জেপি (মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং তার মেয়ে-জামাতা যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সনের কারণে ভান্ডারিয়া পৌর নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে বলে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে। সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করে ভান্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং নৌকার কর্মী-সমর্থকদের গুলি করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ জেপির মেয়র প্রার্থী মাহিবুল হোসেন মাহিম অস্বীকার করেছেন।
পৌর নির্বাচন ঘিরে দুপক্ষের পালটা প্রচার-প্রচারণা কেবল নয়, সংঘাত-সংষর্ষেও জড়িয়েছে দুই দলের নেতাকর্মীরা। হামলা-সংঘর্ষের সেসব ঘটনায় করা মামলায় তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে জেলে আছেন উপজেলা জেপির সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম উজ্জ্বলসহ দলের ৯ নেতাকর্মী। এ উত্তেজনার মধ্যে ৮ জুলাই ভান্ডারিয়ায় আসেন জেপি (মঞ্জু) চেয়ারম্যান ও পিরোজপুর-২ আসনের এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। পরদিন আসেন তার মেয়ে জামাতা যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি মজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন। শত শত মোটরসাইকেল আর গাড়ির বহর নিয়ে দুই এমপির এভাবে ভান্ডারিয়ায় আসার ঘটনাকে নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ। তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আলাদা দুটি অভিযোগও করেছেন তারা।
ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে উপজেলা আওয়ামী লীগ সংবাদ সম্মেলন করে। এতে লিখিত বক্তব্যে নৌকার মেয়র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফাইজুর রশিদ খসরু জমাদ্দার বলেন, নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী-কোনো সংসদ-সদস্য (এমপি) নির্বাচন চলাকালে এলাকায় কোনো প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। অথচ ৮ জুলাই এমপি মঞ্জু শত শত মোটরসাইকেল আর গাড়ির বহর নিয়ে ঢাকা থেকে ভান্ডারিয়ায় আসেন। শোভাযাত্রা নিয়ে তিনি পৌর শহর প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় জেপির মেয়র প্রার্থী ও প্রতীক সাইকেলের পক্ষে প্রকাশ্যে স্লোগান দেওয়া হয়। ৯ জুলাই ভান্ডারিয়ায় আসেন এমপি নিক্সন চৌধুরী। তিনিও শতাধিক মোটরসাইকেল এবং গাড়ির বহর নিয়ে ভান্ডারিয়ায় আসেন। তার বহর থেকেও সাইকেলের পক্ষে স্লোগান দেওয়া হয়। উপজেলা বাসস্ট্যান্ড অতিক্রমকালে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা নৌকার স্লোগান দিলে তাদের গুলি করার হুমকি দেন এমপি নিক্সন চৌধুরী।
খসরু জমাদ্দার আরও বলেন, আওয়ামী লীগের লোক হয়েও চাচাশ্বশুর মাহিমের সাইকেলের পক্ষে কাজ করতে এমপি নিক্সন এসেছেন। আমাদের কাছে খবর রয়েছে-নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে তিনি ফরিদপুর এলাকার ১০-১২ সন্ত্রাসীকে ভান্ডারিয়ায় এনেছেন। আরও সন্ত্রাসী আনা হবে। এসব ঘটনায় সাধারণ ভোটাররা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। তিনি অভিযোগ করেন, এমপি মঞ্জু ও এমপি নিক্সনের কারণে পৌর নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। খসরু জমাদ্দার বলেন, আমরা চাই-১৭ জুলাই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক জেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজের ভাষায়, ‘মহাজোটের শরিক হিসাবে যুগ যুগ ধরে ছাড় পাওয়া জেপি এখানে আওয়ামী লীগ উৎখাতের মিশনে নেমেছে। অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে তাই মাঠে নেমেছি আমরা। স্থানীয় সরকারের কোনো পর্যায়ে দলের বাইরে আর কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ মহারাজের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা জেপির সহসভাপতি গোলাম সরোয়ার জমাদ্দার বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) পৌরসভার নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইবে-এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এর মানে এ নয় যে, আমরা ভেসে এসেছি। এখানে আমরা যত উন্নয়ন করেছি-সেসব দেখে রায় দেবেন ভোটাররা। ১৭ তারিখই প্রমাণ হয়ে যাবে।
সাইকেলের মেয়র প্রার্থী মাহিম বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা। এমপি মঞ্জু এসেছিলেন কারাবন্দি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে। মাত্র একদিন থেকে তিনি (মঞ্জু) চলে গেছেন। আর এমপি নিক্সন শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন। তিনি তো ছিলেন মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তারা কোনো নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেননি। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে নৌকার লোকজন আগেভাগে এসব ছড়াচ্ছে মুখ রক্ষার জন্য। এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং এমপি নিক্সন চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তারা ধরেননি।
এদিকে, এমপি নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগ অভিযোগ দিয়েছে। এর আগে এমপি মঞ্জুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার আচরণবিধি লঙ্ঘন বিষয়ে জেপির মেয়র প্রার্থী মাহিবুল হোসেন মাহিমকে কারণ-দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। এতে নোটিশের জবাব চাওয়া হয়েছে।