কয়েক দশক ধরে আফগান শরণার্থীরা পাকিস্তানে বসবাস করে আসছেন। নিজ দেশ ছেড়ে পাকিস্তানকেই বানিয়েছিলেন স্বদেশ। তালেবান আতঙ্কে ফিরতে চান না মাতৃভূমিতে। কিন্তু এখন আর উপায় নেই। আশ্রয় নেই পাকিস্তানেও। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ। এরপর থেকেই শুরু হবে গ্রেফতার। সেই ভয়ে পাকিস্তানও ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এককথায় অসহায় মানুষগুলোকে জোর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে পাকিস্তান। বাধ্য হয়ে দল বেঁধে আবার ফিরছেন দেশে। বিবিসি।
আশির দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনার অনুপ্রবেশ এবং মুজাহিদ বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই শুরু হয়। এরপর থেকে আফগানিস্তানের পশতুন জনগোষ্ঠীরা পাকিস্তানে পাড়ি জমান। এত বছর পর হঠাৎই পাকিস্তান ছাড়ার ঘোষণা আসে। অক্টোবরের শুরুতেই বলা হয়েছিলÑনভেম্বর শুরুর আগেই পাকিস্তানে বসবাসকারী আফগান নাগরিকদের নিজের দেশে ফিরতে হবে। না ফিরলেই গ্রেফতার করা হবে বলেও জানানো হয়। সেই চরম সময়সীমার প্রহর ঘনিয়ে আসতেই পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে কঠোর প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়। মঙ্গলবার থেকে সীমান্তে পাক সেনা এবং ফ্রন্টিয়ার কোর বাহিনীর বাড়তি মোতায়েন করা হয়েছে। পাকিস্তান সরকারের মতে, গত দুই মাসে প্রায় ২ লাখ আফগান নাগরিক ১ নভেম্বরের সময়সীমার আগেই পাকিস্তান ত্যাগ করেছেন। তালেবান শরণার্থী মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল মুতালেব হাক্কানি বলেছেন, সাম্প্রতিক দৈনিক প্রত্যাবর্তনের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি। পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশ জানিয়েছে, মূলত দুটি কারণে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তটি নিয়েছে পাকিস্তান। প্রথমত, দেশের বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাড়তি ব্যয়বহনে অক্ষমতা। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংকট।
পাকিস্তান সরকারের মতে, পাকিস্তানে ৪০ লাখেরও বেশি আফগান অভিবাসী এবং উদ্বাস্তু রয়েছে। যাদের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার অনথিভুক্ত। সরকার বলেছে, যারা অবৈধভাবে দেশে আছেন তাদের লক্ষ করা হবে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরও আশ্বস্ত করেছে, সরকার শরণার্থী কার্ডধারীদের (পাকিস্তান সরকার কর্তৃক জারি করা একটি আইডি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না। তবে অভিবাসী আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘নাগরিক কার্ড থাকা সত্ত্বেও তাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার ছেলেদের গ্রেফতার করেছে।’ মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো নির্বাসন নীতির সমালোচনা করেছে। এদিকে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার পাকিস্তানকে অনুরোধ করেছে যাতে দেশে থাকা অনথিভুক্ত আফগানদের চলে যাওয়ার জন্য আরও কিছু সময় দেওয়া হয়।