• শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন

রাজনীতি-অর্থনীতির দুর্গতি কাটাতে নির্বাচন ছাড়া গতি নেই

Reporter Name / ২০ Time View
Update : সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

-রিন্টু আনোয়ার

বহুল আলোচিত গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া তার ভাষণে বলেন, ‘আমাদের গুরুদায়িত্ব হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। আমি ঘোষণা করেছি, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সব প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ পাশাপাশি তিনি আরো বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে‌র ভোটগ্রহণের দিনই একইসঙ্গে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটে চারটি বিষয়ে হ্যাঁ/না ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
ভাষণের আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশের বিষয়টি চূড়ান্ত হলে এরই মধ্যে এই আদেশে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তবে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার সর্বশেষ ভাষণেও সব চেয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয় ছিল নির্বাচন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের সারকথাও নির্বাচন। সম্প্রতি তিনি এক ভারচুয়াল বক্তব্যে, সতর্কবাণী উচ্চারণ করে সরকারকে বলেছেন, কারো দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই সরকারের কাজ নয়। নির্বাচন অনুষ্ঠানই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কর্তব্য। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর কথার মধ্যে, কিছু-যদি-তবে-কিন্তু থাকলেও আসল কথা নির্বাচন। সেনাসদরের সর্বশেষ ব্রিফিংয়েও জানানো হয়েছে, নির্বাচনী কাজে সরকারকে যাবতীয় সহায়তায় প্রস্তুত সেনাবাহিনী। আর সাধারণ মানুষ তো নির্বাচনের জন্য উম্মুখ হয়েই আছে। দৃশ্যত নির্বাচনমুখী সবাই। যে যা করুক-বলুক ‘নির্বাচন হবেই’-এমন সাফকথা আছে সরকারের ওপর মহল থেকে। নির্বাচন কমিশনও তাদের প্রস্তুতির কথা জানান দিচ্ছে নিয়মিত। সংস্কার দরকার। বিচারও লাগবে। সনদ, গণভোট, উচ্চকক্ষ-নিম্নকক্ষ ইত্যাদির একটিও বাদ দেয়া যাবে না। কিন্তু কোনোটিকেই নির্বাচনের সাথে মেলানো কাম্য নয়। এটা আগে, সেটা পরে বা ওইটা ছাড়া নির্বাচন নয়- এমন গো ধরাও অনাকাঙ্খিত।
টানা ১৫ বছর শাসন-শোষণের পর আওয়ামী লীগের বিদায় জনমনে স্বস্তি এনেছে। মানুষের চাওয়াপাওয়ার একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার সে জায়গাটায় আছে। যারপরনাই বাংলাদেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে একটা নির্বাচনের জন্য। অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রণমূলক নির্বাচন উপহার দেবে সে আশায় বুক বেঁধে আছে গোটা জাতি। নির্বাচনের জন্য সাধারণ মানুষ সরকার ঘোষিত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায় না। তারা দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়।
কেবল ক্ষমতা বদলের জন্য নয়, ব্যবসা-বিনিয়োগ, আইনশৃঙ্খলা, সামাজিক স্থিতাবস্থা সব কিছুর জন্যই নির্বাচনের বিকল্প নেই। হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বীর জনতার গণ অভ্যুত্থানে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় পর দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। এ সরকার অনেক কিছুই পারছে না সত্য। এর মূল কারণ সরকারটি অনির্বাচিত, অস্থায়ী, অন্তর্বর্র্তী। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য চাই সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার। রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকের বাইরে সচেতন সাধারণ মানুষ চায় দ্রুত নির্বাচন। বিশাল এ জনগোষ্ঠী বলছে, গত ১৫ বছরে ভোটাধিকার খর্ব হয়েছে। বিগত সময়ের নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে, জালভোট, কেন্দ্র দখল আর খুনের ঘটনাও ছিল। নির্বাচিত সরকার না থাকায় দেশের ব্যবসাবাণিজ্য থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা কোনো কিছুই সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। সাধারণ ভোটাররা অপেক্ষা করছে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের। শিক্ষার্থী থেকে শ্রমজীবী, নতুন ভোটার থেকে আবালবৃদ্ধ-পেশাজীবী সবাই একটি ভোটের উৎসবের দিন গুনছে।
