• শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:০৪ অপরাহ্ন

অলস পড়ে আছে ৩১ কোটি টাকার হাসপাতাল

Reporter Name / ৩৪ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

রংপুর নগরীতে ২০১৯ সালে স্থাপিত ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল চার বছর আগে নির্মাণকাজ শেষ হলেও জনবল সংকটে এখনো চালু করা যায়নি। এ নিয়ে একাধিকবার চিঠি চালাচালি হলেও এর নথিপত্র লালফিতায় বন্দি রয়েছে সচিবালয়ে। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩১ কোটি ৪৮ লাখ ৯২ হাজার ৮০৯ টাকা। অথচ এর অবকাঠামো ও আসবাবপত্রগুলো অযত্ন অবহেলায় পড়ে নষ্ট হচ্ছে আর সেবা বঞ্চিত হচ্ছে এ অঞ্চলের শিশুরা।

করোনার সময়ে সংকটময় পরিস্থিতিতে শিশু হাসপাতালটি ‘করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল’ হিসাবে চালু রাখা হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এটি বন্ধ রাখা হয় এবং এখানে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়া হয়। শিশু রোগীদের চাপের মুখে জোড়াতালি দিয়ে একশ শয্যার এ হাসপাতালে সম্প্রতি বহির্বিভাগ চালু করা হয়েছে। সেখানে রংপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রতিদিন একজন করে কনসালটেন্ট এসে পালা করে এক বেলা সেবা দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, বহির্বিভাগে শিশু চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে কেবল লোকদেখানো। প্রতিদিন গড়ে ১৫ জন রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন না।

কনসালটেন্ট চিকিৎসক (শিশু) সুজন চন্দ্র বর্মণ জানান, তার কর্মস্থল মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তিনি এখানে ডেপুটেশনে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তার মতো বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আরও কয়েকজন কনসালটেন্ট চিকিৎসক এসে এখানে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তারা পালা করে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে চলে যান। হাসপাতালের রেজিস্ট্রার অনুযায়ী দেখা গেছে সেখানে গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন শিশুরোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অথচ এটি একটি বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল। এখানে শিশুদের সাধারণ চিকিৎসাসহ জটিল রোগের চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিন প্রায় দুই শতাধিক শিশুর চিকিৎসা দিতে সেখানে চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন। শিশু রোগীর চাপে সেখানে এক দুঃসহ পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে এই হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছিল।

রংপুর বিভাগের স্বাস্থ্য কার্যালয়ের উপপরিচালক ডা. ওয়াজেদ আলী বলেন, ১০০ শয্যার শিশু হাসপাতালের দ্রুত লোকবল নিয়োগ করা হবে। সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারক মহলের অনুমোদন পাওয়া গেছে। চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ অন্যান্য মিলে ৮শ জনের চাহিদা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করি খুব দ্রুত তা বাস্তবায়ন হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে বর্তমান সংকটের সমাধান হবে। তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা উপকরণ ঠিকমতো সংরক্ষণ করছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে এসব বিষয়ে যারা দায়িত্বে আছেন তারাই বলতে পারবেন।

রংপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর নগরীর সাবেক সদর হাসপাতালের ১ দশমিক ৭৮ একর জমিতে এই শিশু হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর। তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এটি হস্তান্তর করা হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। মূল হাসপাতাল ভবনের তৃতীয়তলা পর্যন্ত প্রতিতলার আয়তন ২০ হাজার ৮৮২ দশমিক ৯৭ বর্গফুট। এছাড়া নির্মাণ করা হয়েছে তিনতলার সুপারিনটেনডেন্ট কোয়ার্টার। রয়েছে ছয়তলার ডক্টরস কোয়ার্টার। এছাড়া রয়েছে স্টাফ অ্যান্ড নার্স কোয়ার্টার। বিদ্যুৎ সাবস্টেশন স্থাপনে নির্মাণ করা হয়েছে একটি আলাদা ভবন।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category