পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের মুসলিমপাড়ায় স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে থাকেন নাসরিন জাহান। সাধারণ গৃহবধূ থেকে আজ তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। আশপাশের অনেকের কাছে তিনি এখন অনুকরণীয়।
নাসরিন জাহান বলেন, নিজে কিছু করার তাগিদে গ্রামের বাড়িতে পড়ে থাকা জায়গায় সবজির বাগান করার ইচ্ছেটা স্বামীর কাছে তুলে ধরি। স্বামীর উৎসাহ পেয়ে নিজের জমিতে বরবটি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচামরিচ, টমোটো, বোম্বাই মরিচ আবাদ শুরু করি। পাশাপাশি চলে ভুট্টা, সূর্যমুখী ও মুগডাল চাষ। সবজি চাষের পাশাপাশি শুরু করি গাভীর খামার। বর্তমানে দেড়শ’ শতাংশ জমিতে চলছে সবজির আবাদ।
নাসরিন একসময় নিজের প্রাইভেট ব্রাইট স্টার প্রিকেডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মহামারী করোনার কারণে ২০২০ সালে স্কুল বন্ধ থাকায় ৩০ হাজার টাকা খরচ করে সবজি চাষ শুরু করেন। এখন প্রতি বছর সবজি চাষে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। এর আগে ২০০৮ সালে তিনটি গরু কিনে ‘নাসরিন ডেইরি ফার্ম’ নামে একটা খামার গড়ে তুলেছিলেন। বর্তমানে তার বিশাল খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫টি গরু আছে। মূলধন দেড় কোটি টাকা। গবাদিপশু বিক্রির পাশাপাশি পাইকারি দরে স্থানীয় বাজারে দুধও বিক্রি করেন।
কৃষি উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পেয়েছেন এই উদ্যমী নারী। ২০২১ সালে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম এবং ২০২০ সালেও একইভাবে সেরার পুরস্কার জিতে নেন। এ ছাড়া বাছুর পালনে ২০১৮ সালে জেলায় তিনি শ্রেষ্ঠ খামারির স্বীকৃতি পেয়েছেন। নাসরিনের ফার্মে প্রতিদিন এখন ২০০-৪০০ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। নিজে উপস্থিত থেকে দুধ সংগ্রহ, দুধ থেকে ক্রিম আলাদা করা ও মাঠা তৈরির কাজ স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ মেশিনের মাধ্যমে করছেন। দু’জন কর্মচারীর বেতনসহ প্রতি মাসে তার খরচ প্রায় আড়াই লাখ টাকা।
এক সময় প্রতিদিন ফার্মের ২০০-৪০০ লিটার দুধ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা খুব কঠিন ছিল। কাছের মানুষদের বিনামূল্যে দিয়েও অনেক দুধ নষ্ট হয়ে যেত। তখন কুয়াকাটা পর্যটন এলাকায় মিষ্টি মেলা নামে একটি মিষ্টির দোকান খোলেন। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না থাকায় দোকানটি কলাপাড়া শহরে নিয়ে আসেন। তার দোকানটি এখন শহরের অভিজাত মিষ্টির দোকান হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে মিষ্টি তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। এখন তিনি অন্যদেরও মিষ্টি তৈরির প্রশিক্ষণ দেন।
প্রতি মাসে খামারের সাত-আট টন গোবর স্থানীয়রা সংগ্রহ করে কৃষিজমি, মাছের ঘের ও বাগানের জন্য নিয়ে যান। মাসে প্রায় আট লাখ টাকার দুধ ও মিষ্টি বিক্রি করেন তিনি। সব খরচ মিটিয়ে মাসে লাখ টাকা লাভ থাকে বলে জানালেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা, পটুয়াখালী, কলাপাড়া ও মহিপুরে ১০-২০টি ডেইরি ফার্ম নাসরিন জাহানের পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিকল্পনায় গড়ে উঠেছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গাজী মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, নাসরিন জাহানের কাজের আগ্রহ দেখে আমরাও অনুপ্রাণিত হয়েছি। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পশুসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ওষুধসহ যাবতীয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। তাকে অনুকরণ করে অনেক নারীই গবাদিপশু পালনে উৎসাহী হয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, নাসরিন পরিশ্রম, সাহস ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে কৃষি ও খামার করে তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা ও খামারি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। কৃষি অফিস তাকে সব রকম পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।