পবিত্র রমজান আখেরাতের পাথেয় গোছানোর মাস। এই মাসে ফরজ ইবাদত ছাড়াও বেশি বেশি নফল ইবাদতে সচেষ্ট হওয়া উচিত। নফল ইবাদতের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল ছিল তাহাজ্জুদের নামাজ। তিনি ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজার পর সবচেয়ে উত্তম রোজা মহররমের। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম হলো রাতের নামাজ (অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ)।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬৩)
তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারীরা আল্লাহ তাআলার পছন্দের বান্দা। নবী কারিম (স.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.) থেকে শুরু করে যুগে যুগে আল্লাহর মকবুল বান্দারা পরকালীন উন্নতির জন্য শেষ রাতের তাহাজ্জুদকেই প্রধান হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় মুত্তাকিরা থাকবে জান্নাতসমূহে ও ঝর্ণাধারায়। গ্রহণ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদের দেবেন। নিশ্চয় ইতঃপূর্বে তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। তারা রাতের সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত। রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত।’ (সুরা জারিয়াত: ১৫-১৮)
তাছাড়া কেয়ামতের দিন যখন মানুষের ফরজ ইবাদতে কোনও ঘাতটি দেখা দেবে আল্লাহ তায়ালা নফলের মাধ্যমে তা পূরণের ব্যবস্থা করবেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় কেয়ামতের দিন বান্দার যে কাজের হিসাব সর্বপ্রথম নেওয়া হবে তা হচ্ছে নামাজ। সুতরাং যদি তা সঠিক হয়, তাহলে সে পরিত্রাণ পাবে। আর যদি (নামাজ) খারাপ হয়, তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি তার ফরজের (ইবাদতের) মধ্যে কিছু কম পড়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘দেখ তো! আমার বান্দার কিছু নফল (ইবাদত) আছে কি না, যা দিয়ে ফরজের ঘাটতি পূরণ করে দেওয়া হবে?’ অতঃপর তার অবশিষ্ট সমস্ত আমলের হিসাব ওভাবে গৃহীত হবে।’ (আবু দাউদ: ৮৬৪; তিরমিজি: ৪১৩; ইবনে মাজাহ: ১৪২৫)
তাহাজ্জুদ নামাজের প্রতি আল্লাহর রাসুল এতোটাই গুরুত্ব দিতেন যে, শরীরের দিকেও খেয়াল থাকত না। তাহাজ্জুদ নামাজ দীর্ঘ করার কারণে তাঁর পা ফুলে যেত। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) রাতে নামাজ আদায় করতেন; এমনকি তাঁর পা ফুলে যেত। আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এত কষ্ট করেন কেন? অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?’ (সহিহ বুখারি: ৪৮৩৭)
রমজানে তাহাজ্জুদের প্রতি নবীজির আকর্ষণ আরো বেড়ে যেত। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে রমজান ছাড়া কখনো ভোর পর্যন্ত সারা রাত জেগে ইবাদত করতে বা এক নাগাড়ে পুরো মাস রোজা পালন করতে দেখিনি।’ (সহিহ মুসলিম: ১৬১৪)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) রমজান মাসে তাহাজ্জুদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। তবে তিনি অবশ্যপালনীয় বিষয় হিসেবে নির্দেশ দেননি। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও নিষ্ঠার সঙ্গে রমজানে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার পূর্ববর্তী পাপ মার্জনা করবেন।’ (সুনানে নাসায়ি: ২১৯৭)
রাতের শেষভাগে যে নফল নামাজ পড়া হয় মূলত সেটিই তাহাজ্জুদ। রাতের শেষভাগের নির্জন ইবাদত-বন্দেগির গুরুত্ব এতই বেশি যে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করে বান্দাদের আহ্বান করেন এই বলে যে—‘আমি রাজাধিরাজ। কে আছে আমার নিকট প্রার্থনাকারী, আমি তার প্রার্থনা মঞ্জুর করব। কে আছে আমার কাছে আবেদনকারী, আমি তার আবেদন পূরণ করব। কে আছে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। সকাল উদিত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা এভাবে বান্দাকে আহ্বান করতে থাকেন।’ (বুখারি: ১১৪৫; মুসলিম: ৭৫৮)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানে বেশি বেশি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।