দীর্ঘ তিন যুগ পর হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ ও হলসংসদ নির্বাচন। বহু জল্পনা-কল্পনা শেষে আজ (১৫ অক্টোবর, বুধবার) অনুষ্ঠিত হচ্ছে চাকসু নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাস এখন নির্বাচনি আমেজে ভাসছে। ১৯৯০ সালে চাকসুর সবশেষ নির্বাচন হয়েছিল।
প্রচারণায় অভিনবত্ব
এবার প্রচলিত প্রচারণার বাইরে গিয়ে দেখা গেছে, কিছু অভিনব আয়োজনও। কেউ স্কেটিং করে প্রচারণা করেছে। কেউ আবার চার্লি চ্যাপলিনের সেজে শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে প্রচারণা চালিয়েছে। এতে ভোটারদের আগ্রহ যেমন বেড়েছে, তেমনি নির্বাচনি আমেজে সংযুক্ত হয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা।
প্রচারণার জন্য মোট ১৯ দিনে সময় পেয়েছে প্রার্থীরা। এ সময় প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন প্রার্থীরা।
দিনের বেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ, শাটল স্টেশন, ষোলশহর স্টেশন, ঝুপড়ি, হলসহ সকল এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছিলেন প্রার্থীরা। আর রাতের বেলায় প্রার্থীরা চেষ্টা করেছেন প্রতিটি হলে গিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে।
তাদের কথা শুনতে ও নিজেদের ইশতেহার জানান দিতে। এছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের ভোটের জন্য প্রার্থীদের ইশতেহার জানান দিতে হলে হলে প্রজেকশন মিটিং করেছেন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
ক্যাম্পাসে ভোটের আমেজ
দীর্ঘদিন পর ভোট হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাও বেশ উচ্ছ্বসিত, ক্যাম্পাসেও যেন নির্বাচনি আমেজ সরগম হয়ে রয়েছে। অনেক ভোটারের মতে, এবার তারা এমন নেতৃত্ব চান, যারা দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করবে।
এদিকে, নারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ও শাটল ট্রেনের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। তারা চান, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যেন নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং শাটল ট্রেনের নিরাপত্তা জোরদার করেন।
চারুকলা বিভাগের ২১-২২ সেকশনের শিক্ষার্থী নয়ন পল বলেন, নেতৃত্বে এমন প্রতিনিধি আসুক, যিনি ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবে।
ক্যাম্পাসে যেন মারামারি, সহিংসতা না হয় এবং ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখতে ভূমিকা রাখবে।
ইসলামি ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম হোসেন সোহাগ বলেন, আমরা যে প্রার্থী যোগ্য ও শিক্ষার্থীবান্ধব-এমন নেতৃত্বে চাই। এ ছাড়া আমরা কোনো প্যানেল না, যে যোগ্য তাকেই ভোট দেব। আশা করছি, যে প্রার্থী শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলবে কাজ করতে পারবে এমন প্রতিনিধিই আমরা চাই।
প্রশাসনিক প্রস্তুতি
এদিকে ৫ জন ডিন রিটার্নিং অফিসার ও ১৫ জন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রিসাইডিং অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ড. মনির উদ্দিন।
এ ছাড়া ৬০টি ভোটকক্ষের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নিরাপত্তা সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৩০০টি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ৭০০টি গোপন ভোটকক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রার্থী ও ভোটার সংখ্যা
চাকসু নির্বাচনে প্রার্থী রয়েছেন ৯০৮ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৬টি পদের বিপরীতে ৪১৫ জন, হল সংসদে ৪৭৩ জন এবং হোস্টেল সংসদে ২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ২৭ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ ও ছাত্রী ১১ হাজার ৩২৯ জন।