সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই জান্তার ভয়াল থাবায় একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছেন মিয়ানমারের অসহায় সাধারণ মানুষ। দিন দিন বেড়েই চলেছে সেনাদের নির্মম অত্যাচার। মর্টার শেল, ক্রসফায়ার, গুলিবর্ষণ, ল্যান্ডমাইন ও বিমান হামলা দেশটিতে নিত্যদিনের ঘটনা। জান্তার বর্বরতার শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ মানুষ। ধ্বংস হচ্ছে বাড়িঘর, ক্লিনিকসহ বেসামরিক নানা অবকাঠামো।
রোববার স্থানীয় গণমাধ্যম ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে জান্তা সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৪০০০ বেসামরিক নাগরিক। ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের পরিসংখ্যান। বেসামরিক মৃত্যুগুলোর ৬৭ শতাংশ রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
দেশটির চার অঞ্চল সাগাইং, ম্যাগওয়ে, মান্দালে এবং ইয়াঙ্গুনে অভ্যুত্থানের পর প্রথম ছয় মাসে জান্তাদের দমনপীড়নে সর্বাধিক সংখ্যক বেসামরিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) করা জরিপে বেসামরিকদের হতাহতের এ ঘটনা উঠে আসে।
এএপিপি অনুমানে, জান্তাদের হামলা জোরদার করায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ আগস্টের মধ্যে কমপক্ষে ১০৮০ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। তাদের নৃশংসতার শিকার হয়ে প্রতি মাসে গড়ে ১৩০ জন বেসামরিক লোক নিহত হন। ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৩০০০ বেসামরিক লোক হত্যা করা হয়েছে। দেশটির সাগাইং অঞ্চলের শক্ত ঘাঁটিতে সর্বাধিক সংখ্যক বেসামরিকের হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। শুধুমাত্র সাগাইং অঞ্চলেই প্রায় ১৮০০ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছিলেন (মোট বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যার ৪৫ শতাংশ)।
হত্যাকাণ্ড নয় জান্তা বাহিনী এই অঞ্চলে কয়েক হাজার বাড়িঘরও পুড়িয়ে দিয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৬০০ জনেরও বেশি নারীকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১৮টি ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। এ বছরের এপ্রিলে সর্বোচ্চ সংখ্যক (২৭০ জন) হত্যাকাণ্ড রেকর্ড করা হয়। মিয়ানমার ইনস্টিটিউট অফ পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির পরিচালক ডক্টর মিন জাও উ বলেন, ‘মিয়ানমারের বেসামরিক লোকেরা সহিংসতা বৃদ্ধির জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। গৃহযুদ্ধ পরবর্তী পর্যায়ে বাড়লে বড় আকারের প্রতিশোধমূলক হত্যাসহ রাজনৈতিক হত্যার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রতিবেদনটি জাতিসংঘ এবং আসিয়ানের মতো বিশ্ব সংস্থাগুলোর জন্য বিপদের ঘণ্টা।’