রাজশাহীর মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের বাসভবনে দুর্বৃত্তের নৃশংস ছুরিকাঘাতে তার পুত্র তাওসিফ রহমান সুমন নিহত এবং স্ত্রী তাসমিন নাহার গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনার জেরে দুই দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়েছে।
তাদের প্রথম দাবিটি হলো, দেশের প্রতিটি আদালত, বিচারকের বাসস্থান ও যাতায়াতের সময় অবিলম্বে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী নিযুক্ত করতে হবে। দ্বিতীয় দাবিটি হলো, রাজশাহীর ঘটনায় বিচারকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবহেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং গ্রেপ্তার করা আসামিকে আইন বহির্ভূতভাবে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে অপেশাদারিত্ব প্রদর্শনের দায়ে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অ্যাসোসিয়েশন হুঁশিয়ারি দিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিচারকদের কাজের পরিবেশ ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ এই দুই দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে রোববার (১৬ নভেম্বর) থেকে সারাদেশের বিচারকেরা কলম বিরতি পালনের মতো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।
অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহীর এই ঘটনায় গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে, প্রকাশ্য দিবালোকে বিচারক পরিবারে লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুরো বিচার বিভাগ আজ স্তম্ভিত ও বাকরুদ্ধ। বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের প্রত্যেক আদালতও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকদের বাসভবন ও গাড়িতে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকারের কাছে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বারবার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও সরকার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
অ্যাসোসিয়েশনের মতে, বিচার বিভাগের সদস্যরা রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করলেও তারা ও তাদের পরিবার অরক্ষিত ও নিরাপত্তাহীন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, জেলা পর্যায়ের প্রত্যেক বিচারকের জন্য পর্যাপ্ত সরকারি আবাসন ও পরিবহন ব্যবস্থা নেই, এমনকি চৌকি আদালতে কর্মরত বিচারকদের অবস্থা আরও শোচনীয়।
এর ফলে বিচারকদের বাধ্য হয়ে অরক্ষিত বাসায় ভাড়া থাকতে হয় এবং রিকশা-ভ্যান বা পায়ে হেঁটেও যাতায়াত করতে হয়। অ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছে, বিচার বিভাগের প্রতি এই উদাসীনতা ও চরম গাফিলতির পরিণতিতে আজ বিচারক পরিবারে এ করুণ বিপর্যয় নেমে এসেছে। এই রক্তের দায় কোনোভাবে এড়ানোর সুযোগ নেই।
রাজশাহীর মহানগর ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের বাসায় ঢুকে বৃহস্পতিবার তার ছেলেকে হত্যা করা হয়। এ সময় বিচারকের স্ত্রীও গুরুতর আহত হন এবং হামলাকারীও আহত অবস্থায় আটক হন। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আরএমপির কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, হামলাকারী ব্যক্তির পকেটে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি চালক। তার সঙ্গে পূর্ববিরোধ থাকতে পারে।