সাধারণ মানুষের দাবি সব সংকট সমাধানে সবার আগে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন। এর ক্ষেত্র যখন প্রস্তুত হচ্ছে- তখন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মাঝে অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভিন্ন অবস্থা তৈরির চেষ্টা লক্ষণীয়। তারা যেন মাঝেমধ্যেই ভুলে যান নিজ নিজ দলীয় সমর্থক নেতা-কর্মীদের বাইরেও অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় এক বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠী রয়েছে। এই লাখো কোটি অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা বাস্তবায়নে তাদের করার অনেক কিছু আছে। মাসের পর মাস ধরে দেশের জনগণ দেখে আসছিল অনেক রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকালের একটি উল্লেখযোগ্য সময় পার করে দিয়েছেন। রাজনীতি নিয়ে তাদের অনেক কথা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পাকা কথাও হয়েছে। কিন্তু, তাদের কারো কারো কথায় মাঝে মধ্যেই বাগড়া বাধছে। কথার বাগড়ায় নির্বাচন নিয়েও সংশয় বেধে যাচ্ছে।
সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচন বানচাল করার যে দুরভিসন্ধি নিয়ে পতিত স্বৈরাচার ও দেশী-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা তৎপর, রাজনীতিবিধদের মতভেদ আর বিপরীত মুখি অবস্থানের কারণে সেটা গতি পাচ্ছে। একথা নতুন করে উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না,জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে উঠেছিল। মাত্র ১৫ মাসের মধ্যে সেই ঐক্যে বিরাট ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এই ফাটল সৃষ্টির জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন কেউ কেউ।
রাজনীতির সমান্তরালে অর্থনীতিও তো রয়েছে। কিন্তু সেদিকটা প্রায়ই অগ্রাহ্য থাকছে। গত কয়েক মাসে রপ্তানি খাতেও নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশের ব্যবসায়ী সমাজ এবং বিদেশে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীরাও বলছেন, দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে প্রয়োজন জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি স্থিতিশীল সরকার। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নানা শর্ত দিয়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করতে চাইছে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির অর্থ একদিকে নির্বাচন না করেই রাষ্ট্রযন্ত্রে খবরদারির সুযোগ গ্রহণ, অপরদিকে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের পথ সুগম করা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে পলাতক স্বৈরাচারীর সহযোগীরা গত কয়েকদিন খোদ রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় যেভাবে আগুনসন্ত্রাস চালিয়েছে- ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির করণীয় সম্পর্কে এটি একটি সতর্ক বার্তা হতে পারে। ফলে ব্যবসাবাণিজ্যে বিনিয়োগে স্থবিরতা বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছেন। দেশিবিদেশি কোনো বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। সবাই হাত গুটিয়ে বসে আছেন। দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসাবাণিজ্যে স্থিতিশীলতা আসবে না, তা আর বলার অপেক্ষা রাখছে না। নির্বাচিত সরকার না থাকায় বায়াররা আমাদের এখানে অর্ডার করতে চান না। এজন্য আমাদের প্রায় ২৫ শতাংশের বেশি অর্ডার অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছে। নির্বাচিত সরকার না থাকায় প্রশাসন ও কাস্টমসে নানান সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় রাজনৈতিক বিভিন্ন ছোটবড় দল এখন ঝুট ব্যবসা নিয়ে কারখানায় গিয়ে সমস্যা তৈরি করে। চোখের সামনেই চলছে চাঁদাবাজি-রাহাজানি। চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। চাঁদাবাজিতে বাড়ছে পণ্যমূল্য। আগের মতোই পণ্য ওঠাতে-নামাতে চাঁদা দিতে হয়। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও চাঁদাবাজদের সঙ্গে বেশ দহরম-মহরম পরিলক্ষিত হচ্ছে।ফলে এর প্রভাব পড়ছে পণ্যমূল্যে। সাপ্লাই চেইনে ব্যাঘাতের কারণে পণ্যের দাম বাড়লেও অভিযান চালানো হয় কেবল পাইকারি ও খুচরা বাজারে। তারওপর সাধারণ ব্যবসায়ীদের ওপর করপোরেট ব্যবসায়ীরা রাহুর মতো বসে আছে, শোষণ করছে।
সামগ্রীকভাবে তা অর্থনীতিতে সঙ্কট বাড়াচ্ছে। আসছে না নতুন বিনিয়োগ। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে হাহাকার। চাপে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তারতম্য দেখা গেছে চাহিদা ও ভোগে। ফলে গতি হারিয়েছে অর্থনীতি। যার প্রভাব পড়েছে দেশের রাজস্ব আয়েও। এবার ঠিকমতো কর দিতে পারছেন না করদাতারা। যাঁরা এবার বাধ্যতামূলক আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন, তাঁদের শতকরা ৮৮ ভাগই দিয়েছেন ‘শূন্য কর’। সূত্র মতে,গত ১৪ মাসে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে মোট ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। ফলে বেকার হয়ে গেছেন প্রায় এক লাখ ১৯ হাজার ৮৪২ জন শ্রমিক। পোশাক খাত ছাড়াও বিগত সময়ে আরো অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কর্মহীন হয়েছেন অনেক মানুষ। তাঁদের মধ্যে কর্মকর্তা পর্যায়ের অনেকেরই ছিল করযোগ্য আয়। ফলে যে ব্যক্তি আগে কর দিতেন, এখন তিনিই শূন্য কর দিচ্ছেন। অবশ্য শুধু যে করখানার কর্মকর্তারাই চাকরি হারানোর কারণে কর দিতে পারছেন না তা নয়; ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দার কারণেও অনেক করদাতার আয় কমে গেছে বলে জানা যায়। ফলে তাঁরাও কাঙ্খিত কর দিতে পারছেন না।