• শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৭ অপরাহ্ন

বাচ্চু দেশ ছাড়ার আগে দুদকের ক্রোক করা সম্পদও বিক্রি করেন!

Reporter Name / ১৯৫ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতা, ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর দেশত্যাগের আগে তার বেশ কিছু সম্পদও বিক্রি করে দেন। কিছু সম্পদ দুদক ক্রোক করে রাখলেও সেখানে রিসিভার নিয়োগ না করায় তিনি গোপনে অনেক সম্পদ বিক্রি করার সুযোগ পান। এর মধ্যে বনানীর বাড়ির সব কটি ফ্ল্যাট তিনি বিক্রি করে দেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের কিছু সম্পদও তিনি বিক্রি করেছেন বলে জানা গেছে। তবে দুদকের পক্ষ থেকে তার বাগেরহাটের বাড়িটি তালা মেরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

দুদকের দায়ের করা ৫৮ মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি হচ্ছেন-আগেভাগে এই খবর পেয়ে তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান। যদিও তার বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু দুদক থেকে নিয়মিত ফলোআপ না করায় তিনি সেই সুযোগ নিয়ে গত ৭ জুন দেশত্যাগ করেন। তার বিষয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থা এমন তথ্যই জানাচ্ছে।

অন্যদিকে তিনি দেশ থেকে কানাডায় পালিয়েছেন এমন একটি তথ্য গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পেরেছে দুদক। সেখানে তার বাড়ি-গাড়িসহ বিশাল সম্পদ রয়েছে। সেই সম্পদ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে চিঠি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এদিকে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ১০ জন সদস্য ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত ছিলেন বলে দুদক টিম তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু তাদের মামলার চার্জশিটভুক্ত না করায় জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রসঙ্গে দুদক কমিশনার জহুরুল হক যুগান্তরকে বলেন, পরিচালনা পর্ষদের কারও বিরুদ্ধে ঋণ কেলেঙ্কারিসহ কোনো অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

আব্দুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতিতে জড়িত-এমন একটি খবর নিশ্চিত হয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিল গণমাধ্যমে। পরে তার বিরুদ্ধে একাধিক অনুসন্ধানী রিপোর্ট করা হয়। যদিও ২০১৫ সালে দুদকের দায়ের করা কোনো একটি মামলাতেও তার নাম ছিল না। মামলার পর দুদক থেকে বরাবরই বলা হচ্ছিল তদন্তে তার অপরাধ ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখা হবে। উচ্চ আদালত থেকেও দুদককে বারবার তাগিদ দেওয়া হচ্ছিল। কেন বেসিক ব্যাংক মামলায় আসামি করার ক্ষেত্রে দুদক পিক অ্যান্ড চুজ নীতি নিয়েছে সেই প্রশ্নও তোলেন আদালত। এরপরও কেটে গেছে ৮ বছর। অর্থাৎ মামলার ৮ বছর পর গত ১২ জুন আব্দুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে ৫৮টি মামলার চার্জশিট দিয়েছে দুদক। যদিও মোট মামলা ছিল ৬১টি। বাকি মামলার চার্জশিটও দেওয়া হবে অচিরেই।

আব্দুল হাই বাচ্চু দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য কী উদ্যোগ নেওয়া হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার বলেন, যে প্রক্রিয়ায় দেশের বাইরে থেকে দুর্নীতিবাজ এবং তাদের সম্পদ ফিরিয়ে আনা হয় তার ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাকে ফিরিয়ে আনতে আইনি সমস্যা হলে তার অনুপস্থিতিতেই বিচারকার্য সম্পন্ন হবে।

প্রসঙ্গত, আব্দুল হাই বাচ্চুর কাজ ছিল সরকারি এই ব্যাংকটি যাতে ঋণ বিতরণ ও আদায়ে কোনো অনিয়ম না করে, ব্যাংকিং নীতি মেনে আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষা করে তা তদারকি করা। ব্যাংকটিকে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করে আমানতকারীদের স্বার্থসংরক্ষণ করা। কিন্তু ঘটল তার উল্টোটা। তিনি পুরো ব্যাংকটিকে তার পারিবারিক সম্পদে পরিণত করলেন এবং নজিরবিহীনভাবে লুটপাট আর ঋণ জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়লেন। ব্যাংকিং ইতিহাসে নজিরবিহীন এ আর্থিক কেলেঙ্কারিতে তোলপাড় ছিল সারা দেশ। বিশেষ করে এত বড় অপরাধ করেও তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) তাকে এড়িয়ে যায়। যা ছিল তীব্রভাবে সমালোচিত। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হয় এ আলোচিত খলনায়ক। তার ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়।

২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়। ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তা অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানকালে দুদক কর্মকর্তারা জানতে পারেন ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ঋণপত্র যাচাই না করে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। জামানত ছাড়া এবং জাল দলিল মর্টগেজ রেখে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদন করেন তারা। দীর্ঘ পাঁচ বছর অনুসন্ধান চলাকালে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এরপর কমিশনের অনুমোদন নিয়ে ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় দায়ের করা এসব মামলায় মোট ১২০ জনকে আসামি করা হয়। আসামির তালিকায় ৮২ ঋণগ্রহীতা, ২৭ ব্যাংকার ও ১১ জন ভূমি জরিপকারীর নাম থাকলেও ছিল না ঋণ কেলেঙ্কারির মূল হোতা আব্দুল হাই বাচ্চুর নাম। কিন্তু মামলার তদন্তকালে দুদক জানতে পারে আলোচিত এই ঋণ কেলেঙ্কারির পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু। এ কারণে বাচ্চুসহ আরও বেশ কয়েকজনের নাম চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category