-রিন্টু আনোয়ার
শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক অপরাধের কয়েকটির রায় হয়েছে। তা কার্যকর করা নিয়েই এখন নানা কথা। শেখ হাসিনা চম্পটে আছেন, ভারত তাকে দিচ্ছে না, দেবে না, রায় দৃষ্টে ফাঁসি দেয়া যাচ্ছে না-তার মানে তিনি বেঁচে গেছেন? তার রাজনৈতিক মৃত্যু এরইমধ্যে হয়েই গেছে। বেঁচে আছে দেহটা। এই বেঁচে থাকা তিনি বা তার দলের কাছে লজ্জার না গৌরবের? তবে, জাতি হিসেবে এটা দুর্ভাগ্যের যে এই মাটিতে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে বলে। আবার গৌরবের এ কারণে যে, এ মাটির মানুষই সেই অপরাধী চক্রকে দেশ ছাড়া করেছে। পালানো বা দেশ ছাড়ার পর অপরাধকারীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব বর্তে জাতির ওপর।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো ছিচকে চুরি বা যেনতেন হত্যা কিংবা নির্যাতনের নয়। এগুলোর বেশিরভাগই মানবতাবিরোধী অপরাধ। তা কেবল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময়ই নয়, টানা জবরদস্তিমূলক শাসনামলের পুরোটা সময় গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ জঘন্য নানা অপরাধ তিনি করেছেন। কিছু করেছেন নিজে, কিছু পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, বাকিগুলো সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে। পরিকল্পিত নির্যাতন, বিনাশ, গায়েবি মামলার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বাইরে লুট-চুরি-চামারিসহ দেশবিরোধী, সমাজবিরোধী হেন অপকর্ম নেই যা না করেছেন। আশঙ্কা ছিল তা চলবেই, চলতেই থাকবে, কমপক্ষে হলেও ২০৪১ সাল বা তার স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত। বাস্তবতা হলো, একটু দেরিতে হলেও এর পরিণতিতে তাকে দেশ ছেড়ে প্রাণ বাঁচাতে হয়েছে। এ গণ-অভ্যুত্থান এক অভাবনীয় উদাহরণ হয়ে থাকবে পৃথিবীর ইতিহাসে। কোনো রকম মারণাস্ত্র ছাড়া রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে শুধু নৈতিক শক্তিকে পুঁজি করে নেমে যাওয়া মানুষ সেই ইতিহাসের জন্মদাতা।
প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই রায় কি শেষ পর্যন্ত প্রতীকী হয়েই থাকবে। কারণ ভারত তাকে বাংলাদেশের কাছে দিচ্ছে না। তাকে দেশে এনে রায় কার্যকর করা যাবে, এই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ভারত তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আশ্রয় ও নিরাপত্তা দেবে। প্রশ্রয়ও দেবে। সেখানে থেকে সামনের দিনগুলোতেও উসকানি দিয়েই যাবেন তিনি। যেমনটি রায় ঘোষণার আগের দিনও গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে মারাত্মক হুমকি দিয়েছেন। সামনে আরো দেবেন। গণ্ডগোল পাকাবেন। শেখ হাসিনার বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কিছু প্রশ্ন তৈরি হবে, তা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্ব মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো কোনো অপরাধে কারও অনুপস্থিতিতে বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বরখেলাপ হিসেবে দেখে তারা। রোম স্ট্যাটিউটেও কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিশেষ পরিস্থিতিতে অভিযোগ নিশ্চিতকরণের শুনানি কারও অনুপস্থিতিতে হতে পারে, কিন্তু মূল বিচার এবং শুনানি অভিযুক্তের অনুপস্থিতিতে হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আবার জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্টেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় বাংলাদেশে উচ্চমাত্রায় মানবতাবিরোধী অপরাধের বর্ণনা আছে। যেসব অপরাধের সিদ্ধান্ত, নেতৃত্ব, পরিচালনা এবং সমন্বয়ের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাই ছিলেন প্রধান ব্যক্তি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং’ প্রতিবেদনে ১ হাজার ৪০০-র মতো ছাত্র-জনতা হত্যার তথ্য এসেছে। ৩০ হাজারের মতো মানুষ আহত; যাঁদের অনেকেই চোখ হারিয়েছেন, হাত-পা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এসব আহত-নিহতের পরিবারের সদস্যদেরও ক্ষোভ রয়েছে আওয়ামী লীগের ওপর। গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের এ দাগ মুছে