• রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৭ অপরাহ্ন

‘উচ্চ ঝুঁকির’ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের দুঃসংবাদ দিল যুক্তরাজ্য

Reporter Name / ১৪ Time View
Update : শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

যুক্তরাজ্যের কঠোর নতুন ভিসা নীতির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তিতে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে শিক্ষার্থী গ্রহণে দেশটির বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন বাতিল ও স্থগিত করছে। ভিসার অপব্যবহার ও শিক্ষার্থীভিত্তিক অভিবাসন জটিলতা বাড়ায় এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের অন্তত ৯টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘উচ্চ ঝুঁকির’ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থী ভর্তিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদন নাকচ ও আশ্রয় প্রার্থনার সংখ্যা বাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও কঠোরভাবে শিক্ষার্থী যাচাই–বাছাই করতে বলা হয়েছে। দেশটির সীমান্ত নিরাপত্তামন্ত্রী ডেম অ্যাঞ্জেলা ইগল সতর্ক করেছেন যে, ব্রিটেনে স্থায়ী হওয়ার জন্য ভিসাব্যবস্থাকে ‘পেছনের দরজা’ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে বিধিনিষেধ দিয়েছে

  • ইউনিভার্সিটি অব চেস্টার: ২০২৫ সালের শরৎকাল পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে সব ধরনের ভর্তি স্থগিত।
  • ইউনিভার্সিটি অব উলভারহ্যাম্পটন: বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে স্নাতক শিক্ষার্থী গ্রহণ করছে না।
  • ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট লন্ডন: পাকিস্তান থেকে ভর্তি স্থগিত।
  • লন্ডন মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ।
  • সান্ডারল্যান্ড ও কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আবেদন গ্রহণ স্থগিত।
  • হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়: ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উভয় দেশের শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ।
  • অক্সফোর্ড ব্রুকস, বিপিপিসহ আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীরা সিএএস লেটার পাচ্ছেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দাবি, হোম অফিসের নতুন নীতি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভিসার ক্ষেত্রে ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার ৫ শতাংশের বেশি হলেই স্পনসর লাইসেন্স ঝুঁকিতে পড়ে। আগে এ সীমা ছিল ১০ শতাংশ। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সতর্ক হয়ে উঠেছে।

ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার উদ্বেগজনক

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী ভিসা ২২ শতাংশ ও পাকিস্তান থেকে ১৮ শতাংশ আবেদন নাকচ হয়েছে—যা নতুন সীমার চেয়ে অনেক বেশি। একই সময়ে হোম অফিস যে ২৩ হাজার ৩৬টি আবেদন নাকচ করেছে, তার অর্ধেকই এই দুই দেশের শিক্ষার্থীদের।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিকদের আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনও বেড়েছে—যাদের বড় একটি অংশ শিক্ষার্থী বা কর্ম ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন।

পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়াশোনায় সহায়তাদাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাডভান্স অ্যাডভাইজর্স-এর প্রতিষ্ঠাতা মরিয়ম আব্বাস বলেন, ‘প্রকৃত শিক্ষার্থীরা শেষ ধাপে এসে আটকে যাচ্ছে—এটি সত্যিই হৃদয়বিদারক।’

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল অ্যাডমিশনস-এর জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অনেকেই কোর্স শেষ না করে আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন কিংবা ভিসা ক্যাটাগরি পরিবর্তন করেন। এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঝুঁকি নিতে চাইছে না।’

তিনি পরামর্শ দেন, শিক্ষার্থীদের উচিত যুক্তরাজ্যের শিক্ষার্থী ভিসাকে ‘ট্রানজিট রুট’ হিসেবে ব্যবহার না করে নিয়ম মেনে পড়াশোনা করা।

যুক্তরাজ্যের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের হাজারো শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category