• বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৪১ অপরাহ্ন

নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে চীন আরও গভীরভাবে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছে: মির্জা ফখরুল

Reporter Name / ৬৫ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫

নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে চীন আরও গভীরভাবে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

৫ দিনের চীন সফর শেষে দেশে ফেরার পরে আজ সোমবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব চীনের এই আগ্রহের কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘চীন আশা প্রকাশ করেছে যে, তারা নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে আরও গভীর দৃঢ়তা, আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সঙ্গে কাজ করবে।’

তিনি বলেন, ‘এক চীন নীতির প্রতি বিএনপি তার দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছে। সার্বিকভাবে এই সফরের মাধ্যমে আমরা এই দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও উন্নততর, আরও ঘনিষ্ঠতর করার সুযোগ পেয়েছি যা আগামীতে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরাতে চীনের মনোভাব কী প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘অত্যন্ত পজেটিভ দেখেছি। তারা নির্বাচিত সরকারের সাথে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে।”

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থান এবং তাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে চীনের সাথে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ স্বেচ্ছা এবং সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে চীনের অধিকতর ও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছি।’

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘আলোচনাকালে চীন) বলেছে যে, তারা অত্যন্ত আগ্রহ এবং ঐকান্তিকতার সঙ্গে এই বিষয়টির ওপর কাজ করছেন। মিয়ানমার সরকারকে তারা রাজি করানোর চেষ্টা করছে যাতে খুব দ্রুত এই প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু হয়।’

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে গত ২২ জুন বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে দলের উচ্চ পর্যায়ের ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল চীন সফরে যান। মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল বেজিংয়ে ‘গ্রেট হল অব পিপলে’ চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য এবং ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংসং, সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী মিস্টার লিউ জিয়ানচাও, সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার মিসেস সান হাইয়ানের সাথে বৈঠক হয়।

এছাড়া চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সুং-ওয়ে-ডং এর সাথে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির প্রতিনিধি দল সানজি প্রদেশের রাজধানী জিয়াং এ বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বি ওয়াই ডি, হাইটেক প্রযুক্তি পার্ক, জিয়াংটং বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন, সানঝি প্রদেশে কমিউনিস্ট পার্টির সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং জিয়ান শহরে একটি আদর্শ গ্রাম পরিদর্শন করেন।

বিএনপি এক চীন নীতিতে বিশ্বাসী জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি একচীন নীতিতে বিশ্বাসী। আমরা এক চীন নীতি থেকে কখনো সরিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চীনের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে যে, আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখি।’

তিস্তা প্রকল্পের বিষয়ে চীন ইতিবাচক উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এবং আমাদের যে প্রয়োজন সেটা আমরা ব্যাখ্যা করেছি। চীন এটাতে ইতিবাচকভাবে সাড়াও দিয়েছেন। এটার উপরে তারা কাজ করছেন। তারা কোনো প্রস্তাব দিলে আমরা অবশ্যই সেই বিষয়টা ভবিষ্যতে যদি আমরা কখনো সরকার পরিচালনার দায়িত্বে আসি তখন সেটা ইতিবাচকভাবেই দেখব বলে তাদেরকে আমরা বলেছি

‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘অনেক কাজই রয়েছে যেগুলো ইতোমধ্যে হয়েছে আর যদি কোনো কাজ থাকে বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ যদি মনে করে সেই কাজগুলো বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হবে তাহলে নি:সন্দেহে তা বিবেচনা করা হবে।”

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে বৈঠকের বিষয়বস্ত তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে ‘এক চীন নীতি’র প্রতি আমাদের দলীয় অবস্থান দৃঢ়ভাবে উচ্চারিত হয়েছে। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর নেতৃত্বে চীনের বিস্ময়কর উন্নতি ও আন্তর্জাতিক প্রবৃদ্ধি এবং তার বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর ইতিবাচকতার কথা মর্যাদা ও সম্মানের সাথে আমাদের পক্ষ থেকে ব্যক্ত করা হয়েছে।

এই বৈঠকে বিএনপি বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, ডিজিটাল প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, মেডিকেল ও স্বাস্থ্যসেবা, উচ্চশিক্ষা, যোগাযোগ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, এসএমই বিজনেস, ব্লু ইকোনমি উন্নততর প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে চীনের আরও অধিকতর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব জানান, সিপিসির সাথে বৈঠকে পলিসি ব্যুরোর সদস্য শি- লি-হংসং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং দ্রুতই একটি নির্বাচিত সরকারের সাথে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে চীনের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ করে আমরা এর অধিকতর প্রয়োগিক দৃষ্টান্ত দেখার অপেক্ষায় রয়েছি, যাতে আমাদের মাঝে সাংস্কৃতিক ও সফর বিনিময়, প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে সেটা আরো দৃঢ়তর হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে পারস্পরিক মর্যাদা সমুন্নত রেখে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ভাবনায় এমন সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছি যেখানে জনগণ এবং জনকল্যাণের অগ্রাধিকার যেন থাকে সর্বোচ্চ স্থানে। একই সঙ্গে আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতির বিবেচনায় নির্যাতিতদের পক্ষে চীনের অবস্থানকে আমরা সম্মানের সাথে অভিনন্দিত করেছি এবং এর ব্যাপকতা দৃশ্যমানতার আহ্বান জানিয়েছি।”

বিএনপি মহাসচিব জানান, বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল নির্মাণ, দেশের উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও রপ্তানি সুযোগ বৃদ্ধির বাস্তব পদক্ষেপ কুনমিংয়ে চারটি বিশেষায়িত হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা সহজতর করা, চীন-বাংলাদেশের মাঝে স্থলপথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ প্রভৃতি বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

চীন কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে দুই বছর মেয়াদি রাজনৈতিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছি।’

চীন সফরের আয়োজনের জন্য চীনের কমিউনিস্ট পার্টি, পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগ এবং ঢাকার চীনের দূতাবাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনের দলের চীন সফরকারী সদস্য স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, জহির উদ্দিন স্বপন, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category