পৌষের শেষদিকে এসে তীব্র শীতে কাঁপছে দেশ। ১৩ জেলায় চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। হাড় কাঁপানো শীতের সঙ্গে বেড়েছে কুয়াশার দাপট। উত্তরের হিমেল বাতাসে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষই এখন শীতে কাবু। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শীতের তীব্রতার মধ্যে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে আসতে পারে বৃষ্টি। এতে শীত আরও তীব্র হবে।
জানতে চাইলে শনিবার আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, ১৮-১৯ জানুয়ারি অর্থাৎ বৃহস্পতি ও শুক্রবার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও জানান, উত্তরাঞ্চলের বেশকিছু জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। আরও দু-এক দিন এই অবস্থা থাকতে পারে। তবে রোববার রাতে দু-এক জায়গায় তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। ১৭ তারিখ রাত থেকে আবার আকাশ মেঘলা হবে। ১৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আরও দু-এক দিন কুয়াশা থাকবে। তারপর কমবে। আস্তে আস্তে তাপমাত্রা বাড়বে।
শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে। এছাড়া নওগাঁর বদলগাছীতে ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি, সৈয়দপুরে ৯ ডিগ্রি, রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি এবং পাবনার ঈশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এ সময়ে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি, আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শনিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলাসহ রংপুর বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ এবং সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এদিকে শীতে বেড়েছে গরম কাপড়ের বিক্রি। ঠান্ডা-কাশিসহ শীতজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
দিনাজপুর ছাড়াও কিশোরগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা এবং কুড়িগ্রামে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। মানুষের আয় রোজগারেও এর প্রভাব পড়ছে। শীতে গবাদিপশু এবং ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। রোববারও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকবে দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি। এছাড়া বদলগাছীতে ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি এবং রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি।
আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির গণমাধ্যমকে বলেন, উত্তর-পশ্চিমের বাতাসের কারণে দেশের কোথাও কোথাও বেশি ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান ৫ ডিগ্রির নিচে থাকলে তীব্র শীত অনুভ‚ত হয়। ইতোমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ কিছু এলাকার দিন ও রাতের তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রির নিচে নেমে এসেছে। এসব এলাকায় ঘন কুয়াশার কারণে যান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে।
সারা দেশ থেকে ব্যুরো ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের পাঠানো শীত-সম্পর্কিত খবর:
দিনাজপুর : পৌষের শেষে এসে দিনাজপুরসহ দেশের উত্তর জনপদে জেঁকে বসেছে শীত। তাপমাত্রার পারদ নেমে এসেছে চলতি শীত মৌসুমের সবচেয়ে নিচে। দিনাজপুরে শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি শীত মৌসুমে এটিই এই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, দিনাজপুরে শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার তা নেমে এসেছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ৩ জানুয়ারি দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১০ জানুয়ারি থেকে জেলায় বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ছে। শুক্রবার থেকে যোগ হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
বিরামপুর (দিনাজপুর) : বিরামপুরে ৩ দিনে সূর্যের দেখা মেলেনি। শনিবার তাপমাত্রা ছিল ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহরিয়ার পারভেজ জানান, গত ৩-৪ দিন ধরে শীত জেঁকে বসায় হাসপাতালে ডায়রিয়া ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগী আসছেন। জটিল রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। আউটডোরে প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন করে সর্দি-কাশি আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে। তাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। তিনি আরও জানান, ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে।
