• সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:১২ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
জাতিসংঘের বৈশ্বিক এআই উপদেষ্টা পরিষদ গঠন বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ম্যাচ কবে, কখন, কোথায় নুরের ওপর হামলা: পুলিশের ভূমিকা তদন্তে কমিটি করছে ডিএমপি সংস্কার না হলে নূরের পরিণতি আমাদের জন্যও অপেক্ষা করছে: হাসনাত ফিলিস্তিনি নেতাদের জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান আটকে দিলো যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে নুরকে বিদেশে পাঠানো হবে আট উপদেষ্টা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ভজঘট অথবা, আট উপদেষ্টা দুর্নীতির বিষয়টি থেকে গেল নিস্পত্তিহীন। ডাকসুতে সংসদ নির্বাচনের রিহার্সাল না অন্য কিছু অথবা দাবি আদায়ের নামে জনদুর্ভোগ। ‘মব ভায়োলেন্স’ থামাতে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয় সেনাবাহিনী: আইএসপিআর এবার আটা-ময়দা-ডালের দামও বাড়লো

কোটার আন্দোলন ও আবেদ আলীরা বিবাদে ব্যস্ত রেখে, মধূ খাচ্ছে কারা?

Reporter Name / ৮৭ Time View
Update : সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪

– রিন্টু আনোয়ার
কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের জয় এক প্রকার হয়ে গেছে। সেটা নৈতিক ও যুক্তির জয়। কিন্তু, গিট্টু লাগানোর মতো জটিলতা তৈরি করে দেয়া হয়েছে বিষয়টিকে আদালতে নিয়ে তোলার মাধ্যমে। আন্দোলনকারীদের দাবি আদালতের কাছে নয়, সরকারের কাছে। বিশেষ করে সরকারের নির্বাহী বিভাগের কাছে। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া আন্দোলনটা ছিল কোটা সংস্কারের, কোটা বাতিলের নয়। সরকারি চাকরিতে মাত্রাতিরিক্ত কোটাব্যবস্থাই এর মূল কারণ। এই মাত্রাতিরিক্ততা অনেকটাই অযৌক্তিক পর্যায়ে। যে কারণে সংস্কারের আবশ্যকতা। কিন্তু, সরকারের নির্বাহী বিভাগ সংস্কার না করে একবারে বাতিলই করে দেয়। এতে বাধে আরেক বিপত্তি। রাজনীতির চেয়েও বেশি রাজনীতি বা অতিরাজনীতির জেরে জটিলতা আরো বাড়ে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ কয়েকটি শ্রেণি এর বিরোধীতা করে। পরে সেই কোটা আবার বলবত করে দেয়া হয়। গোটা বিষয়টিই হয়ে যায় লেজেগোবরে। যা হতে হতে এখন হয়ে গেছে আদালতি বিষয়। এমন একটি সরকারি বা রাজনৈতিক বিষয়কে আদালতে টেনে নিয়ে যাওয়ার দুষ্টরাজনীতি, সামগ্রিক পরিস্থিতিকে আরো জটিলতায় নিয়ে গেছে। তারওপর “মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ” হয়ে বিষয়সুচি চলে গেছে এক আবেদ আলীতে।
এমনিতেই তালিকা, ভাতা, কোটা ইত্যাদির নামে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের মুক্তিযোদ্ধাদের বিতর্কিত ও ছোট করার আর কিছু বাকি রাখা হয়নি। বছর কয়েক ধরে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলতে ছেলে-মেয়ে নয়, নাতিপুতিও যুক্ত হয়েছে। এ নিয়ে রয়েছে চিকন রাজনীতি। এরপর মুক্তিযোদ্ধা বলতে আসল না নকল-এ অপমানজনক প্রশ্নতো রয়েছেই। যা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদেরকে এই প্রজন্মের প্রতিপক্ষ করে দিয়েছে। ফলে এখন ব্যাপারটি গড়িয়েছে মেধা বনাম কোটায়। সেইসঙ্গে নানা মন্দ কথা তো আছেই। নকল-ভুয়া, মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের নিয়ে সমালোচনার তীর গিয়ে পড়ছে একেবারে সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের ওপর। আর এই সুযোগে প্রশ্নফাঁস কোটা চেপে বসেছে জাতীর ঘাড়ে। হালে ঘটনাচক্রে  ফাঁস  হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে চলা তথাকথিত আবেদ আলী নামে নতুন কোটা! যে কোটায় এ পর্যন্ত কতোজনের কতোভাবে চাকরি হয়েছে, গুণে শেষ করার মতো নয়।
