• মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন

বারো আউলিয়ার দরবারে যা দেখবেন

Reporter Name / ৩ Time View
Update : সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৫

বরিশাল শহর থেকে মাত্র ২১ কিলোমিটার দূরে বাকেরগঞ্জ উপজেলার এক গ্রাম্য পরিবেশে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটি আধ্যাত্মিক কেন্দ্র—বারো আউলিয়ার দরবার। এটি কেবল একটি ধর্মীয় স্থান নয় বরং এটি বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনা, ইতিহাস এবং লোক কল্পনার এক বিরল সংমিশ্রণ। এখানে মুসলিমরা নামাজ আদায় করেন, হিন্দুরা পূজা দেন আর সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেন—এখানে মানত করলে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়।

দরবার নিয়ে জনশ্রুতি

জনশ্রুতি রয়েছে, বহু বছর আগে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ১২ জন আউলিয়া এ অঞ্চলে আসেন। সেই সুবাদে চন্দ্রদ্বীপের (বর্তমান বরিশাল অঞ্চল) রাজা তাদের উপঢৌকন পাঠান। কিন্তু কিছুদিন পর সেই উপহার আবার ফেরত চান। উপহার দিয়ে ফেরত নেওয়ার এই হীনম্মন্যতা মেনে নিতে পারেননি আউলিয়ারা। এতে তারা অপমানিতবোধ করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন এখান থেকে চলে যাবেন। তবে যাওয়ার আগে অলৌকিকভাবে একটি মাটির সুড়ঙ্গ তৈরি করে সেখান থেকে স্বর্ণ, রৌপ্য, খাদ্যশস্য, থালা-বাসন এমনকি জীবন্ত ঘোড়া উগড়ে দিয়ে সেই পথ ধরেই গায়েব হয়ে যান তারা।

খবর শুনে রাজা ঘোড়ার বহর ছুটিয়ে আসেন ঘটনাস্থলে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে যতটুকু এলাকায় আউলিয়াদের পা পড়েছে, সেটুকু জমি তিনি খাজনামুক্ত করে দেন। সেই জায়গাটিকে ঘিরে পরবর্তীতে গড়ে ওঠে একটি বড় দরবার।

দরবারের গোড়াপত্তন

বারো আউলিয়ার দরবার প্রতিষ্ঠা নিয়ে দুই রকম তথ্য পাওয়া যায়। একদিকে ইতিহাসবিদ সিরাজউদ্দিন আহমেদ তার ‘বরিশাল বিভাগের ইতিহাস’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, এটি সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে (১৬৫৮-১৭০৭) প্রতিষ্ঠিত। অন্যদিকে দরবারে পালিত ৫৬৫তম ওরস মাহফিলের হিসাব অনুসারে, প্রতিষ্ঠার বছর ধরা হয় ১৪৫৭ সাল। যদিও ওরসের গণনা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত নয়।

বারো আউলিয়ার দরবারে যা দেখবেন

ধর্মীয় সহাবস্থান

দরবারের মূল আকর্ষণ হলো—পাকুড়গাছের ভেতরে এক রহস্যময় সুড়ঙ্গ, যেখান থেকে আউলিয়ারা গায়েব হয়েছিলেন বলে কথিত আছে। এর চারপাশে এখনো রয়েছে পাকুড় গাছের ঝোপঝাড়। দেখে মনে হয় এ যেন এক ইতিহাস ও রহস্যে ঘেরা স্থান। এই সুড়ঙ্গ দিয়েই প্রবেশ করতে হয় দরবারে। দরবার চত্বরে নারীদের নামাজের স্থানও রয়েছে।

এ ছাড়া দরবারের সামনে একটি শিব-পাথর সদৃশ বস্তু রয়েছে। যেটি হিন্দু ভক্তদের কাছে পবিত্র শিব লিঙ্গ হিসেবে পরিচিত। নবদম্পতিরা নাকি এখানে সিঁদুর ও সরিষার তেল মাখিয়ে দেন। কেউ কেউ দুধ ঢেলে দেন।

স্থানীয়রা জানান, এ দরবারে একসাথে মুসলমানরা যেমন নামাজ আদায় করেন; তেমনই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও নিয়মিত পূজা দেন। বিশেষ করে নবান্ন উৎসবের সময় হিন্দুদের আনাগোনা বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া কিছু ভক্ত বিশ্বাস করেন, দরবারের পাশের বড় পাকুড় গাছের ডাল বা শিকড়ে কাপড় বা পলিথিন বেঁধে মনের আশা লেখা থাকলে তা পূরণ হয়। আশা পূরণ হলে আবার নিজ দায়িত্বে পলিথিনটি খুলে ফেলতে হয়।

মাজারের খাদেম পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি জানান, এখানে মুসলমানেরা নামাজ পড়েন, কবর জিয়ারত করেন। হিন্দুরা তাদের রেওয়াজ অনুযায়ী পূজা-অর্চনা করে চলে যান। এ ছাড়া দোল পূর্ণিমা, লক্ষ্মী পূর্ণিমা ও অগ্রহায়ণ মাসের ১০ তারিখে বারো আউলিয়ার দরবারে ওরস মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

বারো আউলিয়ার দরবারে যা দেখবেন

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বরিশালে সড়কপথ, নৌপথ ও আকাশপথ—তিনভাবেই যাওয়া যায়। অর্থাৎ বাস, লঞ্চ অথবা উড়োজাহাজে যেতে পারবেন। তবে বরিশাল যাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও রোমাঞ্চকর উপায় হলো লঞ্চ। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বরিশালের উদ্দেশে লঞ্চ চলাচল করে।

এ ছাড়া ঢাকার যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, সায়েদাবাদ এবং মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বরিশালের বাস চলাচল করে। পদ্মা সেতু হয়ে বাসে বরিশাল যেতে অল্প সময় লাগে। এসি, নন-এসি ভেদে এসব বাসের ভাড়া ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা। দ্রুত বরিশাল যেতে চাইলে উড়োজাহাজে যাওয়া যায়।

এরপর বরিশাল শহর থেকে সরাসরি অটোরিকশা, লোকাল বাস বা সিএনজিতে করে এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় বাকেরগঞ্জের বারো আউলিয়ার দরবারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category