• শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৬ অপরাহ্ন

সাবরেজিস্ট্রারের মাসে ৩০ লাখ টাকা ঘুস আদায়

Reporter Name / ৯৬ Time View
Update : সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৪

কুমিল্লার চান্দিনায় পদে পদে ঘুস আদায় করেন সাবরেজিস্ট্রার নিরত ভরণ বিশ্বাস। মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ঘুস নেন তিনি। এক্ষেত্রে সেবাপ্রত্যাশীদের নানাভাবে জিম্মি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, অফিসের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারী, দালাল ও দলিল লেখকদের ব্যবহার করে ঘুস নেন সাবরেজিস্ট্রার। প্রতি দলিল থেকে তিনি সরকারি ফির বাইরে সেরেস্তার নামে নেন ২ হাজার টাকা। প্রতিটি নকলের স্বাক্ষরে ২শ টাকা এবং টিপসই বাবদ নেন ১শ টাকা। ত্রুটিযুক্ত, নামের আংশিক ভুল, বণ্টননামা, দানপত্র, হেবা ঘোষণা, মর্টগেজ ইত্যাদি দলিল থেকে আদায় করেন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

জানা গেছে, চান্দিনা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে প্রতি মাসে গড়ে ৫ শতাধিক দলিল সম্পাদন হয়। সাবরেজিস্ট্রার তার অফিসের পিয়ন রবিউল হোসেন ও ব্যক্তিগত সহকারী কাউছার আহমেদের মাধ্যমে সেরেস্তার নামে প্রতি দলিল থেকে অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা নেন। প্রতি দলিলের নকল স্বাক্ষরে ২শ ও টিপসই বাবদ ১শ টাকাও তাদের মাধ্যমে আদায় করেন। এই তিন খাত থেকেই তিনি মাসে গড়ে পান ১০-১২ লাখ টাকা। এদিকে ৫ শতাধিক দলিলের মধ্যে তিনি খুঁজে খুঁজে অন্তত দেড়শ দলিলে নানা ধরনের ত্রুটি বের করেন। কখনো কখনো তার চেয়েও বেশিসংখ্যক ত্রুটি পাওয়া যায়। কারণ অধিকাংশ দলিলের ক্ষেত্রেই দাতা-গ্রহীতার কাগজে, নাম-ঠিকানায় খুঁটিনাটি ত্রুটি থাকে। অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম, বাবা-মায়ের নামে ভুল থাকে। গ্রামের নামের বানানে ভুল থাকে। দলিল সম্পাদন করতে গেলে দাতা-গ্রহীতাকে এর মাশুল দিতে হয়। এসব ত্রুটিপূর্ণ দলিল সম্পাদনে ২০-২৫ হাজার টাকা ঘুস নেওয়া হয়। কখনো কখনো এর কয়েক গুণ বেশি টাকাও আদায় করা হয়। অর্থাৎ ত্রুটিযুক্ত দলিল খাত থেকে সাবরেজিস্ট্রার মাসে ৩০-৩২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

সূত্র জানায়, সাবরেজিস্ট্রার তার অফিস সহকারী, মোহরার ও পিয়নসহ সংশ্লিষ্টদের ভাগবাটোয়ারা দেওয়ার পরও মাসে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা পান। সেবাপ্রত্যাশীরা জানান, ৫ আগস্টের আগে এই সাবরেজিস্ট্রার এর চেয়েও কয়েক গুণ বেশি হারে ঘুস আদায় করতেন।

উপজেলার মাইজখার এলাকার দলিল গ্রহীতা তফাজ্জল হোসেন বলেন, ৩৫ শতাংশ জমির দলিল করতে গিয়ে সাবরেজিস্ট্রার অফিসে পদে পদে ঘুস দিতে হয়েছে। প্রথমে দলিল লেখক, এরপর পিএস কাউছারের কাছে সেরেস্তার নামে ঘুস দিলাম। নকলের জন্য দিলাম। এরপর টিপসই দিতে পিয়ন রবিউলকে দিলাম ১শ টাকা। পরে সাবরেজিস্ট্রার ত্রুটির কথা বলে দলিল আটকে দিলেন। আলোচনা করে পিয়নের মাধ্যমে দিলাম ২০ হাজার টাকা। এরপর দলিল সম্পাদন হয়েছে।

মাধাইয়া এলাকার দলিল গ্রহীতা আব্দুল হামিদ বলেন, সেরেস্তার দুই হাজার টাকা ছাড়াও আরও তিন টেবিলে ২ হাজার টাকা ঘুস দিতে হয়েছে। এখানে তারা যত টাকা দাবি করে তত টাকাই দিতে হয়। আপিল করার কোনো সুযোগ নেই।

দলিল লেখক সমিতির কোষাধ্যক্ষ আশিকুর রহমান বলেন, আমাদের সাবরেজিস্ট্রার অত্যন্ত নম্র-ভদ্র একজন অফিসার। অনেক টাকা খরচ করে তিনি এখানে পোস্টিং নিয়েছেন। তাই আমাদের ওনার দিকে দেখতে হয়। সাবরেজিস্ট্রার ত্রুটিযুক্ত দলিল থেকে বেশি না প্রতি দলিলে ১৫-২০ হাজার টাকা করে নেন। প্রতি দলিলে সেরেস্তা নেন ২ হাজার টাকা। এর মধ্যে সমিতি পায় ৪শ টাকা। নকলের জন্য দেড় হাজার টাকা নেওয়া হলেও প্রতি স্বাক্ষরে তিনি সামান্য টাকা পান। আর টিপের জন্য ১শ টাকা এটা সবাই জানে।

আশিকুর রহমান বলেন, জেলার মধ্যে আমাদের অফিসেই দাতা-গ্রহীতা থেকে কম টাকা আদায় করা হয়। অন্যান্য উপজেলার সাবরেজিস্ট্রার অফিসগুলোতে এক ধরনের ডাকাতি হয়। আপনি আমাদের স্যারের বিরুদ্ধে কোনো নিউজ করার দরকার নেই।

ব্যক্তিগত সহকারী কাউছার আহমেদ বলেন, সাবরেজিস্ট্রার স্যার অত্যন্ত ভদ্র মানুষ। আমি স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী টুকিটাকি কাজগুলো করে থাকি। কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সেরেস্তাসহ বাকি বিষয়গুলো আমার জানা নেই।

অভিযোগ অস্বীকার করে সাবরেজিস্ট্রার নিরত ভরণ বিশ্বাস বলেন, আমি কোনো ধরনের ঘুসের সঙ্গে জড়িত নই। কেউ অভিযোগ করে থাকলে তা সঠিক নয়।

এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম বলেন, সরকারি ফির বাইরে অতিরিক্ত কোনো টাকা আদায় করা হলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, চান্দিনার সাবরেজিস্ট্রারের বিষয়ে যেসব তথ্য-উপাত্ত এসেছে তা যথাযথভাবে তদন্ত করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category