ঐতিহ্যগতভাবেই বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে খেজুর গাছ এবং এর রস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। খেজুরের রসের গুড়ের জনপ্রিয়তা সবসময় থাকে তুঙ্গে। এই গাছের রস দিয়ে বানানো পিঠা-পায়েসের জুড়ি মেলাও ভার।
একসময় প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছিল সারি সারি খেজুর গাছ। শীতের সকালে গাছিরা খেজুর গাছ থেকে সুমিষ্ট রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করতেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ খেজুরের রস পান করে তৃপ্তি পেতেন। তবে এখন সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না।
খেজুর রসের সেই আগের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছেন একদল যুবক। যারা ‘রস বাগিচা’ ব্যানারে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ খেজুরের রসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে কাজ করছেন। এবারের শীতে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের কবিলের মোড় এলাকায় তারা ৪৬ টি খেজুর গাছ নিয়ে কাজ করছেন। ক্রমান্বয়ে তারা গাছের সংখ্যা বাড়াবেন বলে জানিয়েছেন।
‘রস বাগিচা’ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইতোমধ্যে খেজুর গাছগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে শুরু করবেন তারা। শীত বাড়লে খেজুরের রসের পরিমাণও বাড়বে। প্রতিদিন রস বাগিচা থেকে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ লিটার খেজুরের রস সংগ্রহ কারার লক্ষ্য তাদের।
রস বাগিচার গাছি সেলিম মিয়া বলেন, “আমাদের এখানে ৪৬ টি খেজুর গাছ রয়েছে। আশা করছি প্রতিদিন এখান থেকে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ লিটার খেজুরের রস সংগ্রহ করতে পারবো। যা নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশ এলাকায় সরবরাহ করবো। কেউ যদি ইচ্ছা করেন, তাহলে আমাদের বাগানে এসেও রস খেতে কিংবা সংগ্রহ করতে পারবেন।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের বাগানের রস যথেষ্ট নিরাপদে সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হবে। আমরা জাল ব্যবহার করবো। হাড়ি ব্যবহার করবো। যাতে বাদুড় রস নষ্ট করতে না পারে। রসের মান বজায় রাখার চেষ্টা করা হবে।”
রস বাগিচার অ্যাডমিন মোস্তাফিজুর রহমান সাদরিল বলেন, “গত বছর শীতের মৌসুমে এই বাগান থেকে রস সংগ্রহ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে। এবার আমরা আশা করছি প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ লিটারের মতো রস পাবো। কমবেশি হতে পারে। যদি আশানুযায়ী রস সংগ্রহ করতে পারি তাহলে লাভবান হতে পারবো। আমরা বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে খেজুর রসের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি।”
রস বাগিচার প্রধান অ্যাডমিন জোবায়ের হোসেন নুর বলেন, “দেশের বিভিন্ন জেলায় খেজুরের গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তবে নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশ এলাকায় এখন খেজুরের গাছ বিলুপ্তির পথে। তারপরেও আমরা এখানে অনেকগুলো খেজুর গাছ পেয়েছি। যা আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। আমরা চাচ্ছি, গাছগুলো পরিচর্চা করে খেজুরের রস সংগ্রহ করতে।”
সোনারগাঁ উপজেলার শেখ ফরিদ বলেন, “আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে দিনে দিনে বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। এখানে ছয় যুবক যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমি এখান থেকে এর আগেও রস কিনে নিয়েছি। তাদের বাগানের রস ভালো।”
নারায়ণগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ শাহ আলম বলেন, “নারায়ণগঞ্জে একসময় প্রচুর খেজুর গাছ লক্ষ্য করা গেলেও শিল্পায়ন ও আবাসনসহ বিভিন্ন কারণে বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। পতিত জায়গায় ও রাস্তার পাশে খেজুর গাছ রোপণে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যারা খেজুরের রস নিয়ে কাজ করছেন তাদেরকে আমরা উৎসাহিত করছি। নতুন প্রজন্মের এমন উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।”