তীব্র ডলার সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এই সংকট নিরসনের একমাত্র উপায় ডলার আয় বাড়ানো। কিন্তু প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সহজে পণ্য রপ্তানি করতে পারেন না।
ব্যাংকগুলো এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ করলেও অবহেলিত রপ্তানিচ্ছু ক্ষুদ্র গ্রাহক। মোটা দাগে পাঁচ কারণে বাতিল হচ্ছে এসএমই উদ্যোক্তাদের রপ্তানি আবেদন। দেশের ডলার সংকট নিরসন ও প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান তৈরিতে এসএমই সহায়ক নীতিমালা প্রয়োজন।
সোমবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে (বিআইবিএম) অনুষ্ঠিত সেমিনারে উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে এসব তথ্য।
‘বৈদেশিক বাণিজ্য অর্থায়ন এবং এসএমই’র মধ্যে সেতুবন্ধন’ শীর্ষক সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএম সহযোগী অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন ও কনসালট্যান্সি) ড. আশরাফ আল মামুন। সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএম মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএম অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব।
গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএম সহকারী অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ এবং রাহাত বানু, বিআইবিএম প্রভাষক রাজীব কুমার দাশ, বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক প্রদীপ পাল, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিআইবিএম সুপারনিউমারারি প্রফেসর মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ, জনতা ব্যাংকের এমডি মো. আব্দুল জব্বার, ঢাকা ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু জাফর এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. খোরশেদ আলম।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, ২০২১ সালে এসএমই খাতে বিনিয়োগের ২৫ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যবহার হয়েছে। তবে রপ্তানির লাগাম টেনে ধরায় ২০২২ সালে সে হার নেমে এসেছে মোট এসএমই ঋণের ২১ শতাংশে। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক বিবেচনায় এই হার আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত মোট লেনদেনের মাত্র ৯ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তাদের অবদান।
রপ্তানির আবেদন বাতিল হওয়া এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় বাধা বলে উল্লেখ করা হয় গবেষণায়।
মোটা দাগে এসএমই উদ্যোক্তাদের রপ্তানি আবেদন বাতিলের পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়। প্রথমত, অপর্যাপ্ত জামানত। জামানতের অভাবে ৩৬ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তার রপ্তানি আবেদন বাতিল হয়। উচ্চ সুদহারের কারণে বাতিল হয় ১৮ শতাংশ, পূর্বের লেনদেনের তথ্য না থাকায় ১৭ শতাংশ, উচ্চ ঝুঁকির কারণে ১১ শতাংশ ও পর্যাপ্ত দলিলের অভাবে ১০ শতাংশ আবেদন বাতিল হয়।
পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, দুটি বিদেশি ও ২৩টি বেসরকারি ব্যাংকের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
অনলাইনে যুক্ত প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন এসএমই উদ্যোক্তারা। বিশেষ করে দরিদ্র দেশ এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এর হার বেশি। এসএমই উদ্যোক্তারা সরাসরি বিদেশি বাজারে পণ্য রপ্তানি করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন।
বিআইবিএম সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ও জনতা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, আমি যখন জনতা ব্যাংকে ছিলাম, তখন বড়দের চাপে ছোট গ্রাহকদের দেখার সুযোগ হতো না। তবে এখন জনতা ব্যাংক এসএমইকে গুরুত্ব দিয়েছে। যখন এসএমইর কথা ভাবলাম তখনই দেশে মহামারি আঘাত হানল। এরপর শুরু হলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এসএমই ফাইন্যান্সে যতটা এগিয়েছি এসএমই ট্রেড ফাইন্যান্সে ঠিক ততটাই পিছিয়েছি। রপ্তানিতে পণ্য বহুমুখীকরণের অন্যতম একটি দিক হতে পারে এই এসএমই ট্রেড ফাইন্যান্স। দেশব্যাপী এসএমই গ্রাহক এবং আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা অবহেলিত।
তারা চাইলেই এলাকাতে বসে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না। শহরে যেতে হয়। অনেক গ্রাহক ঢাকায় এসে অ্যাকাউন্ট খোলেন এবং লেনদেন করেন। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ ব্যাংকের বাইরে রয়ে গেছে।
তাদের ব্যাংকের আওতায় আনতে হবে। পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনে তাদের প্রণোদনা দিতে হবে। এ ছাড়া জামানতের শর্ত শিথিল করে একটি নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।