• বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন

ট্রাম্প আসায় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার কি ঝুঁকিতে পড়ে গেল?

Reporter Name / ৩১ Time View
Update : শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪

-রিন্টু আনোয়ার

ইতিহাস গড়ার সমূহ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল কমলা হ্যারিসের। ডোনাল্ড ট্রাম্পই ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতহাস গড়লেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হারের পর নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান ও সমর্থকদের উসকে দিয়ে দাঙ্গা বাধিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এ নিয়ে মামলা ও ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার পর মনে করা হচ্ছিল, ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বুঝি শেষ হতে চলল। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে ট্রাম্প দোর্দণ্ডপ্রতাপে ফিরে এসেছেন ক্ষমতার মসনদে। যা ইতিহাস গড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আড়াইশ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছিল আরেকবার। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড চার বছর ক্ষমতায় থাকার পর ১৮৮৮ সালে হেরে যান।
ঠিক চার বছর পর ১৮৯২ সালে আবার নির্বাচনে জিতে তিনি হোয়াইট হাউসে ফেরেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত ধরে ১৩২ বছর পর সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখল যুক্তরাষ্ট্র। এই নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে আরেকটি ইতিহাস গড়েছেন ট্রাম্প। ইতিহাস গড়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজের মসনদে ফেরার পেছনে যে কটি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম ছিল দেশের অর্থনীতি।
গত চার বছর মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ অনেকটা হাঁফিয়ে উঠেছে। করোনার পর মূল্যস্ফীতি যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, তা সত্তরের দশকের পর যুক্তরাষ্ট্র আর কখনোই দেখেনি। আর এ সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে ট্রাম্প-শিবির। এছাড়া অভিবাসন ও কৃষ্ণাঙ্গ ইস্যু এবং লাতিন আমেরিকান, নারী ও তরুণ ভোটারদের বেশ ভালোভাবেই আকৃষ্ট করতে পেরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় কে এলো-এ নিয়ে বাংলাদেশের কার কী, জনবিশেষ এমন কথা বললেও বাস্তবটা বিপরীত। কারণ তা এড়ানোর অবস্থা নেই। মার্কিন নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রশ্ন ছিল, ট্রাম্প বা কমলা হোয়াইট হাউসে ঢুকলে বাংলাদেশে কে উপকৃত হবে, কার অসুবিধা হবে? কে–কারা বলতে সরকার, বিএনপি, আওয়ামী লীগ। প্রশ্নটা এখন কিঞ্চিত বদলে সুনির্দিষ্ট ইউনূসের দিকে। তবে ইউনুস তথা বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা নেই বললেও রয়েছে শঙ্কা। কূটনীতিকদের মতে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বর্তমানে যে সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাতে মার্কিন সহায়তার যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তার ওপরেও প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতন, ড. ইউনূসকে ক্ষমতায়নের পেছনে পিটার হাস, ডোনাল্ড লু গোষ্টীর দৌড়ঝাপ ছিল আলোচিত বিষয়। তারা বাইডেন-কমলাদের লোক। মানে ট্রাম্পের বিপক্ষ শক্তির নিয়োগকৃত। এখন তাহলে কী হবে চিত্রটা? এখন আলোচিত বিষয়টি।
কেউ কেউ বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বড় ঝুঁকিতে পড়ে গেল। কিভাবে? ড. ইউনূসের ক্ষমতায় আসা এবং তারআগে বাংলাদেশে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন ছিল একদম প্রকাশ্যে। এখন মসনদে রিপাবলিকান ট্রাম্প। উপরন্তু ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ক ভালো। তাই ভারত এখন বাংলাদেশে আবার প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাবে। আর ভারতের কূটনীতির মন্ত্রে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা ট্রাম্পকে দিয়ে তো বলানো হয়েছে নির্বাচনের আগেই। বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে টাম্পকে দিয়ে টুইট করানো হয়েছে। সেই টুইটকে আবার ইচ্ছা মতো টুইস্ট করেছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। এখন সেটার ফলো আপ হবে। সেইক্ষেত্রে ভারত এখন বাংলাদেশে নাক গলানোর সুযোগ ফিরে পাবে। এতে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার বিপদে পড়ে যাবে। মোটা দাগে বেনিফিট পাবে বিতাড়িত আওয়ামী লীগ। এধরনের  ধারনা হলেও কারো কারো কাছে এই হিসাব বড় পরিস্কার।
