-রিন্টু আনোয়ার
বিনামেঘে বজ্রপাত বা মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো আকস্মিক বিষয় নয় অবসর নেওয়ার সাড়ে তিন বছর পর দূর্নীতির অভিযোগে সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল(অব:) আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সাম্প্রতিক ঘটনা। তাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় ফেলা হচ্ছে, বার্তাটি সরকারের বিশেষ বিশেষ জায়গায় আগেই দেয়া হয়েছে। জানতেন জেনারেল(অব:) আজিজ নিজেও। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বিবৃতির মাধ্যমে তা পোক্ত এবং খোলাসা করা হয়েছে। যতো ঘটনা, অভিযোগ ও কাণ্ডকীর্তি সব আগেরই। সময়টায় একটু ভিন্নতা। নিষেধাজ্ঞাটির আগে ঢাকা সফর করে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোaনাল্ড লু। তার এ আগমনকে ক্ষমতাসীন দল থেকে ‘বিনা দাওয়াতে আসা’ বলা হলেও যথারীতি তাকে রাজসিক আপ্যায়ন, আদর-সমাদর করা হয়েছে। ঢাকা ছাড়ার আগে, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারদের সাথে ক্রিকেটও খেলেছেন। প্রীতি ম্যাচটির একটি ভিডিও পর্যন্ত ছেড়েছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। বোলিং-ব্যাটিং দুটাই করেছেন। ফুচকা-কলা ইত্যাদি খেয়েছেন।
সবমিলিয়ে লুর এবারের সফরকে নিজেদের জন্য আশীর্বাদ বলে প্রচার করে জানানো হয়েছিল, লু বলে গেছেন তারা পেছনে নয়, সামনে এগিয়ে এগিয়ে যেতে চান। কেবল তাই নয়, সরকারকে আর চাপে রাখবেন না বলে কথাও দিয়ে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে গেছে, আর কাউকে স্যাংশন ধরনের কিছু দেওয়া হবে না, আগে দেওয়া স্যাংশনও তুলে নেয়া হতে পারে বলে লু বাতাস দিয়ে গেছেন মর্মে কিছু গুঞ্জনও ছড়ানো হয়। লু এবারের যাত্রায় বিএনপির কারো সঙ্গে না বসার উল্লাসও ধরে রাখতে পারেনি ক্ষমতাসীনরা। তাদের এমন উইন-উইন ভাবের মধ্যেই ‘জীবনে ২০১৮ সালের মতো এতো সুন্দর নির্বাচন আর দেখেননি বলে জানান দেয়া বাংলাদেশের সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল আজিজের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঢাকায় ডোনাল্ড লু সাহেব আসলো, ভাবলাম তারা আসলে সম্পর্ক ভালো করতে চায়, কিন্তু নিশি রাতে তারা স্যাংশন দিলো। আগে সাতজন এখন আবার একজন যুক্ত হলো। তবে তাদের স্যাংশন আমরা তোয়াক্কা করি না। যারা গণহত্যাকে অস্বীকার করে, তারা ভিসানীতি বা নিষেধাজ্ঞা দিল সেসব তোয়াক্কা করি না।
যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেয়া বিবৃতিতে বলেছে, তারা যথারীতি বাংলাদশকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়ও একই সুর। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে বলে জানান তিনি।
সরকার বা আওয়ামী লীগ থেকে এ স্যাংশন ঠিক হয়নি বা জেনারেল আজিজ ভালো লোক-এমন দাবি কিন্তু করা হচ্ছে না। সদ্য সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদের দুর্নীতি নিয়ে দেশীয় গণমাধ্যমে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পরও একই ভূমিকা দেখাগেছে ক্ষমতাসীন মহলে।
জেনারেল আজিজকে নিয়ে বছর কয়েক আগে আলজাজিরায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ নামে একটি তথ্যচিত্রে যা বলা হয়েছিল এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিবৃতিতেও প্রায় তা-ই বলা হয়েছে। আলজাজিরার সংবাদটি ছিল ডকুমেন্টারি বৈশিষ্ট্যে প্রধানমন্ত্রীসহ জেনারেল আজিজের পরিবারকে জড়িয়ে। জারিকৃত স্যাংশন নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির মাঝে তথ্য সেগুলোই। তবে, প্রধানমন্ত্রী বা তার পারিবারিক সদস্যদের নাম নেই। আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী গ্রুপও নানা কারণে চেয়েছে আজিজকে সাইজের লিস্টে ফেলে দিতে। বিএনপির কেউ কেউ তা জানলেও উৎসাহী হননি। ক্ষমতাসীন সরকারের অন্যতম খাস সাবেক এই সেনাপতি জেনারেল আজিজ সম্পর্কে কিছু একটা হচ্ছে বা আসছে, তা ক্ষমতাসীন মহলের কারো কারো আগাম জানা ছিল। নানা কথার এক পর্যায়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদও বলেছেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জনসমক্ষে আনার আগে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ অবসরে যান ২০২১ সালের ২৪শ জুন। এতাদিন পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় খবরটি এসেছে সোমবার মধ্যরাতে। স্বাভাবিকভাবেই তখন বাংলাদেশের মানুষ ঘুমিয়ে। ভোরের দিকে খবরটি জানাজানি হয়। আসলে জেনারেল আজিজের ভিসা বাতিল হয় ২০২১ সালে। তখন তার পরিবারের সদস্যদের ভিসা বাতিলের খবর ছিল না। তখনকার খবর