• বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

বর্ষায় ভ্রমণে সতর্ক থাকবেন যে বিষয়ে

Reporter Name / ৪৩ Time View
Update : সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫

বাংলার অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে বর্ষায় বেড়ানোর পরিকল্পনা করেন অনেকেই। অফ-পিক মৌসুম হওয়ায় একটু কম খরচেও বেড়ানো যায়। পাহাড়, চা-বাগান, নদীতীরের এলাকায় বর্ষাকাল তার রূপ উজাড় করে হাজির হয়। তা দেখতে ছুটে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে বর্ষার ভ্রমণ অন্য সময় থেকে একটু আলাদা।

এই ঋতুতে বৃষ্টির সৌন্দর্য যেমন আছে, তেমনই প্রবল বর্ষা কখনও কখনও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। পাহাড়ি এলাকায় থাকে ধসের ভয়, জোঁকের ভয়। কখনও পাহাড়ি নদীতে হড়কাবান হতে পারে বিপদের কারণ। তার ওপর বেড়াতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে সর্দি-কাশি বেধে গেলে বিপত্তির শেষ থাকে না।

ঠিক সে কারণেই বর্ষাকালে বেড়াতে যাওয়ার আগে প্রয়োজন সতর্ক হওয়া। উপযুক্ত পরিকল্পনা, বাড়তি সতর্কতা যেমন আচমকা বিপদ এড়াতে সাহায্য করবে, তেমনই বেড়ানো হবে নির্ঝঞ্ঝাট।

পরিকল্পনা ও সতর্কতা-

১. গন্তব্য নির্বাচন

বর্ষায় পাহাড়, নদী, ঝর্না দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলে এমন জায়গা বেছে নিন, যে স্থান প্রবল বৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে না। পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রাম, ট্রেক করে বা নদী পেরিয়ে যেতে হয়, এমন জায়গাগুলো বর্ষায় ভ্রমণের তালিকায় না রাখাই ভাল। পাহাড়ে গেলেও, একটু বড় জনপদ, যেখানে আটকে পড়লে কয়েক দিন অন্তত থাকা-খাওয়ার অসুবিধা হবে না, এমন স্থান নির্বাচন করতে পারেন। কিংবা পাহাড়ে ধস নামে না, এমন জায়গা বেছে নিতে পারেন।

২. আবহাওয়া

যতই অগ্রীম পরিকল্পনা করুন না কেন, যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রতিদিন সেই জায়গার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিন। পাহাড়ি এলাকায় প্রবল বৃষ্টিতে নদী ফুঁসে উঠলে, পাকা সড়কও ভেঙে যেতে পারে। সেই জায়গায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস কী বলছে, রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি কেমন, সে সম্পর্কে জেনে তবেই বাড়ি থেকে বের হবেন। যদি কোনও সতর্কতা জারি থাকে, অতি উৎসাহে মোটেও তা এড়িয়ে যাবেন না।

বর্ষায় ভ্রমণে সতর্ক থাকবেন যে বিষয়ে

৩. প্যাকিং

বর্ষাকালে বেড়ানোর জন্য একটু ভেবেচিন্তে প্যাকিং করা দরকার। এমন পোশাক নিন, যা ভিজে গেলেও দ্রুত শুকিয়ে যাবে। লিনেন বা নাইলনের জামাকাপড় নিতে পারেন। সম্ভব হলে ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ ব্যবহার করুন। তা সম্ভব না হলে ঘাড়ের ব্যাগে বড় পলিথিন রাখুন, হঠাৎ বৃষ্টিতে আশেপাশে আশ্রয় না থকলে যেন ঘাড়ের ব্যাগটি পলিথিনে ভরে নিতে পারেন। সঙ্গে রাখুন রেইনকোট এবং ছাতা। মোবাইল, চার্জার, ক্যামেরার ব্যাটারি, ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি অবশ্যই জিপলক ব্যাগ বা ভালো মানের পলিথিনে ভরে রাখুন। জল এবং অতিরিক্ত আর্দ্রতা ক্যামেরার লেন্সের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সে কারণে ক্যামেরার বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নিন।