বিগত বছর গুলোতে বন্ধু হয়ে উঠলেও শেষ চার বছরে বকাইডেন জমানায় ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নানা বিষয়ে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এখন সেখানে হিসাব বদলাবে। দেশীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগও বেদম খুশি। তারা ভাবছে, ট্রাম্প আসায় শেখ হাসিনার চট করে চলে আসার অভিপ্রায় পূরণ হতেও পারে। সেই পুলকে বিজয়ী ট্রাম্পকে শেখ হাসিনা অভিনন্দন জানিয়েছেন নিজেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দাবি করে। বিএনপির এক অংশের মাঝেও পুলক আছে। তারা মনে করছে, নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এখন আরো বেশি চাপ দিতে পারবে। ইউনূস সরকার দ্রুত নির্বাচনের কথা ভাববে। যা বিএনপির এ সময়ের মূল চাহিদা। যে যেভাবেই দেখুক যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল বিশেষ করে ট্রাম্পের আবার মসনদ আরোহন বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে অতীতে মার্কিন   রাজনীতিকদের, বিশেষ করে ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বেশ আলোচিত বিষয়। তাই  ট্রাম্পের জয়ে বাংলাদেশের জন্য কী হবে-প্রশ্নটি অমূলক নয়। সমান্তরালে প্রশ্ন ঘুরছে ভারতই বা এখানে কতটা ফ্যাক্টর হতে পারে?
এইদিকে ট্রাম্পের সাথে নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ক ভালো থাকার কারণে এই বছর সেপ্টেম্বর মাসেও মোদিকে একজন চমৎকার মানুষ হিসাবে উল্লেখ করে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প জয়ী হওয়াতে বাংলাদেশের দ্বীপাক্ষিক সম্পর্কে ভারত ভূমিকা পালন করতে চাইবে এটাই এখন স্বাভাবিক। সেইক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিক না হলে সেখানে ভারতের দিক থেকে একধরনের নেতিবাচক উপাদান থাকাই স্বাভাবিক,তাই সেটি শেখ হাসিনার ফর্মে যাবে বলে স্বপ্নে বিভোর হাসিনাসহ আওয়ামী মহল। তবে পালিয়ে যেতে বাদ্য হওয়ার পরেও হাসিনার এমন অনুভূতি তাকে দাম্ভিক এবং ক্ষমতা লোভী প্রমাণ করে বলে ধারণা করছেন বাংলাদেশের সচেতন মানুষ।
ড. ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন রাজনীতিদের সম্পর্ক কি কোন ভূমিকা রাখবে- এগুলো আসলেই অপ্রাসঙ্গিক। সাধারণত আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট বদল হলেও বৈদেশিক নীতিতে খুব বড় পরিবর্তন হয় না। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা বা কাঠামোগুলোর একটা শক্তিশালী ভূমিকা থাকে। কিন্তু, ট্রাম্প বলে কথা। কিছু প্রচারণায় ইনস্টিটিউশনকে বদলে দেয়ার কথা বলছেন তিনি। সেটা হলে একটা বড় পরিবর্তন হতে পারে। তারওপর মার্কিন নির্বাচনের মাত্র ক’দিন আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংখ্যালঘু নির্যাতন সংক্রান্ত টুইটটির মাঝে সেই বার্তা কিছুটা আছে। এটিকে ভবিষ্যৎ নীতির চেয়ে নির্বাচনে আমেরিকার হিন্দু ভোটার টানার রাজনৈতিক কৌশল মনে করলেও কিছু কথা থেকেই যায়। যা কারো জন্য আনন্দের। কারো জন্য উদ্বেগের। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ব্যাখ্যা হচ্ছে, আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জায়গা থেকে তারা ধারণা করছেন, কিছু লবি গ্রুপ হয়তো এটাকে ইনফ্লুয়েন্স করতে চেয়েছে এবং সেই আলোকেই তার এই স্টেটমেন্টটা এসেছিল। এদিকে বাংলাদেশে বিগত নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আমেরিকা প্রথমে শক্ত অবস্থানে থাকলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থনই একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল।ট্রাম্প যাতে জয়ী হন, সে জন্য ভারতে এবারও হিন্দুত্ববাদীরা পূজা করেছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্কও ভালো বলেই ধরে নেওয়া হয়। ট্রাম্প তাঁর প্রচারণায় মোদিকে ‘বন্ধু’ বলে প্রশংসাও করেছেন। বিজয়ের পর ট্রাম্পকে সবার আগে অভিনন্দন জানিয়েছেন মোদি। কিন্তু অতঃপর বিগত মেয়াদের চেয়ে এবার চিত্রটা একটু ভিন্ন হতে পারে। ট্রাম্পের কথায় সে ইঙ্গিত রয়েছে। গত অক্টোবরে তিনি ভারতের শুল্কনীতির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ভারত বিদেশি পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে। নির্বাচনে জয়ী হলে তিনিও পাল্টা ভারতীয় পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করবেন।
অগাস্ট মাসে নরেন্দ্র মোদী ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রকে সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে উদ্বেগের কথা জানালেও সেটি তেমন গুরুত্ব পায়নি। কমালা হ্যারিস নিজে ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও এক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাট শিবিরের অবস্থান পরিবর্তন আনতে পারেননি। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্ক বেশ ভালো। এবছর সেপ্টেম্বর মাসেও মোদীকে একজন ‘চমৎকার মানুষ’ হিসেবে উল্লেখ করে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর বিপরীতে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে অতীতে মার্কিন রাজনীতিকদের, বিশেষ করে ডেমোক্র্যাট নেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক দেখা গেছে। ইউনূস অতীতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন ২০১৬ সালে যখন ট্রাম্প নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফ্রান্সের এইচইসি প্যারিস নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬ সালে বক্তব্য রাখার সময় ড. ইউনূস ট্র্যাম্পের জয়কে ‘সূর্যগ্রহণ’ বা অন্ধকার সময় হিসেবে বর্ণনা করেছেন বলে হেকের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া সেসময় আরেকটি অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে তিনি কী বলতে চাইবেন জিজ্ঞেস করা হলে, তখন ‘দেয়াল’ তৈরি না করে ‘সেতু’ নির্মাণ করে দৃষ্টিভঙ্গি উদার করার কথা বলেছিলেন ড. ইউনূস।
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বে অনেকক্ষেত্রেই বাংলাদেশকে ভারতের চোখে দেখার প্রবণতা রয়েছে। ট্রাম্প যেভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সম্পর্কে বিশ্বাসী, তাতে ভারতের প্রভাব বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে বাংলাদেশেও আমেরিকার স্বার্থের জায়গা হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৌশলগত, ভূরাজনৈতিক, এমন নানা দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা সম্পর্কে আগ্রহের জায়গা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নিজেদেরকে বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে। কূটনীতি বিশেষজ্ঞরা বরাবরই বলেন, আমেরিকার সরকার বদল হলেও নীতির বদল হয় না। কারো কারো ক্ষেদভরা প্রশ্ন, সেই নীতিটা কী? গণতন্ত্রের? আমেরিকা মধ্য প্রাচ্যে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় না কেন? বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাহলে ভোটবিহীন হাসিনা সরকারের সাথে এতোদিন সম্পর্ক রাখলো কেন? ভোটাধিকার মূখ্য হলে পাকিস্তান ইমরান খান সরকারকে সরালো কেন? তাই নীতি এখন সেখানেও বদলায়। ইউক্রেন যুদ্ধ তো আমেরিকা বাধিয়েছে, বাইডেন প্রশাসন বাধিয়েছে। নীতি বদল হয় বলেই ট্রাম্প সেই যুদ্ধ থামানোর কথা দিয়েছেন।
বুশের মধ্যপ্রাচ্য নীতি থেকে সরে এসে ট্রাম্প সেখানে যুদ্ধ বন্ধ করেছেন। বুশ প্রশাসনের মোতায়েন করা সৈন্য ফিরিয়ে নিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন এক সময়ে আবারও হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করছেন যখন বিশ্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে ভয়ানক যুদ্ধ চলছে। গাজা, লেবানন ও ইউক্রেনে প্রতিদিনই রক্ত ঝরছে। এ বাস্তবতায় ট্রাম্প প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেবে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কেমন হবে– এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, রাশিয়া, চীন, ভারত ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তাঁর প্রশাসনের সম্পর্কের দিকে সবার নজর থাকবে। ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ বন্ধের অঙ্গীকার নিয়ে আবার ক্ষমতায় এসেছেন। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় যেতে পারেন। আগের মেয়াদে চীনকে ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে ছিলেন ট্রাম্প। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কথা বললেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ছাড় না দেওয়ারও ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তার মেয়াদে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের তিক্ততা কমতে পারে, তা মোটামোটি নিশ্চিত। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের চীন নীতিতেও পরিবর্তন আসতে পারে।
ট্রাম্প নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে বোদ্ধাদের নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন, যা নতুন করে আরেকটি বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করতে পারে। এছাড়া, আমেরিকার ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঠিক প্রথাগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা যায়নি। তিনি যেভাবে বৈদেশিক নীতির জায়গাগুলো বিবেচনা করেন, সেটি ঘিরে অনিশ্চয়তাও থাকে। কিছু প্রচারণায় তিনি ইনস্টিটিউশনকে বদলে দেয়ার কথা বলছেন। সেটা হলে একটা বড় পরিবর্তন হতে পারে।
বাংলাদেশে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখার কৌশলের বাইরে যেতে পারবে বলে মনে হয় না। তবে ভারতের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের সম্পর্ক ভালো ছিল না। এ অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন, তাহলে বাংলাদেশ কোয়াডে যুক্ত থাকল কি থাকল না, সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের খুব বেশি নজর থাকবে না। সুতরাং বাংলাদেশকে অবস্থান ঠিক রাখতে হলে নিজেদেরই চিন্তাভাবনা করতে হবে।
বৈদেশিক নীতিতে সাধারণত বিশ্বের অন্যান্য দেশ বা প্রতিবেশী দেশের সাথে স্বার্থের সমীকরণ গুরুত্ব রাখে। তবে আমেরিকার জন্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এবার নতুন সমীকরণের জায়গা অধ্যাপক ইউনূসের সাথে সম্পর্ক। তবে এসব নানাবিধ ফ্যাক্টর মিলেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কটা নির্ধারণ হবে। সেই অপেক্ষা করতেই হয়।

……….
লেখক ঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট
rintu108@gmail.com


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category