যাবে, এটা মনে করার কারণ নেই। কিছু বিদেশি, আওয়ামী লীগ বা দলটির অন্ধ হিতাকাঙ্খী যে যা-ই বলুক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় খুবই অর্থবহ। তারা যতই অবৈধ রায়ই বলুন তা বদলাতে হলে তাদেরকে ক্ষমতায় আসতে হবে। সেই দৃষ্টে নৈতিক, রাজনৈতিক বিবেচনায় তার মৃত্যু হয়ে গেছে। দল হিসেবে আন্তর্জাতিক আদালতে আওয়ামী লীগের বিচার হওয়ার কথা আলোচনায় আছে। এরইমধ্যে কার্যক্রম স্থগিত হয়েই আছে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। সরকার স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, আগামী নির্বাচনে দলটি অংশ নিতে পারবে না। শীর্ষ নেতৃত্বের বড় অংশ পলাতক বা বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে কারাগারে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কোন পথে—সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। কিন্তু দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব অনমনীয়, তাঁদের মধ্যে অনুশোচনা নেই। তাই বলে বাংলাদেশে ফিরে এসে শেখ হাসিনা আবার মায়াকান্না করে আবেদন গড়বেন, দল চালাবেন, আপাতত সেই লক্ষণ নেই। পারবেন অডিও-ভিডিওতে পরাজিত চেহারা দেখাতে। ভ্যাংচি দিয়ে নানা উসকানি ছড়াতে। তিনিসহ সেই সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতরা কোনোভাবে তাঁদের দায় স্বীকারের আশপাশেও যাবেন না, হাজারো শহীদের বদদোয়া নেবেন-ভাবনমুনায় তা পরিস্কার।
এই রায়ে শহীদ পরিবারগুলোতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। তবু সান্ত্বনা এতোটুকু যে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখানে মূল হুকুমদাতা হিসেবে শেখ হাসিনা কিংবা আসাদুজ্জামান খান কামালদের বাইরে মাঠপর্যায়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো আরো অনেকে ছিলেন। শেখ হাসিনার বিচারের রায়ের মাধ্যমে সে পথে একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পার হয়েছে। আবু সাঈদ-মুগ্ধদের ত্যাগকে অর্থপূর্ণ করতে যেতে হবে আরও অনেকটা পথ। কারণ, আরও অনেক শহীদ পরিবার এখনো বিচারের অপেক্ষায় দিন গুনছে। হাসিনা আমলের অন্যতম আতঙ্কের নাম ছিল গুম। বিরুদ্ধ মত দমনের এই হাতিয়ার গোটা সমাজকে একটা দমবন্ধ করা অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল। অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে গুমবিষয়ক কমিশনের নেতৃত্বে অনেক রোমহর্ষ নির্যাতনের বর্ণনা সামনে এসেছে। নানা সংশয়ের পরও বিচার শুরু হয়েছে গুমে জড়িত ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাসহ অন্যদের। এ বিচারপ্রক্রিয়ার সুষ্ঠু সমাপ্তি ভবিষ্যতে গুমের দরজা বন্ধ করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই হত্যার মামলার নামে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে বিনা বিচারে কারাগারে আটকে রাখার বাস্তবতার কথা মনে রাখা প্রয়োজন। অজ্ঞাতনামা আসামির নামে আওয়ামী আমলে যে মামলা–বাণিজ্য চলেছে, অভ্যুত্থান–পরিবর্তী বাংলাদেশেও তা থেকে মুক্তি মেলেনি। ভুক্তভোগীর রাজনৈতিক পরিচয় পাল্টেছে মাত্র। জুলাই শহীদ কিংবা আহতের পরিবার ন্যায়বিচার চেয়েছে সব সময়, কিন্তু তাদের অপরিসীম ক্ষতিকে পুঁজি করে গুটিকয়ের পকেট ভারী করতে চায়নি কখনো। এর ওপর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মতো নিবর্তনমূলক আইনের প্রয়োগও থেমে নেই।
বিরুদ্ধ মত দমনের এসব হাতিয়ার মুক্ত ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে বড় বাধা হয়ে রয়ে গেছে আমাদের আইনি কাঠামোতে, সেদিকেও নজর দেওয়া জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় শেষ দিকে। নানা সংশয় আর ঘাত-প্রতিঘাতের পর এখন দেশ অনেকটাই নির্বাচনমুখী। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর গত কিছুদিনে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা ও সাবেক মন্ত্রী যে মনোভাব দেখাচ্ছেন আগামী নির্বাচন তাদের ছাড়া হবে না। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পতন ঘটানো ছাড়া এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয় বলেও মনে করেন বিদেশে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা। আর সেটা সম্ভব না হলে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতে না পারে, সেই চেষ্টা করবে দলটি। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কোন পথে—সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। কিন্তু দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব অনমনীয়, তাঁদের মধ্যে অনুশোচনা নেই। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে স্বল্প সময়ের জন্য ঝটিকা মিছিল করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে ঘিরে অনলাইনে ডাক দেওয়া ‘লকডাউন’, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির আড়ালে চোরাগোপ্তা ককটেল নিক্ষেপ ও গাড়ি পুড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ বলছে পুলিশ। যদিও তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এসব কর্মসূচিতে দলটির নেতা-কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে নিয়মিত অনলাইনে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছেন শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং কেন্দ্রীয় নেতারা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পেছনে বিদেশি শক্তির হাত থাকার কথা শুরু থেকে বলে আসছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু সম্প্রতি ভারতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাঁর সরকার পতনে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো বিদেশি শক্তি ‘সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত’ ছিল না বলে জানিয়েছে। দলটির ভেতরে ‘রিফাইন্ড’ বা ‘পরিশুদ্ধ’ হওয়ার কথার বিপরীতে সোজা উত্তর, ভুল করলেই না রিফাইন্ড বা শুদ্ধ-পরিশুদ্ধ হওয়ার প্রশ্ন। তাই সে বিষয়ে কাছেকিনারেও না গিয়ে আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র কিংবা অন্য দলের হয়ে আওয়ামী লীগের কারও কারও প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষণ রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
অবশ্য আওয়ামী লীগ সনামে-সরূপে আসতে পারবে কি-না সেটা আরেক প্রশ্ন। তবে, লুকোচুরি বা গুপ্ত পথে না গিয়ে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার দুটি পথ খোলা আছে। প্রথমত, যেভাবে তারা বিদায় হয়েছে, সেভাবে যদি আরেকটি পাল্টা গণ-অভ্যুত্থান ঘটাতে পারে। দ্বিতীয়ত: জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নতুন করে মাঠে নামা। এ দুয়ের কোনোটারই নমুনা আছে বলে মনে করেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এ দিকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে সংযত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ঘোষিত রায়ের বিষয়টি অবগত আছে ভারত। নিকট প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশে শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি ও স্থিতিশীলতাসহ বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থ সুরক্ষায় ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এ লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের সব অংশীজনের সাথে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকবে নয়াদিল্লি।
অথচ দলীয় প্রধানসহ কেন্দ্রীয় বহু নেতারা পালিয়ে আশ্রয় নিয়ে রেখেছে ভারত। পালাতে না পারা অনেকেই এখন কারাগারে। কেন্দ্রীয় নেতাদের বাইরে সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের কাউকে প্রকাশ্যে দেখা যায় না এখন। পলাতক নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেড়েছে। বিশেষ করে ভারতে থাকা নেতারা দলীয় সরকারের পতন ও দলের বর্তমান অবস্থার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছেন। দেশে থাকা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঠে নামাতে যে টাকা দরকার; তা কারা দেবেন, সেটা নিয়েও বিভেদ আছে। খারাপ এ সময়ে নানা উস্কানিতে ফেলে বিতর্কিত নেতাদের মার খাইয়ে সুখ নেয়ার একটি গ্রুপও তৈরি হয়েছে। যা আওয়ামী লীগের অবশিষ্ট মৃত্যু নিশ্চিত করছে।
…
লেখক ঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট
rintu108@gmail.com