে, তাও অনেকটা স্পষ্ট করেছে। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য মার্কিন কংগ্রেসম্যানরা চিঠি দিয়ে তাদের প্রেসিডেন্টকে চাপ প্রয়োগ করেছেন। এদিকে র্যাবের পর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে আরও কিছু সেক্টরে। বিশেষ করে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশকে বাইরে রাখার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এর বাইরে বিএনপির একদফার আন্দোলন শুরু হলে দেশকে স্থিতিশীল রাখাও সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অতীতের মতো জ্বালাও-পোড়াও বা সহিংস পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সে বিষয়টি নিয়ে বেশ সতর্ক আওয়ামী লীগের নেতারা।
এ সময় তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটানো আরেকটি চ্যালেঞ্জ। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে একদিকে যেমন কিছু নেতাকর্মী ফুলেফেঁপে উঠেছেন, তেমনই দলের অসংখ্য নেতাকর্মী হয়েছেন উপেক্ষিত। তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা উপদল। এ নিয়ে একরকম খুনোখুনি লেগেই আছে। নেতাকর্মীদের এক কাতারে আনতে না পারলে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়বে। এই অভ্যন্তরীণ বিরোধ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে নেতারা আশঙ্কা করছেন।
নির্বাচনি বছরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দেশের মানুষ সংসার চালাতে গিয়ে কঠিন সংকটের মধ্যে রয়েছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লোডশেডিং। শহরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সহনীয় হলেও গ্রামের চিত্র ভিন্ন। কখন বিদ্যুৎ আসে, কখন যায় আর কতক্ষণ থাকে, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়বে। সরকারবিরোধী কাতারে জনগণের যুক্ত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী মনে করেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে না পারলে এর জন্য ক্ষমতাসীন দল হিসাবে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক মূল্য দেওয়া লাগতে পারে। তবে বিষয়টি তারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করতে চান না। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এই পরিস্থিতির জন্য করোনা মহামারি এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করে আসছেন। কিন্তু দেশের মানুষ এই যুক্তি পুরোপুরি মানতে রাজি নন। তারা এজন্য সরকারের সদিচ্ছাকেও দায়ী করতে চান।
ভোটের আগে ১৪ দলের শরিক ও অন্য মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ অনেকটা ক্ষোভে মহাজোট থেকে একপ্রকার বের হয়ে সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়েছে জাতীয় পার্টি। মূল ধারার নেতারা সরকারের সমালোচনায় মুখর। বাংলাদেশ জাসদ ১৪ দল ছেড়েছে। বিরোধ প্রকাশ্যে না এলেও ১৪ দলের কয়েকটি শরিক রাজনৈতিক দলের নেতা সরকারের সমালোচনা করে যাচ্ছেন। তাদের অবস্থান শেষ মুহূর্তে কী হয়, তা নিয়ে চিন্তিত খোদ আওয়ামী লীগ নেতারাই। আসন ভাগাভাগিসহ কয়েকটি ইস্যুতে শরিকদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার যোগ্য প্রার্থী বাছাই এবং দলের ইশতেহার তৈরি করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হতে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। কারণ, মাঠের ত্যাগী নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অগণিত কালোটাকার মালিক এই নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন। যারা টাকার জোরে মনোনয়ন বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। অতীতের মতো নির্বাচন হলে সহজেই এমপি হওয়া যাবে-এ ধারণা থেকে এবার কালোটাকার মালিক বা নব্য বিত্তশালী হয়ে ওঠা ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন। তাদের মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থী খুঁজে বের করার কাজটি হবে খুবই কঠিন।
ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার অব্যাহত রয়েছে। এই অপপ্রচারের জবাব এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরাসহ নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক অনুষ্ঠানে আগামী নির্বাচন কঠিন হবে জানিয়ে দলের নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ার করেছেন। এসব অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, নির্বাচনটা একটা চ্যালেঞ্জ, কারণ নানা ধরনের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হয়। আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী সংগঠন হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ কুষ্টিয়ায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিএনপি দেশি-বিদেশি প্রভুদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে চায়। আগামী দিনে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে ক্ষমতায় টিকে থাকাটাও একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জয়ী হয়ে দেখিয়ে দেবেন বিএনপির প্রতি মানুষের সমর্থন নেই।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপির বড় বাধা
এবার যত বাধাই আসুক না কেন, রাজপথের আন্দোলন থেকে পিছু হটবে না বিএনপির নেতাকর্মীরা
দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মোটা দাগে তিনটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দলটি। এর মধ্যে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করাই তাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ। আর তা বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা পুলিশ প্রশাসনকেই মূল বাধা হিসাবে দেখছেন তারা। সেই বাধা মোকাবিলা করে কীভাবে একটি সফল আন্দোলন করা যায় সে রকম পরিকল্পনা আঁটছেন দলটির হাইকমান্ড। নেতাকর্মীদেরও সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জটাই হচ্ছে নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা। সেই লক্ষ্যে আমরা রাজপথে আন্দোলন করছি। কিন্তু সেই আন্দোলন মোকাবিলায় অতীতের মতো এবারও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বড় বাধা হিসাবে দাঁড়াতে পারে। সেই বাধা উপেক্ষা করে কীভাবে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে আমরা পরিকল্পনা তৈরি করছি। রাজপথের আন্দোলনে যে কোনো বাধা মোকাবিলায় নেতাকর্মীদের করণীয় নিয়ে নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, এবার যত বাধাই আসুক রাজপথের আন্দোলন থেকে নেতাকর্মীরা পিছু হটবে না। কারণ আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই জয়ের বিকল্প ভাবছি না। আশা করি অতীতের মতো প্রশাসন নগ্নভাবে আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দেবে না। এবার বাধা দিলেই আমরা রাজপথ ছেড়ে দেব সেটা ভাবার কারণ নেই। বাধা মোকাবিলা করে কীভাবে রাজপথ দখলে রাখা যায় সেই পরিকল্পনাও আমাদের আছে। এবারের আন্দোলনে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও রাজপথে নেমে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতি বাড়ছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে এমন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে যাতে সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। অথবা সংবিধানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের বিধান সংযোজন করেন। এটা বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এ চ্যালেঞ্জে মূল বাধা হতে পারে ‘দলীয়’ প্রশাসন। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকাকেই আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। অতীতের মতো সামনের আন্দোলন দমনেও সরকার পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইতোমধ্যে তারা পুলিশ প্রশাসনকে সেভাবে সাজাতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার পর সবার ধারণা ছিল পুলিশ প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ করবে। কিন্তু তারা এখনো সরকারের আজ্ঞাবহ হিসাবেই কাজ করছেন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হামলা-নির্যাতন করার পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা।
তারা আরও বলেন, বিএনপির আন্দোলন দমাতে গত পনেরো বছরে এক লাখ ১২ হাজারের মতো মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আগামী দিনের আন্দোলন দমাতে এসব মামলাকে ব্যবহার করা হতে পারে। একইসঙ্গে দেওয়া হতে পারে নতুন নতুন মামলা। তাই রাজপথের আন্দোলন সফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই হতে পারে মূল বাধা।
বিএনপি নেতারা আরও জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় আচরণ থেকে সরে আসতে নানাভাবে কাজ করা হচ্ছে। যারা নগ্নভাবে সরকারের পক্ষে কাজ করছেন তাদের তালিকা তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দূতাবাসে পাঠানো হচ্ছে। এতে তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও ভয়ের সৃষ্টি হবে। তবে এটা যাতে হিতে বিপরীত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে। বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে না এমন নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে। তবে যারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা হয়ে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে গণতন্ত্র হরণ করেছে তাদের কোনো ক্ষমা নেই। তাদের আইন অনুযায়ী সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।
আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে দল ও জোটের ঐক্য ধরে রাখা বিএনপির কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলে ভাঙনের চেষ্টা হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তাই দলের সব স্তরে ‘চেইন অব কমান্ড’ নিশ্চিত করাকেও চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন হাইকমান্ড। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার পর সহিংসতা এড়িয়ে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, জামায়াতের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত সম্পর্ক কী হবে সেসব দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে প্রয়োজন একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। শুধু বিএনপি নয়, দেশবাসীর কাছে এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠাই এখন অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সেটা মোকাবিলায় আমরা কাজ করছি। কিন্তু সহজেই সেই দাবি আদায় করা সম্ভব হবে না। রাজপথের কর্মসূচিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতীতের মতো ন্যক্কারজনক বাধা আসতে পারে। সেই বাধা মোকাবিলা করেই এবার সামনে এগিয়ে যাব। এর কোনো বিকল্প নেই।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, আন্দোলনে সফল হলে কিছু বিষয় সামনে আসবে। এর মধ্যে রয়েছে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া, মনোনয়ন চূড়ান্ত করা। সমমনা অনেক দলের মাঠপর্যায়ে তেমন সাংগঠনিক শক্তি নেই। কিন্তু ওইসব দলের শীর্ষ নেতারা দেশে-বিদেশে বেশ পরিচিত। তাই তাদের বাদ দিয়ে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা কঠিন হবে। তাদের মনোনয়ন দেওয়া হলে সেখানে দলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা বাদ পড়বেন। এতে দেখা দেবে ক্ষোভ ও হতাশা। সবাইকে ম্যানেজ করে মনোনয়ন চূড়ান্ত করাও হাইকমান্ডের সামনে একটি চ্যালেঞ্জ।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এই মুহূর্তে এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করাই বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় কাজ। তারা স্বেচ্ছায় দাবি মেনে নেবে না। বিএনপির আন্দোলন বানচালে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালাবে সরকার। প্রশাসনকে ব্যবহার করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চাইবে। কিন্তু এবার সেই পরিস্থিতি তৈরি হতে দেওয়া হবে না। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে।