• সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
জাতিসংঘের বৈশ্বিক এআই উপদেষ্টা পরিষদ গঠন বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ম্যাচ কবে, কখন, কোথায় নুরের ওপর হামলা: পুলিশের ভূমিকা তদন্তে কমিটি করছে ডিএমপি সংস্কার না হলে নূরের পরিণতি আমাদের জন্যও অপেক্ষা করছে: হাসনাত ফিলিস্তিনি নেতাদের জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান আটকে দিলো যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে নুরকে বিদেশে পাঠানো হবে আট উপদেষ্টা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ভজঘট অথবা, আট উপদেষ্টা দুর্নীতির বিষয়টি থেকে গেল নিস্পত্তিহীন। ডাকসুতে সংসদ নির্বাচনের রিহার্সাল না অন্য কিছু অথবা দাবি আদায়ের নামে জনদুর্ভোগ। ‘মব ভায়োলেন্স’ থামাতে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয় সেনাবাহিনী: আইএসপিআর এবার আটা-ময়দা-ডালের দামও বাড়লো

১০টি পারমাণবিক বোমার রসদ সরিয়ে ফেলেছে ইরান

Reporter Name / ৪৯ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫

‘ফাঁকা মাঠে গোল’ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মিসৌরির হোয়াটম্যান ঘাঁটি থেকে টানা ১৮ ঘণ্টা উড়ে এসে ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা নিছক ‘পণ্ডশ্রম’। ১২৫ বিমানের লম্বা বহর নিয়ে বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমানের হামলা শুধুই ‘লোক দেখানো’। তার আগেই ইউরেনিয়াম উধাও। এক-দুইশ কেজি নয়-৪০৮.৬ কেজি ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছে খোদ মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। যা দিয়ে অন্তত ১০টি পারমাণবিক বোমা বানানো যায়। সোমবার এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই অভিযোগ তোলেন ভ্যান্স। এর আগে অবশ্য ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ বলেছিল (২১ জুন), আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে পারমাণবিক বোমা বানিয়ে ফেলবে ইরান। ইকোনমিক টাইমস। শনিবার ভোর রাতে মার্কিন হামলার আগে তোলা স্যাটেলাইট ছবিতেও সে প্রমাণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ছবিতে ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রের বাইরে ১৬টি ট্রাকের সারি দেখা গেছে যা পাহাড়ের ভেতর নির্মিত এবং বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য অরক্ষিত বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার হামলার সফলতা নিয়েও। যুক্তরাষ্ট্রের গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, হামলায় পারমাণবিক স্থাপনার কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এনডিটিভি। নিউইয়র্ক টাইমস।

হামলার মাত্র ৩ দিনের মাথায় পেন্টাগন এই নতুন তথ্য জানাচ্ছে। তবে হোয়াইট হাউজ গোয়েন্দাদের এই মূল্যায়নকে ‘সম্পূর্ণ ভুল’ বলে আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হেয় করার চেষ্টা। পেন্টাগনের গোয়েন্দা শাখা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি বা ডিআইএ প্রতিবেদনের প্রাথমিক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ এই হামলায় ধ্বংস হয়নি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা। পেন্টাগনের গোয়েন্দা শাখা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের সেন্ট্রিফিউজগুলো প্রায় অক্ষত রয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি মূলত স্থলভাগের অবকাঠামোতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এছাড়া ইরানের দুটি পারমাণবিক স্থাপনার প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে গেছে এবং কিছু অবকাঠামো ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, ভূগর্ভস্থ মূল স্থাপনাগুলো অনেকটাই অক্ষত রয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোকে বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে মাত্র। ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় শুরু করার বিষয়টি নির্ভর করবে দেশটির খনন এবং মেরামত করতে কত সময় নেয় তার ওপর।

গোয়েন্দা সূত্রগুলো বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে যে, হামলার আগেই ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুতের কিছু অংশ স্থানান্তরিত করেছিল। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ফোর্দোর পারমাণবিক স্থাপনার দুটি প্রবেশপথের আশপাশে ছয়টি নতুন গর্ত এবং ধুলোমাখা ধ্বংসস্তূপ। তবে স্যাটেলাইট ইমেজের সেই ছবিগুলো দেখে এটা বোঝা সম্ভব ছিল না যে ভূগর্ভস্থ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতখানি।