আবেদ আলীর হাত ধরে কতোজন বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। বিভিন্ন ক্যাডারে তারা এখন উচ্চাসনে। ২৪তম ব্যাচে প্রথম প্রশ্নফাঁস বিষয়টি ধরা পড়ে। এই ড্রাইভার আবেদ আলীর নেতৃত্বে একটি গ্রুপ সাফল্য এবং স্মার্টনেসে এ কাজ করেছে। কাস্টমার যোগাড় করেছে দক্ষতার সাথে। প্রার্থীদের বিভিন্ন জায়গায় রেখে দুয়েকদিন আগে প্রশ্নপত্র দেওয়া হতো। পরে পরীক্ষায় তারা উচ্চ নম্বর পেয়ে পাশ করতো। ওই সময় দলীয় পরিচয়ে নেতাদের তালিকাও আসতো। তালিকা অনুযায়ী কম/বেশ করে টাকা নেয়া হতো। নিজেদেরটা রেখে রাজনৈতিক নেতাদেরও ভাগ দেয়া হতো।
দেশে আলোচিত স্বাস্থ্যের সেই আলোচিত ড্রাইভার মালেক, ঠিকাদার মিঠুও বিশ্বস্ততার সাথে এ কাজ করতো একসময় মেডিকেল সেক্টরে। কেবল চাকরি নয়, পোস্টিং, পদ-পদায়নও চলতো। কামিয়েছে শত কোটি টাকা। আর সেই ভাবেই একেই কাজ করে শত শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন বিসিএস-এর এই আবেদ আলীগংরা। আর বিসিএসসহ উচ্চমানের চাকরিতে ধন্য হয়েছেন হাজার হাজার ক্যাডার। তারা এখন বিভিন্ন সেক্টরে এক একজনমহোদয়-মহাশয়।
৮ জুলাই বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ওয়াসা রোডের নিজ ফ্ল্যাট থেকে আবেদ আলী ও তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সিয়ামসহ ১৭ জন ধরা না পড়লে এ ঘটনা হয়তে সামনেই আসতো না। বললে কেউ বিশ্বাসও করতো না। অবশ্য বলার সাহস নিয়েও ছিল প্রশ্ন।
পিএসসির ড্রাইভার আবেদ আলী, স্বাস্থ্যের ড্রাইভার মালেকরা শত শত কোটি টাকার মালিক হতে পারলে তাদের মালিকরা কত হাজার কোটি টাকার মালিক, তা আর বোঝার বাকি থাকে না। অথচ মেধার জোরকে ব্যর্থ করে দিয়ে নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছে কতো মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর কোটায় নিয়োগ পেয়ে কতো খোঁটা সইছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।
আবেদ আলীদের কাণ্ডকীর্তি একেবারেই কি অজানা ছিল সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের! এক দশক আগে পিএসসির সাবেক এই গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীকে প্রশ্নপত্র ফাঁস সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে চিহ্নিত করেছিল থানা-পুলিশ। তখন সৈয়দ আবেদ আলীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়েছিল। তাতে কি তার কিছু হয়েছে? তাকে বাঁচানোর কতো শক্তিমান কর্তা বসে ছিলেন পদে পদে। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে পাবলিক পরীক্ষা আইনে করা মামলায় ২০১৪ সালে আবেদ আলীসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জসিট দেয় শেরেবাংলা নগর থানা-পুলিশ। ৯ বছরে এ মামলার ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র দুজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে আবেদ আলীর বিচারও হয়নি। এতে তার মার্কেটিং ও এ কাজে দক্ষতার সুনাম আরো ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে। কাস্টমার আরো বাড়তে থাকে। অন্যদিকে, রাস্তায় চেচাচ্ছে মেধাবী এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। তারা মালুমও করতে পারছেন না, তাদের বিবাদে ব্যস্ত রেখে মধূ খাচ্ছে কারা? আর কোটা প্রথার শুরুটাই বা কিভাবে, কোন প্রেক্ষিতে?
বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পরের বছর  থেকেই এই ব্যবস্থা শুরু হয়। ১৯৭২ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উপহার হিসেবে কোটা চালু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই সময় সরকারি কর্মচারী নিয়োগে মাত্র ২০ শতাংশ নেওয়া হয়েছিল মেধায়, ৪০ শতাংশ জেলা কোটা এবং ১০ শতাংশ ছিল নারী কোটা। আর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ। ১৯৭৬ সালে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ জেলা কোটা থেকে ২০ শতাংশ কমিয়ে সাধারণদের জন্য ২০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করা হয়, মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে ১৯৭২ সালের সমান ৩০ শতাংশ কোটা রাখা হয়। নারীদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত থেকে যায়। কোনও পরিসংখ্যান ছাড়াই ১৯৭৬ সালের পর আবারও ১৯৮৫ সালে কোটা সংস্কার করা হয়। ওই সংস্কারে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে সাধারণদের জন্য ৪৫ শতাংশ নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটা আগের মতোই ৩০ শতাংশ রাখা হয়। এছাড়া জেলা কোটা ১০ শতাংশ ও নারীদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হয় আগের মতোই। আর প্রথমবারের মতো উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য পাঁচ শতাংশ কোটা রাখা হয়। কিন্তু কোনও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে কোন সময় কোটা ব্যবস্থার এ বিভাজন হয়নি। শুধু তাই নয়, কোটায় প্রার্থী না থাকলেও কোটার বাইরে শূন্যপদে কাউকে নিয়োগ দেওয়াও হয়নি। উল্টো অবৈধ সুযোগ নিয়ে অমুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি দেওয়ার অভিযোগ আসতে থাকে।
৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথম ক্ষমতায় আসার পর ৯৭ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য নতুনভাবে কোটা ব্যবস্থা চালু করেন এবং ২০১১ সালে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা বরাদ্দ হয়।
২০১৮ সাল পর্যন্ত ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০%,জেলা কোটা ১০%,নারী কোটা ১০%,ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা ৫%, প্রতিবন্ধী কোটা ১% নির্ধারণ করা হয়।
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমতার ভিত্তিতে এগিয়ে নিতে কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিতে বর্তমান সরকার সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে ও মেয়ে, নাতি-নাতনি কোটা, জেলা কোটা, উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা, পোষ্য কোটা ও নারী কোটাসহ বিভিন্ন কোটা সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রচলন করে। ফলে ২০১৮ সালে প্রচলিত কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশে ছাত্রদের তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাত জন। আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন হাই কোর্ট মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। হাইর্কোটের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আবারও শুরু হয়েছে আন্দোলন।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবি, কোটা কখনোই স্থায়ী হয় না, অন্তত চার-পাঁচ বছর পরপর সংস্কার হওয়া দরকার। কয়েক বছর পরপর দেখতে হয়, কোটা কতটা কার্যকর আছে। আর এই সংরক্ষিত কোটা সবসময় মেধার ‍মূল্যায়নে অর্ধেকের কম হতে হবে, ৫০ শতাংশের বেশি সংবিধানসম্মত নয়। তবে সংস্কারের আন্দোলন যৌক্তিক। স্বাধীনতার ৫৩-৫৪ বছর এসে সময়ের ব্যবধানে বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা বা সংস্কারের দাবি রাখে। কিন্তু, নানা কৃত্রিম জটিলতায় তা না করে কেবল জটিলতা বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে পয়দা হাসিল করছে আবেদ আলীগংরা। এই অবস্থার পেছনে আছে সরকারী চাকুরি প্রদানে গত কয়েক দশকের বেশি সময় ধরে চলা দলীয়করণ এবং দুর্নীতি। বাংলাদেশে সরকারী চাকুরি সর্বস্তরেই যে, অর্থের বিনিময়ে জোগাড় করতে হয় সেটা কমবেশি সবাই জানেন। এই অবস্থার ফলেই আজকের এই অস্থিরতা তৈরী। প্রকৃতপক্ষে মেধার ভিত্তিতে সরকারী চাকুরি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। দেশের প্রতিরক্ষা খাত ছাড়া সর্বত্র একই অবস্থা। কোটার নামে এই দুর্নীতি আরো বেশি বিস্তার লাভ করেছে বলেই অভিযোগ বিজ্ঞ মহলের। দেশে চলমান কোটা আন্দোলনের পেছনে সেটাও একটা কারণ। আরেকটা বিষয় হল সরকারী কর্ম কমিশনের স্বায়ত্তশাসনের অভাব। আরো স্পষ্ট করে বললে সরকারী দলের, অঙ্গুলি হেলনে কর্ম কমিশন পরিচালিত হয় সেটা কেনা জানে। এই অবস্থার অবসান না ঘটালে ভবিষ্যতে সরকারী চাকুরিতে মেধাবীদের আকর্ষন করা যাবে কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
সম্প্রতি বিবিসি আয়োজিত সংলাপে  সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের দুই প্রতিনিধি কোটা ‘পুনর্বিন্যাসের’পক্ষেই মত দিয়েছেন, কিন্ত কর্ম কমিশনকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার বিষয় নিয়ে আলোচনাই করেন নি কেউই।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত তার দুর্নীতির বিষয়ে সম্প্রতি আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তিতে সব বলে দিয়েছেন তিনি। তার হাত ধরে অনেকেই হয়েছেন বিসিএস ক্যাডার। সব ক্যাডারেই রয়েছেন তার লোক।
ডিজিটাল জমানার এক উপাখ্যান এই আবেদ আলী। মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার আবেদ আলী জীবনের শুরুতে মাটিকাটা শ্রমিকের কাজ থেকে শুরু করে রিকশা চালানো, বিভিন্ন ধরনের কাজ করতেন। একসময় তিনি গাড়ি চালানো শিখলে চাকরি হয় তার এবং এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। পিএসসি’র সাবেক এক চেয়ারম্যানের গাড়ি চালানোর দায়িত্ব পাওয়ার পর ভাগ্যের চাকা রাতারাতি ঘুরতে থাকে। কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন। চক্রটি গত বছর কয়েক ধরে সমানে বিসিএসের প্রশ্নফাঁস করে আসছিলো। নন-ক্যাডার পদের পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস করতো তারা। এ কাজে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে। আবেদ আলী নিজেই এখন এককভাবে শতকোটি টাকার মালিক। অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, হোটেল, খামার, বাগানবাড়ি, বিদেশে অর্থ পাচার, বাড়ি নির্মাণসহ অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। গাড়িচালক হিসেবে কাজ করা আবেদ আলীর নিজেরই এখন কয়েকজন গাড়িচালক রয়েছেন। বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানে দান-খয়রাত করে নিজেকে দানবীর হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যস্ত ছিলেন আবেদ আলী। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে দুর্দিনের কষ্ট, অভাব অনটনের আবেগঘন বক্তব্য দিয়ে মানুষের নজর কাড়তেন। তার অবৈধ টাকার গরমে বড় ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম বেপরোয়া জীবনযাপন করতেন। টাকা খরচ করে বাগিয়ে নিয়েছেন একই সময়ে ছাত্রলীগের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদবি। অবশ্য আবেদ আলী কান্ড প্রকাশ পাওয়ার পর ছাত্রলীগ তাকে বহিস্কার করে বলেছে, সে দলের লোক নয়। আর ছেলেটিও বলেনি, আবেদ আলী তার বাবা নন। আবার এনবিআর এর মতিউরের মতো আবেদ আলীও কিন্তু বলেননি, এই ছেলে তার নয়।
লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category