• শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন

মরদেহের খণ্ডাংশগুলো আনোয়ারুল আজীমেরই, মেয়ের সঙ্গে মিলল ডিএনএ

Reporter Name / ৫৯ Time View
Update : সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম কলকাতায় নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঠিক সাত মাস পরে জানা গেল, উত্তর ২৪ পরগনায় উদ্ধার হওয়া দেহাবশেষ তাঁরই। আজীমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস (ডরিন) গত মাসে কলকাতায় এসে যে ডিএনএ নমুনা পুলিশকে দিয়েছিলেন, তা বিশ্লেষণ করেই জানা যাচ্ছে উদ্ধারকৃত খণ্ডবিখণ্ড লাশ আনোয়ারুল আজীমের।

ডিএনএ হলো ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড। এটি যেকোনো প্রাণীর বংশগত (জেনেটিক) তথ্য ধারণ করে। কোনো মানুষের শরীর থেকে নানা ধরনের নমুনা যেমন শারীরিক তরল পদার্থ, টিস্যু ইত্যাদি সংগ্রহ করে তাঁর সঙ্গে রক্তের মিল আছে, এমন মানুষ সম্পর্কে বংশগত তথ্য পাওয়া সম্ভব। কলকাতার সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ডরিনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার পরে জানা গিয়েছে দেহাবশেষ মৃত আনারের। তদন্তের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত সরকারি সূত্রগুলো বিষয়টি সম্পর্কে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

আনোয়ারুল হত্যা: দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় খালে তল্লাশি, হাড় উদ্ধার

আগেই মামলার তদন্তকারী সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডির একটি সূত্র জানিয়েছিল, গত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে কলকাতায় এসে তাঁর ডিএনএ নমুনা দিয়ে গিয়েছিলেন আনোয়ারুল আজীমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস।

গত ১২ মে ভারতে আসেন আনোয়ারুল আজীম। তিনি পূর্বপরিচিত গোপাল বিশ্বাসের পশ্চিমবঙ্গের বরানগরে বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ১৩ মে চিকিৎসা করাতে যাবেন বলে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন তিনি। কিন্তু ওই দিন রাতেই নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের বহুতল আবাসনের ‘বিইউ-৫৬’ ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে তাঁকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ।

তদন্ত নেমে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, আনোয়ারুল আজীম পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যে একাধিক আইনবহির্ভূত লেনদেনের মধ্যে জড়িত ছিলেন। তাঁর মধ্যে প্রধান যে বিষয়টি ছিল, সেটি হলো সোনা পাচার। তিনি বাংলাদেশে বড় সোনার পাচারকারী নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং সেই সোনা পশ্চিমবঙ্গে আরেকটি নেটওয়ার্ক চালাত।

আসামি মোস্তাফিজের স্বীকারোক্তি, আক্তারুজ্জামানের নির্দেশে আনোয়ারুল আজীম খুন

বাংলাদেশ থেকে ভারতে সোনার দাম বেশি হওয়ার কারণে এই ব্যবসা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে কয়েক হাজার কোটিতে দাঁড়িয়েছিল। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক গোয়েন্দা সংস্থার এক বড় কর্তা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন যে সোনা চালান হয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসে, তার খুব সামান্য একটা অংশই শেষ পর্যন্ত ধরতে পারে গোয়েন্দা এবং পুলিশ। এই ব্যবসা অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করতেন বাংলাদেশের অংশে আনোয়ারুল আজীম। এমনটাই পশ্চিমবঙ্গ এবং কেন্দ্রের গোয়েন্দারা সে সময় জানিয়েছিলেন।

আনোয়ারুল আজীম খুনের ঘটনায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া অন্যতম অভিযুক্ত বাংলাদেশি নাগরিক সিয়াম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় আনোয়ারুলকে খুন করে, দেহ টুকরা টুকরা করে তা নষ্ট করার কাজে যুক্ত ছিলেন তিনি। নিউ টাউনের বহুতল আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেন—যেখানে আনোয়ারুলকে হত্যা করা হয় বলে মনে করা হচ্ছে—তার যে সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসে তাতেও সিয়ামকে দেখা যায়।

একজন মুখে রুমাল চেপে ধরেন, হাত বাঁধেন অন্যজন

সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক অভিযুক্ত পেশায় কসাই জিহাদ ধারালো অস্ত্র দিয়ে আনোয়ারুলের শরীর থেকে মাংস আলাদা করে সেগুলোকে বড় প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে। পরে লাশের টুকরো পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার ভাঙ্গড় ব্লকের কৃষ্ণমাটি খাল এলাকায় ফেলা হয়। জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনটাই জানতে পারেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। পরবর্তী সময়ে ওই খালসংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু হাড় উদ্ধার করে সিআইডি। সেই সব দেহাবশেষ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।

সঞ্জীবা গার্ডেনের ওই আবাসনের সেপটিক ট্যাংক থেকেও উদ্ধার করা হয় প্রায় ৪ কেজি বিকৃত মাংস। উদ্ধার হওয়া মাংস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে। দেহের সেই সব অংশের সঙ্গে তাঁর কন্যার ডিএনএ মিলিয়ে দেখার উদ্দেশ্যেই ডরিনকে কলকাতায় আনা হয়।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দিল পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি

ওই মামলার তদন্ত করতে কলকাতা এসেছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত উপকমিশনার  মোহাম্মদ হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল। সঞ্জীবা গার্ডেন, বাগজোলা খালসহ বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনের পাশাপাশি দফায় দফায় সিআইডি কর্মকর্তাদের তাঁরা বৈঠকও করেছিলেন।

এদিকে গত ২৩ মে জিহাদ হাওলাদার এবং ৭ জুন সিয়াম হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর আগস্ট মাসে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত জেলা আদালতে প্রায় ১২০০ পাতার চার্জশিট জমা পড়ে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ), ৩০২ (অপরাধমূলক নরহত্যা), ২০১ (তথ্য প্রমাণ নষ্ট) এবং ৩৪ (সংঘবদ্ধ ভাবে অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করা) এবং ১৪ ফরেনার্স আইনে মামলা দেওয়া হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category