• বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৭ অপরাহ্ন

গাজায় যুদ্ধ থামাতে এক সুরে বিশ্বনেতারা

Reporter Name / ২৩ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের প্রথম দিনেই গাজায় ইসরাইলি হামলা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে। একের পর এক বিশ্বনেতা গাজার ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি, ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং যুদ্ধ অবসানের জোরালো আহ্বান জানান।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, তার মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বকালীন সময়ে এত ব্যাপক মৃত্যু ও ধ্বংস আর কোনো সংঘাতে ঘটেনি। তিনি সতর্ক করে বলেন, গাজায় স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রায়, যা এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি যুদ্ধবিরতির দাবি তুলে বলেন, “গাজায় যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।” একই সঙ্গে তিনি শর্ত রাখেন, যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় আটক সব বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে।

জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর বক্তব্য ছিল আরও কঠোর। তিনি বলেন, গাজার পরিস্থিতি আসলে একটি অসহায় জনগোষ্ঠীর ওপর তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অবৈধ দখল। তার মতে, দখলদারিত্ব ও আগ্রাসনকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আর সহ্য করতে পারে না।

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি অভিযোগ করেন, ইসরাইলের প্রকৃত লক্ষ্য হলো গাজাকে ধ্বংস করা। তিনি বলেন, মানুষের বাসস্থান, জীবিকা, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা হচ্ছে—অর্থাৎ মানুষের বেঁচে থাকার মূলভিত্তিই ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো আরও এক ধাপ এগিয়ে প্রস্তাব দেন, গণহত্যাকে যারা মেনে নেবে না—এমন দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। সেই বাহিনী শান্তিরক্ষী মিশনের মতো কাজ করে অঞ্চলটিতে নিরাপত্তা ও মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

প্রথম দিনের অধিবেশনে আরও কিছু বিশ্বনেতা গাজার পরিস্থিতি নিয়ে মত দেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, কূটনৈতিক সমাধানের পথ এখনো খোলা আছে। তিনি মানবিক সহায়তা প্রবাহের ওপর জোর দেন। স্পেনের রাজা ফেলিপে ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সাইরিল রামাফোসাও গাজার সহিংসতাকে নৃশংসতা হিসেবে আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে সহায়তা ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান।

ফিনিশ প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব বলেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই ১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে চলমান দখলদারিত্ব শেষ করতে হবে। প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব জাতিসংঘ সনদে বর্ণিত সার্বভৌমত্ব, মানবাধিকার ও মৌলিক নীতিগুলো রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “রাশিয়ার ইউক্রেনে আগ্রাসনের কোনো অধিকার নেই। একইভাবে ইসরায়েলেরও ফিলিস্তিনে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অধিকার নেই। কোনো রাষ্ট্রেরই অর্থনৈতিক বা কৌশলগত স্বার্থে সুদান কিংবা কঙ্গোর ভূখণ্ডে প্রক্সি যুদ্ধ চালানোর অধিকার নেই।”

গাজায় চলমান যুদ্ধ প্রসঙ্গে সম্প্রতি জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন সতর্ক করেছে যে, পরিস্থিতি গণহত্যার আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। এই প্রেক্ষাপটেই বিশ্বনেতাদের বক্তব্য আরও তীব্র ও আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে।

বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণ পরিষদের এই অধিবেশন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে গাজায় যুদ্ধ ইস্যু আন্তর্জাতিক কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। তবে যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা ও বন্দি বিনিময় নিয়ে বিশ্বনেতারা নানা প্রস্তাব দিলেও সমাধানের বাস্তব পথ খুঁজে পাওয়া এখনো কঠিন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category