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থ ব্যয় হয়েছে মাত্র পাঁচ শতাংশ; বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, এলসি নেই, নতুন করে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না, শ্রমিক অসন্তোষসহ পরিবেশ না থাকায় ছোট-বড় শত শত শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আরো কিছু বন্ধের পথে। অনেক কারখানায় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। নেই উৎপাদন, বেকার হয়েছেন লাখো শ্রমিক।
দ্রুত জাতীয় নির্বাচনে এর একটা ফয়সালা আসতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়বে কিনা, সে বিষয়টি আগামী ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্তভাবে জানা যাবে। এক বছরের বেশি সময় পার হলেও অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত স্থিতিশীলতা আসেনি। মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এখনও অনেক বেশি, যা অর্থনীতির দুর্বলতা প্রকাশ করে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হওয়ার জন্য দায়ী দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি, অধিক বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের সংকট এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি।
অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ও বিনিয়োগে মন্দার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এ থেকে উত্তোরণে কার্যকর কোন পদক্ষেপ না থাকায় দেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিনের উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অতিদারিদ্র্য ও বেকারত্ব বাড়ায় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সংকট আরো বেড়েছে। যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অন্তরায়। যদিও চলতি অর্থবছরকে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পরিবর্তে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বছর হিসেবে ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত এক বছরে দেশের অর্থনীতি আরো সংকুচিত হয়েছে। এছাড়া আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে অন্তত এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং জাতিসংঘের শিশু তহবিল ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। এবার এই তিন সংস্থার সঙ্গে একমত পোষণ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলেছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের গতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে হলে দারিদ্র্য কমাতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ।
এ ধরনের পরিস্থিতি সামনে আসলে বাড়তি জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে চলমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি প্রতিবেদনেও অর্থনীতিতে ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে- আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরে সৃষ্ট রাজনৈতিক ঘটনাবলি ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা। সামগ্রীক এ পরিস্থিতিতি বিবেচনায় ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারীসহ অর্থনীতিবিদদেরও একই কথা। নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হবে না, অর্থনীতিতেও গতি ফিরবে না।
বাংলাদেশের মানুষের এই মুহূর্তের প্রধান চাহিদা একটা উৎসবমুখর নির্বাচন। সবাই ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। দেশে যে সমস্যাগুলো পুঞ্জীভূত হয়েছে, তার সমাধান নির্বাচিত সরকারই দিতে পারবে।
আশা করি, রাজনীতিবিধরা রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করবেন। মনে রাখতে হবে, এ মুহূর্তে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সমস্যার একমাত্র সমাধান নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। এর কোনো বিকল্প নেই।
……

লেখক ঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট
rintu109@gmail.com


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category