• বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন

৫ গোল, লাল কার্ডের মহাকাব্যিক লড়াইয়ে রিয়ালকে হারিয়ে কোপা দেল রে বার্সার

Reporter Name / ৬০ Time View
Update : রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

ম্যাচটা আগে থেকেই ছিল আগ্রহের কেন্দ্রে। কেনই বা থাকবে না? কোপা দেল রের ফাইনালে এল ক্লাসিকো বলে কথা, ১১ বছর পর দেখা মিলছে এমন কিছুর। সেই ম্যাচটা আলোচনায় চলে এল আরও বেশি, সেটা রিয়াল মাদ্রিদের কল্যাণে। রেফারি নিয়ে যা হলো ম্যাচের আগে! এরপর ম্যাচটাও হলো ব্লকবাস্টার। সেখানে ৩-২ গোলে জিতল বার্সেলোনা। ট্রেবল স্বপ্নটাও তাই টিকে রইল তাদের।

এই পটভূমি বাদ দিয়ে দেখলেও সেভিয়ার এস্তাদিও দে লা কারতুহায় কিছুক্ষণ আগে শেষ হওয়া ম্যাচটা হয়েছে এক নিখাদ থ্রিলারই। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চ থামেনি এক মুহূর্তের জন্যও। শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত সময়ে জুল কুন্দের গোলেই ৩-২ ব্যবধানে জয় পায় বার্সেলোনা।

খেলা শুরু থেকেই উত্তপ্ত ছিল। বলের দখল বার্সেলোনার ছিল। ম্যাচের প্রথম ৫৬ সেকেন্ডে রিয়াল মাদ্রিদ একবারও বল ছুঁতে পারেনি। তারপর যখন তারা বল পায়, তখনও দ্রুত হারিয়ে ফেলে। তখনই বোঝা যাচ্ছিল, বার্সেলোনা আজ কিছু আলাদা করতে এসেছে।

প্রথমার্ধে দারুণ একটি গোলে এগিয়ে দেন পেদ্রি। বাইলাইনের কাছ থেকে লামিন ইয়ামালের মাইনাস করা বলটা দারুণ এক শটে জড়ান রিয়ালের জালে। রিয়াল মাদ্রিদ প্রথমার্ধে দু’বার সমতা ফেরাতে পারতো, কিন্তু দুইবারই অফসাইডের কারণে গোল বাতিল হয়। বার্সা তখনও পুরোপুরি খেলার নিয়ন্ত্রণে ছিল। ওই গোলের আগেও দুটো শট একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। প্রথমার্ধটা তাই ১ গোলের ব্যবধান নিয়েই মাঠ ছাড়ে বার্সা।

তবে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামেন এমবাপ্পে ও আর্দা গুলের। তাদের সঙ্গে লুকা মদ্রিচও। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় ম্যাচের রঙও। একের পর এক আক্রমণ করেই যাচ্ছিল মাদ্রিদ। শেষমেশ ত্রাতা হয়ে আসেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তার ক্যারিয়ারেরই প্রথম ফ্রি-কিক গোল রিয়ালকে ফেরায় সমতায়। তারপর রোনালদোর ঐতিহাসিক ‘কাল্মা’ উদযাপন অনুকরণে তার উল্লাস তাতে যোগ করে বাড়তি মাত্রা।

এরপর রিয়াল এগিয়েও গিয়েছিল। চুয়ামেনি হেডে গোল করে মাদ্রিদকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন। তখন মনে হচ্ছিল ম্যাচটা মাদ্রিদই জিতবে। কিন্তু ছয় মিনিট বাকি থাকতে ফেরান তরেস লামিন ইয়ামালের দুর্দান্ত পাস থেকে কুর্তোয়াকে কাটিয়ে গোল করেন। ২-২ সমতায় ফেরে ম্যাচটা।

এরপর আসে সবচেয়ে বড় নাটক। শেষ মুহূর্তে রাফিনহা ডান দিক থেকে ঢুকে পড়লে রিয়ালের ডিফেন্ডার রাউল আসেনসিও ফাউল করেন। ম্যাচের আগে থেকে আলোচনাত থাকা রেফারি দে বুরগোস বেনগেচেয়া সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান। বার্সেলোনা সমর্থকরা তখন উদযাপন শুরু করে। কিন্তু ভিএআরে ডাক পড়ে। ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টানো হয়। পেনাল্টি বাতিল হয়। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়ে দুই দলই হাল ছাড়েনি। ফেরান তরেসের গোল মিস করেন, বেলিংহামেরও সুযোগ নষ্ট করা, অফসাইডের কারণে রিয়ালের পেনাল্টি না পাওয়া… সব মিলিয়ে যোগ করা অতিরিক্ত সময়ও রোমাঞ্চ নিয়ে হাজির হয়েছিল। ডেডলক ভাঙছিল না বলে পেনাল্টি শ্যুটআউটকেই মনে হচ্ছিল নিয়তি। ঠিক তখনই জুলস কুন্দে এলেন দৃশ্যপটে। লুকা মদ্রিচের ভুল পাস ধরে বক্সের বাইরে থেকে তার আগুনে শট গিয়ে আছড়ে পড়ে জালে।

মাদ্রিদ এরপর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেনি। ক্লান্ত রিয়াল খেলোয়াড়রা মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ে। তার আগে ম্যাচেও হয়ে গেছে একগাদা কাণ্ড। রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচের রেফারিং সিদ্ধান্ত নিয়ে দারুণ ক্ষুব্ধ ছিল। রেফারির সিদ্ধান্তের পর তার দিকে বোতল ছুঁড়ে মেরে রুডিগার লাল কার্ড দেখেন, এরপর বিবাদে জড়িয়ে লুকাস ভাসকেজও দেখেন লাল কার্ড। যার ফলে নিয়মানুযায়ী লা লিগাতেও নিদেনপক্ষে ২ ম্যাচে খেলতে পারার কথা নয় তাদের, যা হলে আসছে লিগ এল ক্লাসিকোর জন্যও রিয়ালের বড় ধাক্কা হয়ে আসতে পারে বিষয়টা।

বার্সেলোনার জন্য এটা ছিল বড় এক জয়। কারণ তারা এখনো তিনটি বড় শিরোপার দৌড়ে টিকে আছে। যার দ্বিতীয় ধাপটাও বার্সা পেরিয়ে যেতে পারে লা লিগায় আর দুই ম্যাচ পরেই, আরও এক এল ক্লাসিকোয়। তবে সেসব অনেক দূরের ব্যাপার। তার আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ‘ইন্টার পরীক্ষা’ অপেক্ষা করছে কাতালানদের জন্য। কোচ হানসি ফ্লিক আর তার শিষ্যরা সেখানেই মনোযোগটা রাখতে চাইবেন নিশ্চয়ই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category