• রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন

১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকে আমানত কমেছে

Reporter Name / ১১৪ Time View
Update : সোমবার, ২৭ মে, ২০২৪

ব্যাংক খাতে এক মাসের ব্যবধানে আমানত কমেছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে আমানতের স্থিতি ছিল ১৭ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারিতে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা। আমানতকারীদের সঞ্চয়ী হিসাবে জমা অর্থের বিপরীতে অবণ্টিত সুদ ও মুনাফাসহ এ হিসাব করা হয়েছে।

এদিকে অবণ্টিত সুদ ও মুনাফা বাদ দিলে এক মাসে আমানত কমেছে ৯ হাজার কোটি টাকা। তবে অবণ্টিত সুদ ও মুনাফা বাদ দিয়ে করা হিসাবে জানুয়ারি থেকে মার্চ এই ৩ মাসে আমানত বেড়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। কার্যত অবণ্টিত সুদ ও মুনাফা বাদ দিয়ে করা হিসাবে আমানতের স্থিতি এখনো ১৭ লাখের ঘর স্পর্শ করতে পারেনি। সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুটি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

সূত্র জানায়, ডিসেম্বরে সাধারণত ব্যাংক খাতে আমানত বাড়ে। কারণ ওই সময়ে ব্যাংকগুলোকে আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হয়। এর ওপর ভিত্তি করে ব্যাংকারদের সামগ্রিক কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন করা হয়। ডিসেম্বরের পর আবার ওইসব আমানতের একটি অংশ তুলে নেওয়া হয়। ফলে জানুয়ারিতে আমানত আবার কমে যায়। এছাড়া ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে সুদ বা মুনাফা হিসাব করে একটি অ্যাকাউন্টে ডিসেম্বর পর্যন্ত জমা রাখে। জানুয়ারি থেকে ওইসব মুনাফা গ্রাহকদের হিসাবে স্থানান্তর করতে থাকে। ওইসব মুনাফা বা সুদ গ্রাহকের আমানতের অংশ হিসাবে প্রদর্শন করা হয়। কিন্তু অনেক গ্রাহক তা তুলে নেন। এতেও আমানতের স্থিতি কমে যায়। তবে আমানতের এ স্থিতি ৩ মাসের মধ্যেই আবার বেড়ে আগের অবস্থাকে অতিক্রম করে। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। জানুয়ারি থেকে মার্চ-৩ মাস পার হলেও আমানতের স্থিতি অবণ্টিত সুদ ও মুনাফাসহ হিসাবের কাছকাছি পৌঁছেনি। ওই হিসাব থেকে এখনো ঘাটতি রয়েছে ৯৪ হাজার কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকে নিট আমানতের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ বেড়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চে আমানত বেড়েছিল ৫২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ৮১ হাজার কোটি টাকা। তবে আমানতের চেয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধির হার বেশি। গত অর্থবছরের মার্চে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। মার্চে তা হয়েছে ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ। দুই অর্থবছরের একই সময়ে আমানতের চেয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি বেশি ছিল। যে কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্যের চাপ কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলো আমদানি দায় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কেনার কারণে টাকার একটি অংশ আটকে যাচ্ছে। তারল্যে চাপ বাড়ার এটিও একটি কারণ। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সহজ শর্তে তারল্য সহায়তা দিয়ে বাজার স্থিতিশীল রেখেছে। তারল্য কমার আরও একটি কারণ হিসাবে তিনি জানান, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি। এ নীতির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অপ্রয়োজনীয় বা অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহৃত তারল্য তুলে নিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীদের সঞ্চয়ী হিসাবে জমা অর্থের বিপরীতে অবণ্টিত সুদ ও মুনাফাসহ আমানতের স্থিতি ছিল ১৭ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারিতে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকায়। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি এই ১ মাসে সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোতে আমানত কমেছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। বিশেষ করে ডিসেম্বরে অনেক সঞ্চয়ী হিসাবের মেয়াদ পূর্তি হয়েছে। এগুলোর একটি বড় অংশ গ্রাহকরা তুলে নিয়েছেন। এছাড়া ব্যাংক খাতে চলমান অস্থিরতার কারণে অনেক গ্রাহক টাকা তুলে নিয়েছেন। পাশাপাশি অনেক গ্রাহক তাদের মুনাফা বা সুদ বাবদ প্রাপ্ত অর্থও তুলে নিয়েছেন। এসব কারণে আলোচ্য হিসাবে আমানত বেশি কমেছে।

আমানতকারীদের অর্জিত অবণ্টিত সুদ ও মুনাফা বাদ দিলেও ডিসেম্বরের তুলনায় আমানত কমেছে। তবে গতি কিছুটা শ্লথ। ডিসেম্বরে আলোচ্য হিসাবে আমানতের স্থিতি ছিল ১৬ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারিতে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায়। এ হিসাবে আমানত কমেছে ৯ হাজার কোটি টাকা। এদিকে আমানতের সুদহার বাড়ানোর ফলে এর কিছু অংশ ব্যাংকে ফেরত এসেছে। যে কারণে ফেব্রুয়ারিতে আবার আমানত বেড়ে স্থিতি ১৬ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। মার্চে তা আরও কিছুটা বেড়ে ১৬ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য হিসাবে জানুয়ারি থেকে মার্চ এই ৩ মাসে আমানত বেড়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। তবে আমানত যে হারে বেড়েছে তার চেয়ে বেশি বেড়েছে ঋণ বিতরণ। গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চে ঋণ বিতরণ বেড়েছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে একই সময়ে আমানত বেড়েছিল মাত্র ৫২ হাজার কোটি টাকা। ঋণ ও আমানতের হিসাবে ঘাটতি ছিল ৯২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আমানত বেড়েছে ৮১ হাজার কোটি টাকা। ঋণ ও আমানতের হিসাবে ঘাটতি হচ্ছে ২৯ হাজার কোটি টাকা। পরপর দুই বছর আমানত ও ঋণের প্রবৃদ্ধির হিসাবে ঘাটতি হওয়ায় ব্যাংকে তারল্য সংকট বেড়েছে। এছাড়াও ব্যাংকগুলো ঋণ আদায় করতে পারছে না। অথচ ঋণ বিতরণ করেই যাচ্ছে। এতেও তারল্যে ঘাটতি বেড়েছে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category