ছিল- সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজকে যুক্তরাষ্ট্রে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। পত্র মারফতে তার মার্কিন ভিসা বাতিলের কথাও জানানো হয়েছে। কাতারভিত্তিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ শিরোনামে রিপোর্টটিতে জেনারেল (অব.) আজিজের দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের খবর প্রচারের কিছুদিন পর যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে তার ভাই হারিছ-যোসেফসহ পরিবারের বাকিদের নানা অপকর্ম তুলে আনা হয়। জেনারেল (অব.) আজিজ তখন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। যদিও তা এখনো তিনি করছেন। তখন তার সিরিয়াস সহায়ক ছিল সরকার ও ক্ষমতাসীন দল। আলজাজিরার তথ্যচিত্রকে বলা হয়েছিল, এটি সরকারের বিরুদ্ধে একটি বিজ্ঞাপন। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এখন জেনারেল আজিজকে নিজের কথা নিজেরই বলতে হচ্ছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতি নেই, তবে মর্মাহত হয়েছি। আমি কোনো অন্যায় করিনি। ঘুষ গ্রহণ বা দুর্নীতি করিনি। আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছি। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে অবাক ও মর্মাহত হয়েছি। শাস্তি পাওয়ার মতো কোনো কাজ আমি করিনি। কেউ তদন্ত করে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ আনতে পারলে এর পরিণতি ভোগ করতে আমি প্রস্তুত।’
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে বোঝাপড়ায় মার্কিনি এ পদক্ষেপের কারণে ঘনিষ্টরাও এখন আজিজের পাশে নেই। প্রায় একই অবস্থা লক্ষ করা গিয়েছিল সাবেক আইজিপি বেনজিরের দুর্নীতি অভিযোগ প্রকাশ হওয়ার পরও। সম্প্রতি আদালত সাবেক এই আইজিপি’র সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে তার ২৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ আর্থিক লেনদেনকারী মোট ৩৩টি অ্যাকাউন্ট জব্দসহ গোপালগঞ্জে তার ৮৩টি দলিলের সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আল জাজিরা রিপোটে প্রকাশিত হয়,রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি তার ভাই জোসেফের সাজা মওকুফ এবং অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তাঁর অপর ভাই হারিছকে সহযোগিতা ও বিদেশ পালানোর ব্যবস্থা করে দেয়ার বিস্তারিত বিবরণ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতিতে এখন পরিস্কার জানানো হয়েছে, আজিজ আহমেদের কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবমূল্যায়ন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা কমেছে। তিনি তার ভাইদের বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন। এ ছাড়া ভাইকে অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করেছেন। সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষও নিয়েছেন।
এর আগে ২০২১ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক এবং ওই সময়ে কর্মরত সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তা প্রত্যাহারের নানা চেষ্টা করে এখন অনেকটা হাল ছেড়ে দেয়ার অবস্থা সরকারের দিক থেকে। সামনে কী হতে পারে-এ জিজ্ঞাসার প্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীনদের শটকার্ট কথা হচ্ছে, এসবে কিছু যায় আসে না। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে,দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পদ ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধে আদালতের আদেশের ইস্যুতে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে আমরা তাকে প্রটেক্ট করতে যাব না, সে সাবেক আইজিপি বা সেনা প্রধান হলেও। কোনো ব্যক্তি যত প্রভাবশালী হোক, অপরাধ করতে পারে। প্রশ্ন থেকে যায়, সরকার অপরাধের শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে সৎ সাহস দেখিয়েছে কিনা। শেখ হাসিনা সরকারের সে সৎ সাহস আছে।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্ট ৭০৩১(সি) প্রয়োগ করা হয়েছে বাংলাদেশের একজন সেনাপ্রধানের ক্ষেত্রে। যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস আইনের ৭০৩১ ধারাটি মূলত আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বাজেট স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি দমন নিয়ে। ধারাটির ‘সি’ অংশে সরকারি দুর্নীতি ও মানবাধিকার বিষয়ে বলা হয়েছে। কেবল মাত্র বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকলেই অ্যাক্ট ব্যবহার করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে তদের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে। আইনের এই অংশে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতি অথবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত অন্য দেশের যে কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যদি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকে, তাহলে অভিযুক্ত সেই সরকারি কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতিতে, আর্থিক দুর্নীতির পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমূহের ক্ষতির কথাও বলা হয়েছে। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মানবাধিকার ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল। অবাধ, নিরপেক্ষ ও নির্বিঘ্ন নির্বাচনের স্বার্থে বিশেষ ভিসানীতিও ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি সম্পর্কে কিছুটা বোঝাপড়ার বাতাবরনের মাঝেই এ নিষেধাজ্ঞার ঘটনা। টানাপোড়েনের অবসান ঘটেছিল বলে যে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল, তা এখন অসার হয়ে গেল। গণতন্ত্র ফেরানো, সুষ্ঠু, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের এজেন্ডায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আচ্ছা রকমের মার খেয়েছে। কিন্তু, পিছু হটেছে বলে কোনো তথ্য নেই। দুর্নীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্রের বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তা আরো পরিস্কার সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদকে ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১(সি) ধারার আওতায় ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ঘোষণায়।
এর আগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র্যাব এবং বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞাটি দিয়েছিল মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট, অর্থাৎ তাদের অর্থ মন্ত্রণালয়। এবারেই প্রথম বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘দুর্নীতি’ অস্ত্রটি ব্যবহার করলো মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বা তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন অ্যাক্টের অধীনে প্রায় ১৫ বছরে ৬০টি দেশের ৫০০-এর বেশি রাজনীতিবিদ ও আমলা—যারা বিভিন্ন ধরনের সরকারি পদধারী (প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী ও সরকারের বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন বা আছেন), তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে। অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন অ্যাক্টের অধীনে যাদের নাম প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয়, তাদের ও তাদের পরিবারের জন্য সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হলেও এর আরো ডালপালা আছে। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বার্তা তো আছেই। অর্থপাচারের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে নামার এজেন্ডাও বাদ নেই। বছরখানেক আগে, স্টেট ডিপার্টমেন্টের গ্লোবাল অ্যান্টি-করাপশন কোঅর্ডিনেটর রিচার্ড নেফিউ ঢাকা সফর করে সেই বার্তাই দিয়ে গিয়েছিলেন।
পরিশেষে, ডনাল্ড লু’র সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে সবাই ধারণা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বোধহয় সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে গেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যে তার নীতিতে অটল থাকে এটা তারই প্রমাণ। স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওই ঘোষণার মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নতুন একটি উইন্ডো ওপেন করলো। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো জেনারেলের ওপর এমন নিষেধাজ্ঞা জারি। নানা সূত্রের খবর, পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বিদেশে যারা টাকা পাচার করেছেন তাদের ওপর। যদিও এর সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনো নেই।
এখন প্রশ্ন ও কৌতূহল-এরপর কী? এর ধারাবাহিকতা কোথায় গড়াতে পারে? এই তালিকা দীর্ঘ হলে কার লাভ? তালিকায় যারা আছেন বা যাদের নামে নিষেধাজ্ঞা, ক্ষতি কেবল তাদের? দেশ ও জনগণের ইমেজের নয়? জনমনে নানা প্রশ্ন, কৌতূহল থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আর কার কার বিরুদ্ধে কী কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে?
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
rintu108@gmail.com