রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় শিশুকে অপহরণের পর ধর্ষণ ও পতিতালয়ে বিক্রির দায়ে দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় একই মামলায় একজনকে আট বছরের আটকাদেশ দেওয়া হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কিশোরগঞ্জের ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ইয়াছমিন, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লালচাঁদপুর গ্রামের জব্বার শেখের ছেলে আব্দুল ওহিদ ও বদরগঞ্জ উপজেলার চান্দেরডাঙ্গা গ্রামের এন্তাজুল হকের মেয়ে তারামনি।
এ ঘটনায় সম্পৃক্ততা না থাকায় অপর আসামি মানিক মিয়াকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় আদালতে ইয়াছমিন, তারামনি ও মানিক মিয়া উপস্থিত ছিলেন। আসামি আব্দুল ওহিদ পলাতক রয়েছে।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর সকালে স্কুলে যাওয়ার কথা বলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ভুক্তভোগী ছাত্রী বাড়ি থেকে বের হয়। পরে স্কুল ছুটির পর বাড়িতে না ফিরলে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এর মধ্যে স্থানীয় ভ্যানচালক আল-আমিনের মাধ্যমে জানতে পারেন প্রতিবেশী এন্তাজুলের মেয়ে তারামনির সঙ্গে তার মেয়ে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার আউলিয়াগঞ্জ গেছে। বিষয়টি জানালে পুলিশ ওই ছাত্রীকে উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করে তাকে উদ্ধার করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন বদরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কমল মোহন চাকি ২০১৬ সালের ১০ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
দীর্ঘ আট বছর ধরে ওই মামলায় ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক আসামি ইয়াসমিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন। এছাড়াও ধর্ষণের ঘটনায় আব্দুল ওহিদকে দুটি ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি সহযোগী শিশু তারামনিকে ৮ বছরের আটকাদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ এর সরকারি কৌঁসুলি জাহাঙ্গীর হোসেন তুহিন অ্যাডভোকেট। তিনি বলেন, ওই ছাত্রীর বান্ধবী তারামনি ফুঁসলিয়ে তাকে ওহিদের কাছে তুলে দেয়। ওহিদ ওই ছাত্রীকে ঢাকায় নিয়ে একটি আবাসিক হোটেলে ধর্ষণ করেন। পরে তিনি ইয়াসমিনের কাছে বিক্রি করে দেন। ইয়াসমিন ওই ছাত্রীকে কিশোরগঞ্জ ভৈরব এলাকার একটি পতিতালয়ে থাকতে বাধ্য করেন।
এর কিছুদিন পর ইয়াসমিন ওই ছাত্রীকে অন্য জায়গায় বিক্রির চেষ্টা করলে কৌশলে ওই ছাত্রী পালিয়ে যায়। বাসযাত্রী এক নারীকে ওই ছাত্রী পুরো ঘটনাটি খুলে বলে। পরে ওই নারী বিষয়টি থানায় জানালে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
তিনি আরও বলেন, এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত একজন শিশু হওয়ায় তাকে ৮ বছরের আটকাদেশ দিয়ে সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ওই শিশুটি প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হবে।