রাজশাহী : মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে রাজশাহী। শনিবার সকালে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে শুক্রবার উত্তরের হিমেল হাওয়ায় রাজশাহীতে তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে হঠাৎ ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যায়। সেদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার ছিল ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি। শনিবার আকাশে মেঘ আর ঘন কুয়াশায় দুপুর গড়িয়ে দেড়টার পর সূর্যের দেখা মেলে।
শনিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শীতজনিত রোগে সকাল থেকে শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। আর মেডিসিন ওয়ার্ডেও বৃদ্ধ ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে শিশু ও বয়স্ক মানুষের বের না হওয়াই ভালো। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ শীতের প্রকোপ বেশি। শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা আরও কিছুদিন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
নীলফামারী : এক সপ্তাহ ধরে শৈত্যপ্রবাহ আর কনকনে ঠান্ডায় কাহিল নীলফামারীর জনজীবন। মেঘলা আকাশ আর কুয়াশার কারণে ৫ দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। ভোররাত থেকে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ছে। হাট-বাজার ও রাস্তা-ঘাটে জনসমাগম কমে গেছে। বিশেষ করে ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর কোল ঘেঁষা গ্রাম ও চরের মানুষজন সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। ঘন কুয়াশার কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হোসেন জানান, শনিবার নীলফামারীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রংপুর : ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়া বয়ে বইছে কয়েকদিন ধরে। জীবনযাত্রা প্রায় স্থবির। দেখা নেই সূর্যের। কষ্টে রয়েছেন শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষরা। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে তুষারের মতো ঝরছে কুয়াশা। দিনের অধিকাংশ সময়ই আকাশ থাকছে মেঘাচ্ছন্ন। অতি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ঘর থেকে বেরোচ্ছে না মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে ছিন্নমূল মানুষের অবস্থা কাহিল। অনেকে খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। গরম কাপড় কিনতে নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষেরা ভিড় করছেন মার্কেটগুলোতে।
নগরীর তামপাট এলাকার নুর ইসলাম ও ইছার আলী বলেন, এবার এত শীত যে দিনের বেলাতেও বাইরে থাকা কষ্টকর হয়ে গেছে। আছরের পরেই ঘরে ফিরতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বেরোনো যাচ্ছে না।
মিঠাপুকুরের লতিবপুর এলাকার মজনু মন্ডল বলেন, দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ঘর মুহূর্তের মধ্যেই ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। দিনের বেলাতেও সূর্য দেখা যাচ্ছে না। মনে হয় সূর্য ছুটি নিয়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ধেয়ে আসা হিমেল বাতাসের কারণে এই অঞ্চলে শীত বেশি অনুভ‚ত হচ্ছে। তাছাড়া কুয়াশার কারণে সূর্যের তাপ ভ‚পৃষ্ঠে না পৌঁছায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। আগামী ৫ দিন এই আবহাওয়া বিরাজ করবে।
তারাগঞ্জ (রংপুর) : রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় ৫ দিন ধরে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। গরিব ও অভাবি মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে নিদারুণ কষ্ট করছেন। শ্রমিক শ্রেণির মানুষ কাজের জন্য ঘরের বাইরে যেতে পারছেন না। অন্যদিকে গেরস্তরাও এ সময় শ্রমিক নিচ্ছেন না। ফলে অনেক দরিদ্র মানুষকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
কাউনিয়া (রংপুর) : তিস্তা নদীর চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষরা তীব্র শীত ও কনকনে ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছেন। গরম কাপড়ের অভাবে কষ্ট করছেন তারা। ৫ দিন ধরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা কাউনিয়া উপজেলার পুরো এলাকা। কনকনে ঠান্ডায় শরীর বরফ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন মানুষ। গরু, ছাগল, মহিষের গায়ে চটের বস্তা ঝুলিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষকরা। ঠান্ডায় হাঁস, মুরগির মড়ক দেখা দিয়েছে। দরিদ্র মানুষরা শীতবস্ত্রের জন্য আকুতি জানিয়েছেন।
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) : ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা এই উপজেলায় ৫ দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। সারা দেশের ন্যায় রৌমারী-রাজিবপুরে শীতের তীব্রতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। একদিকে ব্রহ্মপুত্র উপক‚লীয় চরাঞ্চল, অপরদিকে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় এখানে শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। এবার সরকারিভাবে শীতবস্ত্র বরাদ্দ অপ্রতুল। রৌমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ পর্যন্ত ৩৪০টি কম্বল পেয়েছি। এটা দিয়ে কিছুই হয়নি। আমি জেলা প্রশাসকের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি আমাদের জনগণের জন্য বেশি করে কম্বল দেওয়া হোক। রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, এ বছর যেসব কম্বল এসেছিল তা ইউপি চেয়ারম্যানদের দেওয়া হয়েছে। তবে শীত বেড়ে যাওয়ায় আরও কম্বলের চাহিদা দেওয়া হয়েছে।
