• বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন

নিউমার্কেট থানার চাঁদায় নিঃস্ব হকার

Reporter Name / ৯৩ Time View
Update : বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫

ওসি মোহসীনের একচ্ছত্র আধিপত্য।

—————————————————-

:নিজস্ব প্রতিনিধি:

কেনাকাটার জন্য রাজধানীবাসীর অন্যতম পছন্দের এলাকা নিউমার্কেট ও গাউছিয়া। সব শ্রেণির মানুষ সারা বছরই ভিড় করেন এ এলাকার দোকানগুলোয়। এ ছাড়া ফুটপাতেও চলে সমানতালে বেচাকেনা। রয়েছে ভাসমান হকারও। অস্থায়ীভাবে বসা এসব হকার ও দোকানিকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয় নিউমার্কেট থানা পুলিশকে। একদিন চাঁদা না দিলেই তাদের শরীরে হাত তোলা হয়। করা হয় উচ্ছেদ।ফলে প্রতিনিয়ত চাঁদা গুণতে গিয়ে এক প্রকার নিঃস্ব হতে হয় হকারদের। বর্তমানে কোন রাজনৈতিক চাঁদাবাজ তেমন দেখা না গেলেও এই চাঁদার টাকা পুরোটাই নিউমার্কেট থানার অফিসার ইনচার্জ মোহ্সীন উদ্দীনকেই দিতে হয়। ওসি মোহ্সীন উদ্দীন তোয়াক্কা করেন না তার উর্ধতন এসি কিংবা ডিসিকেও। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এর আর্শীবাদ পুষ্ঠ হওয়ায় তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না।

জানা যায়, ওসি মোহসীনের সাথে রাজধানীর অন্যতম বড় বইয়ের মার্কেট, নীলক্ষেতের জাল সার্টিফিকেট ও আইডি কার্ড বানানো চক্রের সঙ্গেও রয়েছে নিয়মিত লেনদেন। এছাড়া টানা পার্টিসহ মার্কেট এলাকার বড় ব্যবসায়ীদের অবৈধ মালামাল আটকানোর ভয় দেখিয়ে মাসিক মোটা অঙ্কের টাকা নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সরজমিনে নিউমার্কেট ও গাউছিয়ার বেশ কয়েকজন হকার ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। নিউমার্কেট-১ নম্বর গেট সংলগ্ন ফুটপাতের এক সরবতের দোকানি বলেন, জলে থাইকা কুমিরের সঙ্গে লড়াই করতে নেই। তবুও বলি প্রতিদিন রাত ৮টার পরে সিভিল পোশাকে থানা পুলিশের লোক আসে। তারা দোকান বুঝে ১০০ অথবা ২০০ টাকা নেয়। সারাদিন বেচাকেনা করে যা লাভ হয় তার একটা অংশ চলে যায় থানা পুলিশের পেটে। ফলে আমরা গরিব হকাররা দিন দিন নিঃস্ব হচ্ছি। একাধিক সূত্র জানায়, বিষয়টি যাতে জানাজানি না হয় তাই নিউমার্কেট থানার ওসি’র নির্দেশে থানার স্টাফ এক-এক সময় একেক জনের নেতৃত্বে চাঁদা উঠাতো আসে। টাকা উঠানোর জন্য পুলিশের রয়েছে বেশ কয়েকজন লাইনম্যানও। এ ছাড়াও থানার ৪টি গাড়ির ২টিই এই এলাকায় টহলে থাকে। রাতে যখন যিনি ডিউটিতে আসেন, তিনিই চাঁদা উঠাতে ব্যস্ত থাকেন।


সম্প্রতি ওসি মোহসীনের বিরুদ্ধে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ী ও চালক/ হেলপারকে আটক রেখে চাঁদা দাবী করার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ঐ কুরিয়ার সার্ভিস এর এক কর্মকর্তা জানান-
আমার নাম সজীব সাহা, পাঠাও লিমিটেড এর আইন বিভাগে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে আমি কর্মরত আছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান সারা বাংলাদেশে ডেলিভারি সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। বিগত ২৩ এপ্রিল’২৫ রাত দুইটার দিকে আমাদের কুরিয়ার সার্ভিসের মালামাল পরিবহনকৃত একটি কাভার্ডা ভ্যান আমাদের হাজারীবাগ অফিস থেকে পার্সেল নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হলে পথিমধ্যে নিউমার্কেটে এলাকায় উল্টো পথে আসা নিউমার্কেট থানার ওসি স্যারের গাড়ি আমাদের কাভার্ড ভ্যানটি থামান এবং গাড়ীটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল এই অভিযোগ করে কোন কথা বলার আগেই গাড়ীর ড্রাইভার এবং হেলপারকে নিজেই তার গাড়ী থেকে নেমে প্রচন্ড মারধর করেন এবং ড্রাইভার হেলপারসহ মাল ভর্তি পার্সেলের গাড়ী থানায় নিয়ে গিয়ে আটক করে রেখেছেন। অথচ গাড়ীতে থাকা সিসিটিভির ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় গাড়িটির চলমান অবস্থার গতি, সময় এবং সকলের কথা-বার্তা স্পষ্ট ভাবে রয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে গাড়ির গতি ছিল ঘন্টায় ৩৬ কিলোমিটার এবং সঠিক লেনেই চলছিল। ওসি স্যারের গাড়ীটি উল্টো পথে আসে যা ফুটেছে স্পষ্ট।
এই ভাবে নিউমার্কেট থানার অফিসার ইনচার্জ মোহ্সীন উদ্দীন এর চাঁদাবাজি ও সাধারণ মানুষদের মিথ্যা অভিযোগে হয়রানির মাত্র দিন দিন বাড়েই চলছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
এবিষয়ে ওসি মোহসীনের ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেনি। তবে এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে থানায় ফোন দিলে কর্তব্যরত এক অফিসার ফোন ধরে বলেন,অবৈধভাবে বসা হকার উচ্ছেদ করায় আমাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করে। যা ভিত্তিহীন।
থানা সূত্র জানায়, রাজধানীর পিলখানা, রাইফেল স্কয়ার, সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, আজিমপুর গভমেন্ট কোয়ার্টার, সুকন্যা টাওয়ার, সায়েন্সল্যাব, হাতিরপুল বাজার, ইস্টার্ন প্লাজা, সেন্ট্রাল রোড, ফুলার রোড ও নীলক্ষেত এলাকা নিয়ে নিউমার্কেট থানা গঠিত। থানাটিতে ১ জন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (ওসি), ২ জন ইন্সপেক্টর, ২৪ জন এসআই, ২৯ জন এএসআই ও ৩৫ জন কন্সটেবল রয়েছেন। এ ছাড়া আবাসিক সমস্যা, অভ্যাগতদের বসার জায়গার সংকট, পার্কিংয়ের জায়গা না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে এ থানায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category