চিকেন পক্স একটা ভাইরাসজনিত রোগ, যা ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাস সংক্রমণ দ্বারা সৃষ্ট হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ, যা সহজেই একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ভাইরাসজনিত রোগ ফুসকুড়ি শুরু হওয়ার তিন দিন আগে থেকেই শ্বাস-প্রশ্বাসের সংস্পর্শে এটি সংক্রমণ ঘটাতে পারে। একবার আপনি ভিজেডভিতে আক্রান্ত হলে, ভাইরাসটি সারাজীবন আপনার শরীরে থেকে যাবে। এটি পরবর্তী জীবনে পুনরায় সক্রিয় হতে পারে। তবে সাধারণত একবার চিকেন পক্স হয়ে সেরে গেলে একই তীব্রতায় এটি আবার ফিরে আসে না, তা খুব কমসংখ্যক মানুষের হয়ে থাকে।
এটি ছোঁয়াচে রোগ, তাই পরিবেশে ভিজেডভি ভাইরাসের প্রকোপ বছরের যে সময়টিতে বেড়ে যায়, সেই সময় অনেক মানুষ এতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে ভয়ের কিছু নেই, কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলেই, আর উপসর্গ নিরাময়ের চিকিৎসা নিলেই আপনার শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নিজেই এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শুরু করবে।
তবে কীভাবে বুঝবেন যে আপনার শরীরে সক্রিয় ভিজেডভি ভাইরাস ঢুকে পড়েছে কিনা? এর জন্য জানতে হবে বিভিন্ন স্তরে পক্সের লক্ষণগুলো। এক নজরে দেখে নিন এই মৌসুমে কোন কোন লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে— হঠাৎ জ্বর চলে আসবে ১০১ থেকে ১০৩ ডিগ্রি। সেই সঙ্গে দেখা দেবে— মাথাব্যথা, গলা ব্যথা, শরীর ব্যথা, অবসাদ ও ক্ষুধামন্দা। এ ছাড়া চর্ম রোগও দেখা দেবে। জ্বর শুরুর ১-২ দিন পর লাল দানার মতো ফুসকুড়ি দেখা দেবে। এরপর বুক, পিঠ, মুখসহ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়বে। ফুসকুড়ি ধীরে ধীরে পানিভর্তি ফোসকায় পরিণত হয়। ফুসকুড়িগুলোতে তীব্র চুলকানি হওয়া স্বাভাবিক। আর শরীরের দুর্বলতা, ক্লান্তি ও কিছু ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব হতে পারে।
চিকেন পক্স সাধারণত বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশিতে ভিজেডভি ভাইরাস থাকে। সেই বাতাসে শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে আশপাশের মানুষও সংক্রমিত হতে পারে। বিশেষ করে এই ভাইরাসটি স্কুল ও অফিসের মতো জনাকীর্ণ জায়গায় সহজে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ছাড়া চিকেন পক্স সংক্রামিত হওয়ার আরেকটি সাধারণ উপায় হলো— সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বা স্পর্শ। এমনকি যদি ফোসকা শুকিয়ে যায় এবং চুলকানি হয়, তবু তারা সংক্রামক হতে পারে।
যেভাবে মুক্তি মিলবে চিকেন পক্স হলে। এ জন্য আপনি যা করতে পারে, তা হলো—আইসোলেশন বা বিচ্ছিন্নতা। রোগীকে আলাদা ঘরে রাখুন। অবশ্যই পরিবারের গর্ভবতী সদস্য, বয়স্ক ও শিশুদের সংস্পর্শে আসতে দেবেন না। এর পর প্রাপ্তবয়স্করা প্রথমে বাড়িতে জ্বর কমানোর ব্যবস্থা নিতে পারেন। তবে শিশুর ক্ষেত্রে অবশ্যই আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আর ফোসকা উঠলে কখনো ফাটাবেন না। এতে ফুসকুড়ি বাড়তে পারে। ফুসকুড়ি না চুলকানোর চেষ্টা করুন, এতে ত্বকে বেশি দাগ হয়। নখ ছোট করে রাখুন। প্রতিদিন হালকা গরম পানিতে গোসল করুন। সম্ভব হলে গোসলের পানিতে নিমের পাতা ব্যবহার করুন। নরম সুতি কাপড় পরুন, এতে কিছুটা আরাম পাবেন।
যদিও চিকেন পক্স সাধারণত নিজেই ঠিক হয়ে যায়, তবে এটি কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর জটিলতার কারণ হতে পারে। যেমন—ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন এবং নিউমোনিয়া কারণ হতে পারে। বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের এবং দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের। শ্বাস নিতে সমস্যা, বুকে ব্যথা এবং ক্রমাগত কাশি নিউমোনিয়ার লক্ষণ।
এ জন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস আলাদা করুন ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। টিকাদানের মাধ্যমে চিকেন পক্স প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সাধারণত হালকা হয়। যেমন— ইনজেকশনের স্থানে কিছু ব্যথা বা ফোলাভাব। অনেক দেশেই ভ্যারিসেলা টিকা সুপারিশ করা হয়। প্রাথমিক টিকাদানের পাঁচ বছর পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হয়। টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সংক্রামিত হলে তাদের চিকেন পক্সের সংক্রমণ তেমন মারাত্মক হয় না।