৩৯ ওভার শেষে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা দুদলেরই স্কোর ছিল সমান ১৭৩/৫। ৪০ ওভার শেষে খানিকটা এগিয়ে যায় বাংলাদেশ-১৭৭/৫। শ্রীলংকা ১৭৬/৫। বাংলদেশের হৃদয়ে তখনও আশার রক্ত সঞ্চালন করে চলেছেন তাওহিদ। কিন্তু থিকশানা ৪৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাওহিদকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশের ‘শেষ আশ্রয়’ কেড়ে নেয়। তাওহিদ যখন হতাশার চাদর গায়ে জড়িয়ে সাজঘরে ফিরছেন, লংকান কোচ ক্রিস সিলভারউড তখন আনন্দে লাফ দিয়ে ওঠেন। তাওহিদের আউটে বাংলাদেশের হৃদয় ভেঙে যায়। ১৮ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন তিনি। ২১ রানের জন্য জয় হাতছাড়া করে বাংলাদেশ।
মাঝে নাসুম আহমেদ (১৫ বলে ১৫) ও হাসান মাহমুদ (সাত বলে ১০*) আক্ষেপ বাড়িয়েছেন শুধু। নাসুমকে বোল্ড করে পাথিরানা যখন ৪৮.১ ওভারে ২৩৬ রানে থামিয়ে দেন বাংলাদেশকে, প্রেমাদাসা তখন লংকানদের ‘প্রিয়তমা’। আর এবারের এশিয়া কাপে শ্রীলংকার কাছে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার হেরে ফাইনালের আশা কার্যত শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের। ভারতের বিপক্ষে এখন ম্যাচটি গাণিতিক হিসাবে যদি-কিন্তুর ওপর ফাইনালের স্বপ্ন টিকে রয়েছে সাকিবদের।
ম্যাচ শেষে সাকিব স্বীকার করেন শ্রীলংকা তাদের চেয়ে ভালো খেলেই জিতেছে। যদিও লংকানরা জয়ডংকা বাজিয়েছে অনেক কষ্টে। সাদিরা সামারাবিক্রমার ব্যাট হাতে ৯৩ রানের পর বল হাতে থিকশানা (৩/৬৯), শানাকা (৩/২৮) ও পাথিরানার (৩/৫৮) নয় উইকেটে জয় পায় শ্রীলংকা। এটি শ্রীলংকার টানা ১৩তম জয়। অস্ট্রেলিয়ার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টানা জয়ের রেকর্ডও।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসায় উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ ছিল না মোটেও। পেসাররা যেমন মুভমেন্টের দেখা পেয়েছেন, তেমনি ছিল অসম বাউন্সও। স্পিনাররা পেয়েছেন টার্ন ও বাউন্স। শেষ কয়েকদিনে কলম্বোয় বৃষ্টি হওয়ার কারণে তার প্রভাব পড়েছে উইকেটেও। তবে টিকে থেকে কীভাবে রান তুলতে হয় সেটা দেখিয়েছেন শ্রীলংকার সাদিরা সামারাবিক্রমা।
বাংলাদেশের সামারাবিক্রমার ভূমিকায় এগোচ্ছিলেন তাওহিদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পেরে ওঠেননি। ওপেনিংয়ে মোহাম্মদ নাঈম শেখের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ ভালো শুরুই এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু ২৮ রানের ব্যবধানে টপ অর্ডারের চার উইকেট হারিয়ে কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। এরপর পঞ্চম উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে তাওহিদ ৭২ রানের জুটি গড়ে আশার সলতে জ্বালিয়ে রেখেছিলেন। মুশফিক ফেরেন ২৯ করে। এরপর বিশেষজ্ঞ ব্যাটার শামীম হোসেন ফেরেন পাঁচ রানে। হৃদয় তখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু থিকশানার বলে এলবিডব্লু হলে সব আশা শেষ হয়ে যায়। শেষ বেলায় নাসুম ও হাসান মাহমুদ শুধু হতাশা বাড়িয়েছেন।