এদিকে ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদেহ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কারণে ইরানের স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতির জন্য ওয়াশিংটনকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তেহরান জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আল মায়াদিন টিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে খতিবজাদেহ জানিয়েছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলায় ইরানের নতাঞ্জ, ফোর্দো ও ইসফাহানের পারমাণবিক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর জন্য আমেরিকাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’

এরই মধ্যে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করতে একটি বিল পাশ করেছে ইরানের সংসদ। বিলে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া কোনো পরিদর্শক ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশ করতে পারবে না। বুধবার একথা নিশ্চিত করেছেন সংসদের মুখপাত্র আলীরেজা সালিমি। তিনি বলেছেন, সাধারণ ও নির্দিষ্ট উভয় ধারায় বিলটি অনুমোদন পেয়েছে। একই সঙ্গে, এই আইনের লঙ্ঘন করে আইএইএ কর্মীদের প্রবেশের অনুমতি দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

এদিকে, সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তার দেশ কখনোই ইরানের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক আক্রমণের জন্য নিজের ভূমি বা আকাশসীমা ব্যবহার হতে দেবে না। মঙ্গলবার ইরানের প্রধানমন্ত্রী মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনালাপের সময় এই আশ্বস দেন তিনি। ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ইসরাইলি জায়নবাদী শাসকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং আক্রমণ বন্ধে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছি।’ যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলারও নিন্দা জানিয়েছেন সৌদির ক্রাউন প্রিন্স। অন্যদিকে, পেজেশকিয়ান যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, ‘ইরানের সার্বভৌমত্বে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপের জবাবে আমরা কাতারে থাকা তাদের ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছি।’ পেজেশকিয়ান আরও বলেছেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক কাঠামোর ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধানে সদা প্রস্তুত এবং আমরা কখনোই আমাদের ন্যায্য অধিকার ছাড়িয়ে কিছু চাই না।’ তিনি সৌদি আরবের স্পষ্ট অবস্থান এবং সাম্প্রতিক জায়নবাদী হামলার বিরুদ্ধে তাদের সমর্থনকে বিশেষভাবে প্রশংসাও করেছেন।

ইরানে হামলাকে হিরোশিমায় পরমাণু বোমা ফেলার সঙ্গে তুলনা করলেন ট্রাম্প : ইরানে মার্কিন হামলাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমায় পরমাণু বোমার ফেলার সঙ্গে তুলনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা ফেলার মধ্য দিয়ে যেভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত হয়েছিল, সেভাবেই ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমানের হামলা ইসরাইল-ইরান যুদ্ধের ইতি টেনেছে। বুধবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘তারা (ইরান) এই কর্মসূচিতে ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, কিন্তু সফল হতে পারেনি। আর এখন আমরা ওদের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই চলছি। কিন্তু যদি ওই হামলা সফল না হতো? ওই আঘাতই যুদ্ধ শেষ করেছে। হিরোশিমার উদাহরণ আমি দিতে চাই না, নাগাসাকিরও না… কিন্তু সেটাই তো ওই যুদ্ধের ইতি টেনেছিল। একদম তেমনই, এই হামলাই এই যুদ্ধের শেষ টেনে দিয়েছে।’ আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হবে বলেও জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের বলছি, আমরা আগামী সপ্তাহে ইরানের সঙ্গে কথা বলব। একটা চুক্তিও হতে পারে।’ তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে আবার আলোচনা শুরুর ব্যাপারে তিনি খুব একটা আগ্রহী নন, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়ে গেছে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে তারা (ইরান-ইসরাইল) যুদ্ধ করেছিল, আর এখন যুদ্ধ শেষ।’

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি দুপক্ষের সঙ্গেই কথা বলেছি, ওরা দুপক্ষই ক্লান্ত, শ্রান্ত… কিন্তু এটা কি আবার শুরু হতে পারে? হয়তো একদিন হতে পারে। এমনকি খুব শিগগিরই শুরু হতে পারে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category