• বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:১৯ অপরাহ্ন

শিল্পীসমাজ রাজনৈতিক ইস্যুতে বিভক্ত

Reporter Name / ৫৫ Time View
Update : বুধবার, ২১ মে, ২০২৫

ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। ১৮ মে থাইল্যান্ড যাবার পথে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ।

পরবর্তীতে তাকে রাজধানীর ভাটারা থানায় হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে ডিবি কার্যালয়ে। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর পর তোলা হয় আদালতে। আদালত তাকে পাঠিয়ে দেন কারাগারে। এরপর ২০ মে জামিন হয় তার।

তাকে গ্রেফতার করার কারণ, তার বিরুদ্ধে গৃহিত মামলা। অভিযোগ, জুলাইবিপ্লবে ছাত্র-জনতা হত্যায় স্বৈরাচার হাসিনা ও তার দোসরদের সঙ্গে নুসরাত ফারিয়াও জড়িত। অবশ্য তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ শেখ হাসিনার শাসনামলে হাসিনা তোষণে ব্যস্ত ছিলেন এ নায়িকা। বলেছেন, ‘প্রত্যেক মেয়ের মধ্যে একজন করে শেখ হাসিনা আছেন’।

এদিকে নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেফতারের পর সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিল্পীদের একাংশ। তবে একটি পক্ষ বলছে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে বা অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। শিল্পী হলেই যে আইন তাকে ছাড় দিবে বিষয়টি এমনও নয়। শুধু তাই নয়, ফারিয়ার আগেও রাজনৈতিক মামলা হামলায় পড়েছেন এমন অনেক শিল্পী রয়েছেন। যারা গত ১৬ বছর আওয়ামী সরকারের তোষামোদী করে এসেছেন।

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। তার পলায়নের পর থেকেই আওয়ামী ঘনিষ্ট শিল্পীরা পড়েছেন বিপাকে। অনেকেই আত্মগোপনে চলে যান, কেউবা পালিয়ে গেছেন বিদেশে। আন্দোলন পরবর্তী অনেকের নামে হয়েছে মামলা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালীন শিল্পীদের মধ্যে কেউ কেউ আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে নেমেছিলেন রাজপথে। আজ তারা বাহ্বা পেলেও, বিপাকে পড়েছেন হাসিনার আশ্রয়ে থাকা শিল্পীরা। তাদের নিয়ে যেমন সমালোচনা হচ্ছে, তেমনি আজ তারা বঞ্চিত হচ্ছেন শোবিজ অঙ্গনে কাজ করা থেকেও। শুধু তাই নয়, আন্দোলনের পক্ষের শিল্পীদের অনেকেই সেসব শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন।

রাজনৈতিক মারপ্যাচে আওয়ামী ঘনিষ্ট শিল্পীরা পড়ছেন জনতার রোষানলে। শিল্পীদের এমন দুর্ভোগে সামাজিক মাধ্যমে শিল্পী সমাজের একাংশ প্রতিবাদ করলেও, কেউ কেউ রয়েছেন মুখে কুলুপ এঁটে। কারণ, রাজনৈতিক সুবিধাভোগী শিল্পীরা আজ তাদের কর্মের ফল ভোগ করছেন বলেই তাদের মন্তব্য। তাদের মতে, যারা আজ রাজনৈতিক মামলা, হামলার শিকার হচ্ছেন তারা শুধু শিল্পী নয়, রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে নির্দিষ্ট একটি দলের কর্মী হয়েই কাজ করেছেন। তাই ক্ষমতার পালাবদলে আজ তাদের সে হিসাব দেয়া লাগবে এটাই স্বাভাবিক। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় মতাদর্শের পার্থক্যকে কেন্দ্র করে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে কালো তালিকাভুক্ত রাখা হয়েছিল অনেক শিল্পীকে। এটিকেও উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরছেন অনেকে।

এদিকে সরকার পতনের পর নতুন করে আলোচনায় আসেন ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় অভিনয় করা দু’জন শিল্পী। যাদের মধ্যে রয়েছেন শেখ মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করা আরিফিন শুভ ও শেখ হাসিনা চরিত্রের অভিনয় করা নুসরাত ফারিয়া। দু’জনেই তৎকালীন সরকার থেকে এ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য বেশ সুযোগ সুবিধাও নিয়েছেন বলে জানা গেছে। আরিফিন শুভ তো প্লটও উপহার পেয়েছিলেন শেখ হাসিনার কাছ থেকে। আন্দোলন পরবর্তী শুভকে সংরক্ষিত কোটায় বরাদ্ধ দেওয়া রাজউকের সেই প্লট বাতিল করা হয়েছে।

এ দুজন ছাড়াও আলোচনায় আসেন এ সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আরও অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা (শেখ ফজিলাতুন্নেছা), সাবিলা নূর (শেখ রেহানা), চঞ্চল চৌধুরী (শেখ লুতফর রহমান) প্রমুখ। এ সিনেমাসহ আওয়ামী তোষামোদির জন্য এসব শিল্পীদেরও সামাজিক মাধ্যমে পড়তে হয়েছে সমালোচনার মুখে। নমিনেশন চাওয়া এবং এমপি হওয়া নিয়েও বিপাকে অপু বিশ্বাস এবং ফেরদৌস।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি পরিদর্শক করা, হোয়াটসঅ্যাপে ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের স্ক্রিনশট ফাঁস হওয়া এবং গণবিক্ষোভকে উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে ছোটপর্দায় শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘের অবস্থান নেওয়ার কারণে শিল্পীদের একাংশ বৈরি পরিস্থিতির মুখোমুখিও হয়েছেন। ছাত্র-জনতার প্রাণহানির ঘটনায় নিরব থাকায় অনেকেই রোষানলে পড়েছেন, আবার অনেকের বিরুদ্ধেই শাস্তির দাবিও উঠেছে। এমতাবস্তায় দেশের শোবিজ অঙ্গনে এখনও বিরাজ করছে অস্থির অবস্থা। শিল্পীদের এ বিভাজন কাজের পরিবেশ নস্ট করছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category