এশিয়া কাপে টানা চার ম্যাচে টস জিতলেন সাকিব। প্রথম তিন ম্যাচে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তের পর চতুর্থ ম্যাচে এসে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে ফিল্ডিং নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কলম্বোর উইকেট মন্থর ভেবে আফিফ হোসেনের জায়গায় নাসুম আহমেদকে একাদশে রেখে স্পিন শক্তি বাড়ায় বাংলাদেশ। কিন্তু ম্যাচে কম খরুচে বোলিং করেও তিন স্পিনার কোনো উইকেট পাননি। তিন পেসারই ছয়ের বেশি ইকোনমি রেটে রান দিয়ে নিয়েছেন আট উইকেট। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পরও সাদিরা সামারাবিক্রমার দারুণ ব্যাটিং এবং বাংলাদেশের বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণেই স্বাগতিক শ্রীলংকা আড়াইশ পার করতে পারে। ২০১৮ সালের পর এই প্রথম সাকিব টানা তিন ম্যাচে থাকলেন উইকেটশূন্য।
প্রথম পাওয়ারপ্লের মধ্যেই পাঁচ বোলার বোলিং করেন। তবে উইকেট এসেছে শুধু হাসান মাহমুদের বলে। নিজের দ্বিতীয় ওভারে প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি হজমের পর তৃতীয় বলে হাসান ঘুরে দাঁড়ান দুর্দান্তভাবে। দারুণ সিম পজিশন, লেংথ থেকে উঠেছিল বলটা। স্টাম্প রক্ষা করতে ব্যাট বাড়াতে বাধ্য হন করুনারত্নে। তাতেই ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় মুশফিকুর রহিমের কাছে। তার আগে প্রথম ওভারে তাসকিন আহমেদ উইকেট প্রাপ্তির উদযাপন করেছিলেন। কিন্তু পাথুম নিশাঙ্কাকে আম্পায়ার এলবিডব্ল– আউট দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। প্রথম পাওয়ারপ্লেতে ওই এক উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকরা তোলে ৫১ রান।
টানা ছয় ওভার আঁটোসাঁটো বোলিং করেন সাকিব ও নাসুম। উইকেটের খোঁজে ১৯তম ওভারে আবার পেসার হাসানকে ফেরান অধিনায়ক। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। তবে নিশাঙ্কার ব্যাটে ছুঁয়ে যাওয়া বল ঝাঁপ দিয়েও তালুবন্দি করতে পারেননি।
আফগানিস্তানের ইব্রাহিম জাদরানের ক্যাচটির পুনরাবৃত্তি করতে ব্যর্থ হন। ৩৬ রানে জীবন পাওয়া নিশাঙ্কাকে (৪০) পরে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন বাঁ-হাতি পেসার শরীফুল ইসলাম। দ্বিতীয় উইকেটে নিশাঙ্কাকে নিয়ে ৭৪ রানের জুটি গড়া কুশল মেন্ডিসকে ২৯ রানে একবার জীবন দেন শামীম হোসেন। শরীফুলের বলে বাউন্ডারি লাইনের ক্যাচটি ঠিকঠাক হাতে রাখতে পারেননি তিনি।
ক্যারিয়ারের ২৪তম হাফ সেঞ্চুরির পরই মেন্ডিসকে (৫০) ফেরান শরীফুল। এরপর আসালাঙ্কা ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভাও উইকেটে এসে থিতু হতে পারেননি। তবে এক পাশে আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পথে কিছুটা সঙ্গ দিয়েছেন দাসুন শানাকা। ইনিংসের শেষ বলে সামারাবিক্রমা আউট হওয়ার আগে ৭২ বলে আট চার ও দুই ছক্কায় করেন ৯৩ রান। নয় উইকেটে শ্রীলংকা পৌঁছে যায় ২৫৭ রানে। সমান তিনটি করে উইকেট নেন তাসকিন ও হাসান, শরীফুল দুটি উইকেট নেন। সমান ১০ ওভার বোলিং করে উইকেটশূন্য থাকলেও নাসুম দেন মাত্র ৩১ এবং সাকিব দেন ৪৪ রান।
(স্কোর কার্ড খেলার পাতায়)