৪. জরুরি জিনিস

পাওয়ার ব্যাঙ্ক নিতে ভুলবেন না। বর্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোনও এলাকা বিদ্যুৎবিহীন থাকতে পারে। বিপদে পড়লে যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোনটিই আপনার ভরসা। সেই সঙ্গে ব্যাগে রাখুন অতিরিক্ত কিছু পলিথিন, দড়ি, কাঁচি, লাইটার জাতীয় জরুরি কিছু জিনিস।

৫. গাড়ি

বর্ষায় নিজের গাড়ি নিয়ে বের হলে অবশ্যই সঙ্গে মোটা দড়ি, ছুরি, কাঁচি ও গাড়ির প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সঙ্গে রাখুন। সচরাচর যা কাজে লাগে না, এমন ছোটখাটো অথচ প্রয়োজনের জিনিস সঙ্গে রেখে দিতে পারেন। কারণ, দুর্যোগের সময় কখন কোনটি কাজে লাগবে, কেউ বলতে পারে না।

বর্ষায় ভ্রমণে সতর্ক থাকবেন যে বিষয়ে

বর্ষায় রাস্তায় কাদা হয়ে যায়। ধসও নামতে পারে। তাই ছোট গাড়ি ভাড়া করলে তার সুবিধা, অসুবিধা দেখে নিন। পাহাড়ি অনেক জায়গাতেই বড় গাড়ি ভাড়া করলে সুবিধা হয়। বর্ষাকালে কোনটি নিলে ভাল, তা জেনে নিন আগে থেকে।

৬. পানি, খাবার এবং ওষুধ

বর্ষায় ধস নামলে বা রাস্তা ভেঙে গেলে যে কোনো জায়গায় আটকে পড়তে পারেন। তাই সঙ্গে বিশুদ্ধ খাবার পারি, শুকনো খাবার এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ রাখুন।

৭. জুতা-স্যান্ডেল

বর্ষায় বেড়ানোর জন্য রাবারের জুতা বা স্যান্ডেল আদর্শ। তবে কারও যদি বেশি সংবেদনশীল ত্বক হয় তালে রাবার-বুট সঙ্গে নিয়ে নিতে পারেন।

বর্ষায় ভ্রমণে সতর্ক থাকবেন যে বিষয়ে

৮. পানি নিয়ে সাবধান

বর্ষায় এমনিতেই পেটখারাপের সম্ভাবনা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তাই হাত না ধুয়ে খাওয়া এবং যে কোনও জায়গার পানি খেয়ে নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে রাখা বা পানি কিনে খাওয়া নিরাপদ। রাস্তার পাশের খাবারও এড়িয়ে চলা ভালো।

৯. হাতে সময় নিয়ে রাস্তায় বের হন

রাস্তায় পানি জমলে যানবাহন পাওয়া কঠিন, বাড়তি সময়ও লাগতে পারে। তাই হাতে সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হবেন। বিমান, ট্রেন বা বাসের নির্ধারিত সময়ের আগে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন। তবে বিমানে কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা করলে বিকল্প ভেবে রাখুন। কারণখারাপ আবহাওয়া তে ফ্লাইট বাতিল হতে পারে বা পিছিয়ে যেতে পারে।

১০. নিয়ম মানুন

প্রতিটি এলাকাতেই চলাচলের কিছু আঞ্চলিক নিয়ম ও কিছু আইন আছে, যেমন – সমুদ্রে নামার জন্য জোয়ার-ভাটার হিসাব, পাহাড়ি ঝিরিতে পার হওয়ার সতর্কতা ইত্যাদি। অতি-আত্মবিশ্বাসী হয়ে এসব নিয়ম উপেক্ষা করা একটি ভয়ঙ্কর বোকামী। নিয়মগুলো তৈরি হয়েছে মানুষের নিরাপত্তার জন্যই। তাই এগুলো জেনে নিন, এবং মেনে চলুন। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সেলফির পোজ় দিতে দিয়ে বিপদ যেন না হয়, সে দিকে নজর রাখবেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category