• শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৬ অপরাহ্ন

তিন নেতার লড়াই চট্টগ্রাম-৯ ভিআইপি আসনে মনোনয়ন পেতে

Reporter Name / ২৯ Time View
Update : সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসন ভিআইপি আসন হিসাবে পরিচিত। কারণ এ আসন থেকে যে দলের প্রার্থী ভোটে জয়ী হন, সেই দলই সরকার গঠন করে। আবার যিনি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন তিনিও মন্ত্রিসভায় স্থান পান। ১৯৯১ সাল পরবর্তী সবকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। তাই এ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা ও পারিপার্শ্বিক বিষয় বিবেচনায় নেয় দলগুলো। এ আসনে শুরুর দিকে বিএনপির ছয় থেকে সাতজন মনোনয়ন দাবি করলেও বর্তমানে তা তিনজনে এসে ঠেকেছে। তারা হলেন-কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শামসুল আলম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে বিএনপির তিন নেতা রীতিমতো গণসংযোগ ও শোডাউনের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। ৩ নভেম্বর থেকে প্রতিদিন তারা এলাকায় নানা কর্মসূচি নিয়ে হাজির হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাদের অনুসারীরা নানভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণের মধ্য দিয়ে যে কোনো মূল্যে দলের টিকিট ছিনিয়ে আনাই তাদের লক্ষ্য।

৩ নভেম্বর কোতোয়ালি আসনে সাবেক নগর বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ানের নাম ঘোষণার পরপরই স্থগিত করা হয়। আর এ কারণে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলের টিকিটের আশায় নতুন করে মাঠে নামেন। শামসুল আলম ও আবুল হাশেম বক্কর আগে থেকে মাঠে থাকলেও সুফিয়ান নামেন ৩ নভেম্বরের পর।

রোববার ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন শামসুল আলম। চট্টগ্রামের বনেদী শিল্প গ্রুপ ইলিয়াছ ব্রাদার্সের চেয়ারম্যান শামসুল ২০০৮ সালে কোতোয়ালি আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন লাভ করে নির্বাচনে অংশ নেন। যেন সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এরপর থেকে সরকারের সব সংস্থা তার ওপর হামলে পড়ে। একের পর এক হয়রানির কারণে তার ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠে। এক সময়ের সর্বোচ্চ করদাতা সর্বোচ্চ ঋণখেলাপিতে পরিণত হন। পরবর্তীতে সব দায়দেনা তিনি শোধ করেছেন।

শামসুল আলম বলেন, ২০০৮ সাল থেকে এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে আছি। আর এক বছর আগে থেকে গণসংযোগ করছি। আমার দেখাদেখি অন্যরা গণসংযোগ করছেন। ১৬ বছরে ২২টি মামলার আসামি হয়েছি। জেলও খেটেছি। তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ বহিরাগতদের এনে গণসংযোগের নামে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। তবে কেন্দ্র সবকিছু বিবেচনা করে যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেবে।’

রোববার আবুল হাশেম বক্কর বলেন, দলের সবচেয়ে দুঃসময়ে আমি নগর বিএনপির হাল ধরেছি। কোতোয়ালি থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। যখন পুলিশ কাউকে দাঁড়াতে দিত না তখন ডা. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে আমি সব সময় রাজপথে পুলিশের সঙ্গে লড়াই করেছি। ১৬ বছরে ৮৬ মামলার আসামি হয়েছি। সাতবার জেলে গেছি। দলীয় কর্মীদের জন্য যা যা করা দরকার সবকিছুই করেছি। দল যদি আমাকে বিবেচনা করে অবশ্যই আমি এর সদ্ব্যবহার করব। ভোটাররাও আমাকে মূল্যায়ন করবে।

এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু সুফিয়ান বলেন, আমি নগর ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম। নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম। কোতোয়ালি আসনে সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান দুবার নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। তার নির্বাচনে আমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। রোববার তিনি রাহাত্তারপুল থেকে এক্সেস রোড পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার এলাকায় গণসংযোগ করেন।

১৯৯১ সালে আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান। বিএনপি সরকার গঠন করায় তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সালে আবদুল্লাহ আল নোমানকে হারিয়ে নগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি এমএ মান্নান জয়ী হন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি শ্রমমন্ত্রী হন। ২০০১ সালে মান্নানকে পরাজিত করেন নোমান। বিএনপি সরকার গঠন করলে নোমান আবারও মন্ত্রিসভায় স্থান পান। ২০০৮ সালে বিএনপির শামসুল আলমকে পরাজিত করেন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর দায়িত্ব পান নুরুল ইসলাম। এরপর আরও তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলেও এগুলো ছিল ‘বিতর্কিত।’ ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ২০২৪ সালেও নওফেল মনোনয়ন পান। দুই মেয়াদের প্রথম মেয়াদে শিক্ষা উপ-মন্ত্রী, দ্বিতীয় মেয়াদে শিক্ষামন্ত্রীর পদ লাভ করেন নওফেল।

জানা গেছে, কোতোয়ালি আসনে নির্বাচনে প্রার্থীর জয়ের বড় নিয়ামক হচ্ছে বাকলিয়ার ভোট। এ এলাকার ভোট যে প্রার্থীর বাক্সে যায়, সেই প্রার্থী জয়লাভ করেন। ভোটের লড়াইয়ে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী হিসাবে কাজ করছেন ডা. একেএম ফজলুল হক।

সূত্র: যুগান্তর


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category