• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:১১ অপরাহ্ন

সিয়াম শুদ্ধ জীবনের জন্য

Reporter Name / ১৪৭ Time View
Update : রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩

রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি। ফারসি শব্দ রোজার আরবি হচ্ছে সওম। সওম অর্থ বিরত থাকা, পরিত্যাগ করা। পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুটি কামনায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তসহকারে পানাহার থেকে বিরত থাকাকে রোজা বলে।

রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা সংযমী এবং তাকওয়াবান হই যা আমাদের পশুবৃত্তিক চরিত্র থেকে রক্ষা করে। রোজার মাধ্যমে আমাদের আত্মা পরিশুদ্ধ হয় যা একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে। রোজা রোজাদারকে হিংসা, বিদ্বেষ, অহংকার, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, প্রভৃতি রিপু থেকে রক্ষা করে।

এ রোজা আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ছাড়াও আনয়ন করে নীতি-নৈতিকতা, অন্তরের পবিত্রতা ও চিন্তাধারার শুদ্ধতা যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। কুরআন-হাদিসে বর্ণিত রোজার উপকারিতাগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-

রোজা শুধু আল্লাহর জন্য

রোজাই একমাত্র ইবাদত যেখানে লোক দেখানোর কোনো কিছু থাকে না। কিন্তু অন্যান্য ইবাদত যেমন নামাজ, হজ কিংবা জাকাত পালন করলে বা পরিত্যাগ করলে দেখা যায়। রোজা শুধু আল্লাহর জন্য রাখা হয় এবং আল্লাহই এর প্রতিদান তাঁর বান্দাকে নিজের কুদরতি হাতে দিয়ে থাকেন। হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রোজা এ নিয়মের ব্যতিক্রম, কেননা তা বিশেষভাবে আমার জন্য আমি স্বয়ং তার প্রতিদান দেব, বান্দা তার পানাহার ও কামনা-বাসনাকে আমার সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করেছে।’

এ হাদিস দ্বারা আমরা অনুধাবন করতে পারি নেক আমলের মাঝে রোজা পালনের গুরুত্ব আল্লাহর কাছে কত বেশি। তাই সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) যখন বলেছিলেন, হে রাসূলুল্লাহ! আমাকে অতি উত্তম কোনো নেক আমলের নির্দেশ দিন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : তুমি রোজা পালন করবে। মনে রেখ এর সমমর্যাদার কোনো আমল নেই। (নাসায়ি)

রোজা দেহের জাকাত

রোজা আমাদের শরীরের জন্য জাকাত¯রূপ যেমন আমরা আমাদের মালের জাকাত দিয়ে থাকি। রোজার মাধ্যমে শরীরের পবিত্রতা অর্জন হয় যেমন জাকাতের মাধ্যমে মাল পবিত্র হয়।

রোজার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ

নবিজি (সা.) বলেছেন, মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, কিন্তু সিয়ামের বিষয়টা ভিন্ন। কেননা রোজা শুধু আমার জন্য আমিই তার প্রতিদান দেব (মুসলিম)।

তাকওয়া অর্জন

রোজা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন : ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার’ (সূরা বাকারা : ১৮৩)। রোজার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহ আরও বলেন : ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যকার সবচেয়ে তাকওয়াবান ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্মানিত’ (সূরা হুজুরাত : ৩)। আর রোজার মাধ্যমেই আমরা তাকওয়া অর্জন করে আল্লাহর কাছে সম্মানিত হতে পারি।

কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে

আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত যে, নবিজি (সা.) বলেছেন, রোজা ও কুরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, রোজা বলবে হে প্রতিপালক! আমি দিনেরবেলা তাকে পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। কুরআন বলবে হে প্রতিপালক! আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে (আহমদ)।

রোজা ঢালস্বরূপ

হাদিস অনুযায়ী রোজা হলো ঢাল ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার মজবুত দুর্গ (আহমদ)। অন্য হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর পথে রোজা পালন করবে আল্লাহ তার থেকে জাহান্নামকে এক খরিফ (সত্তর বছরের) দূরত্বে সরিয়ে দেবেন (বোখারি ও মুসলিম)। এমনিভাবে আল্লাহতায়ালা বহু রোজা পালনকারীকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।

গুনাহ থেকে রক্ষা করে

রোজার মাধ্যমেই আমরা সব ধরনের গুনাহ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। রোজা শুধু আমাদের পানাহার থেকে মুক্ত রাখে না বরং শরীরের অন্যান্য অঙ্গকেও হারাম কাজ থেকে দূরে রাখে। নবিজি (সা.) বলেছেন, হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের সুরক্ষা দেয়। আর যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে না সে যেন রোজা পালন করে। কারণ এটা তার রক্ষাকবচ (বোখারি ও মুসলিম)। রোজা হলো ঢাল। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে রোজা পালন করবে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। যদি তার সঙ্গে কেউ ঝগড়াবিবাদ কিংবা মারামারিতে লিপ্ত হতে চায় তবে তাকে বলে দেবে আমি রোজা পালনকারী (মুসলিম)।

গিবত থেকে বিরত রাখে

গিবত একটি সামাজিক ও আত্মিক ব্যাধি যার মাধ্যমে সমাজ কলুষিত হয় ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। গিবতের ফলে ইমান দুর্বল হয়ে থাকে। রোজার মাধ্যমে আমাদের ইমান বৃদ্ধি করে গিবত থেকে বিরত থাকতে পারি। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘যদি কেউ তার মুসলমান ভাইয়ের গিবত করে তাহলে তার রোজা বাতিল হয়ে যাবে’ (বিহারুল আনওয়ার, ৬৯তম খণ্ড, পৃ. ৩৩১)।

জান্নাত লাভের পথ

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন যার দ্বারা আমি লাভবান হতে পারি। তিনি বললেন : তুমি রোজা পালন করবে। কেননা, এর সমকক্ষ কোনো কাজ নেই (নাসায়ি)। রোজা পালনকারীদের জন্য আল্লাহ জান্নাতে রইয়ান নামক একটি দরজা নির্দিষ্ট করে দেন। যে দরজা দিয়ে রোজা পালনকারীরা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রইয়ান। কেয়ামতের দিন রোজা পালনকারীরাই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজা পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য। যখন তারা প্রবেশ করবে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে তারা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না (বোখারি ও মুসলিম)। রোজা পালনকারীর জন্য দুটি আনন্দ : একটি হলো ইফতারের সময় অন্যটি তার প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় (বোখারি ও মুসলিম)।

লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category