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) : ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় পৌষের শেষে ঠান্ডার প্রকোপ বেড়ে নাকাল অবস্থা জনজীবনে। ৫ দিন ধরে দেখা মেলেনি সূর্যের। বৃষ্টির মতো করে দিনে ও রাতে পড়ছে কুয়াশা। সন্ধ্যার পর রাত যত গভীর হয় শীতের তীব্রতা ততই বাড়ে। শনিবার সকাল ৭টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখির অবস্থাও কাহিল। উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত জানান, এ পর্যন্ত সরকারিভাবে ৩১১০টি কম্বল শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। চাহিদা চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
শেরপুর : শীতের দাপট কমছে না। হিমেল হাওয়া ও কুয়াশার কারণে বইছে কনকনে ঠান্ডা। শীতের দাপটে জেলার জনজীবনে ছন্দপতন ঘটেছে। শীত উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে বের হচ্ছেন শ্রমজীবীরা। শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন করে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন। আরও অনেক রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে।
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) : যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চল চুকইবাড়ী, চিকাজানী, বাহাদুরাবাদ, হাতীভাঙ্গা, চর আমখাওয়া ইউনিয়ন ও ভারতের মেঘালয়সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকা ডাংধরা ও পাররামরামপুর ইউনিয়নের মানুষ শীতে কাবু হয়ে পড়েছে। যমুনা নদীতে চলাচলকারী নৌযাত্রীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। প্রচণ্ড ঠান্ডায় সবজি খেত ও বীজতলা নষ্টের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
যশোর : শনিবার যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবারও ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বৃহস্পতিবার ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি। সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি এলাকার মুদি দোকানদার রমজান আলী বলেন, দোকানের ভেতরেও যেন ঠান্ডায় থাকা দায়। বাইরেও হাড়কাঁপানো শীত। তাই কয়েকজন মিলে আগুন জ্বালিয়ে শীত তাড়ানোর চেষ্টা করছি। সদর উপজেলার সুজলপুর এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, ইরি ধান রোপণের জন্য জমি প্রস্তুতের কাজ চলছে। শীতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তারপরও করে কাজ করছি। এদিকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শিশুর প্রতি মায়েদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। গায়ে গরম কাপড় ছাড়াও হাত-পায়ে মোজা পরাতে হবে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা অন্য যে কোনো ওষুধ সেবন না করার আহবান জানিয়েছেন তারা।
দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) : মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পাশাপাশি কুয়াশার কারণে ২০-৩০ গজ দূরের কোনোকিছু দেখা যায় না। একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা ৩-৪ ডিগ্রি হ্রাস পেয়েছে। শনিবার সকাল ৯টায় জেলায় তাপমাত্রা রের্কড করা হয়েছে ৯ দশমকি ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশার কারণে সব যানবাহনকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
বরিশাল : বরিশালে এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। শনিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৭। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এমন অবস্থা আরও দুদিন চলতে পারে। বরিশালের গৌরনদীতে ৪৫০টি পরিবারের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। বরিশাল-১ আসনের সংসদ-সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর পক্ষে শনিবার সকালে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন কাউন্সিলর মো. আল-আমিন হাওলাদার। আরও শীতবস্ত্রের দাবি জানিয়েছেন শীতার্তরা।
পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) : ৪ দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। প্রতি বছরের মতো এবারও শীতের দাপটে কাবু এই অঞ্চলের মানুষ। দিন ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে বেশ পার্থক্য দেখা দেওয়ায় ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। ফসল রক্ষায় বীজতলা ভালোভাবে ঢেকে রেখে পরিচর্যার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পাকুন্দিয়া চর এলাকায় আলুচাষিরা বলছেন, শীত ও কুয়াশা বাড়ার ফলে আলু, কফি, টমেটো ও বোরো ধানের বীজতলার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।