দেড় যুগ আগে চীনের প্রদেশে যাত্রা শুরু প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম লগইংকের। মূলত সাগর পথে পণ্য পরিবহনে ব্যবস্থাপনার তথ্য ও জাহাজ ট্র্যাকিংয়ে কাজে লাগে এ লজিস্টিক সফটওয়্যার। যা ব্যবহার করছে বিশ্বের অন্তত ৫০টি দেশ। তালিকায় আছে বাংলাদেশের নামও।
শুরু থেকেই বিনামূল্যে লগইংক সেবা দিচ্ছে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে এটি চীনের বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের একটি কৌশলগত হাতিয়ার। তাদের ধারণা, এর মাধ্যমে তথ্যভান্ডার তৈরি করছে চীনারা। যা দিয়ে ব্যবহারকারী দেশগুলো থেকে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছে দর কষাকষিতে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক ও বাণিজ্য নিয়ে বৈঠকে চীনের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস পাবলিক ইনফরমেশন প্ল্যাটফর্ম- লগইংক নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার বাড়তে থাকা বাণিজ্য ও সার্বিক সম্পর্ক নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে ওয়াশিংটন। ঢাকা ও ওয়াশিংটনের একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বৈঠকে যেসব বিষয় যুক্তরাষ্ট্র উত্থাপন করেছে বা উদ্বেগ জানিয়েছে সেগুলোর একটি হলো লগইংক। দেশটি চায়, বাংলাদেশের কোনো বন্দর, বন্দর টার্মিনাল, পরিবহন ব্যবস্থা এবং বাণিজ্যিক জাহাজে যেন এ সফটওয়্যার ব্যবহার না হয়।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা পর্যালোচনা কমিশনের (ইউএসসিসি) ২০২২ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সফটওয়্যারটি বিভিন্ন দেশের বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে একটি গ্লোবাল ডেটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে। এর মাধ্যমে চীন শুধু পণ্যের গতিবিধি নয়, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাইস ইউনিভার্সিটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেকার ইনস্টিটিউটের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লগইংক সরাসরি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) ডিজিটাল মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। যেটি ‘স্মার্ট পোর্ট’ ও ‘ডিজিটাল সিল্ক রুট’ এর ধারণা বাস্তবায়ন করছে। বিআরআই-এর অংশীদার অনেক দেশ এখন লগইংক ব্যবহার করছে। এর মধ্যে আছে পাকিস্তান, কেনিয়া, গ্রিস, ইথিওপিয়া ও ইউরোপের একাধিক বন্দর। এশিয়া পাওয়ার ওয়াচের ২০২৪ সালের এপ্রিলের এক নিবন্ধ অনুযায়ী, বিশ্বের ৯৫টি বন্দরে এই সফটওয়্যার ব্যবহার হয়। এর মধ্যে ৩১টিই ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দরের মুখপাত্র ও সচিব ওমর ফারুক সমকালকে জানিয়েছেন, বন্দর পরিচালনার জন্য এখনো এই নামের কোনো সফটওয়্যার কেনা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনায় বাংলাদেশকে লগইংক ব্যবহারে জোরালোভাবে নিরুৎসাহিত করছে। চীন থেকে সামরিক কেনাকাটা কমাতেও বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে।