• বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:০০ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
নাইজেরিয়ায় জ্বালানি ট্যাঙ্কারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ৩৮ তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০ ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো কোন দিকে যাবে এনসিপি, বিএনপি নাকি জামায়াত? কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে ফ্রান্সে কঠোর হচ্ছে রেসিডেন্স পারমিটের শর্ত, বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কবার্তা সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ শাহজালালে পুড়েছে ২০০ কোটি টাকার বেশি ওষুধের কাঁচামাল রংপুরের ছয় সংসদীয় আসন শক্ত অবস্থানে জামায়াত, নেতৃত্বের লড়াইয়ে বিভক্ত বিএনপি আপিলের শুনানি শুরু তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে ব্যাংকে টাকা রেখে মাসিক মুনাফা গ্রহণ করে সংসার পরিচালনা কি জায়েজ?

ব্যাংকে টাকা রেখে মাসিক মুনাফা গ্রহণ করে সংসার পরিচালনা কি জায়েজ?

Reporter Name / ৩৪ Time View
Update : রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫

প্রশ্ন: ১. বর্তমানে বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংক নামে যেসব ব্যাংক পরিচালিত এই ব্যাংকগুলোতে যে কোনো মেয়াদী ডিপিএস রাখা, তার লভ্যাংশ গ্রহণ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ কি না?

২. এফডিআর নির্দিষ্ট অংকের টাকা যে কোনো মেয়াদী জমা রেখে ব্যাংক কর্তৃক যে মুনাফা বা লভ্যাংশ দেয় তা নেওয়া যাবে কি না? শরীয়তের দৃষ্টিতে দলীলসহ  সমাধান দেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ রইল।

উত্তর: আমাদের দেশে বর্তমানে শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত হওয়ার দাবিদার ইসলামি ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগে যথাযথভাবে শরীয়তের নীতিমালা অনুসারণ করে না।

তাই শরীয়তের এ সংক্রান্ত নীতিমালা যথাযথভাবে পালনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত এসব ব্যাংকে ডিপিএস, এফডিআর বা অন্য কোনো সেভিং একাউন্টে টাকা রেখে অতিরিক্ত গ্রহণ করা যাবে না।

এছাড়া প্রচলিত ব্যাংকগুলোতে ফিক্সড ডিপোজিট কিংবা অন্যান্য সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা এবং এর থেকে মুনাফার নামে প্রাপ্ত অর্থ ভোগ করা জায়েজ নয়।

কারণ, এসব মুনাফা সরাসরি সুদ। যা কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলীল দ্বারা  হারাম। এদেশের মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসগুলোর (যেমন, বিকাশ)-ও একই হুকুম।

আর আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচলিত ইসলামি ব্যাংকগুলো কাগজে-কলমে ইসলামি হওয়ার দাবি করলেও প্রকৃত পক্ষে শরীয়া নীতিমালা অনুসরণ করে পরিচালিত হয় না। তাদের বিনিয়োগ কার্যক্রমগুলোর অধিকাংশই যথাযথভাবে শরীয়তসম্মত পন্থায় সম্পাদিত হয় না।

এমনকি অর্থ জমাকারীদের সাথে তাদের লেনদেনও পুরোপুরি বৈধ পন্থায় হয় না। ফিকহুল মুআমালাত ও প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর সঠিক ধারণা রাখেন– এমন কারো কাছেই বিষয়গুলো অস্পষ্ট নয়।

 

আর তাদের কারবারগুলো শরীয়াসম্মত না হওয়ার বড় আরেকটি প্রমাণ তো ভুয়া ও বে-আইনি লেনদেন করে অনেকগুলো ইসলামি ব্যাংকের দেওলিয়ার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া।

অতএব ইসলামিক ডিপিএস-এ টাকা জমা রাখা এবং এর থেকে মুনাফার নামে দেওয়া টাকা ভোগ করা জায়েয হবে না। এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

হালাল-হারাম বেছে চলতে চায় এমন মানুষের জন্য এধরনের টাকা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়। মুনাফার নামে দেওয়া এ ধরনের টাকা সদকা করে দেওয়াই নিরাপদ।

সুদি ব্যাংকে টাকা রাখার বিধান

ব্যাংকে টাকা রাখার চারটি পদ্ধতি রয়েছে। তা হলো, কারেন্ট অ্যাকাউন্ট (চলতি হিসাব), সেভিংস অ্যাকাউন্ট (সঞ্চয়ী হিসাব), ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট (মেয়াদি হিসাব) ও লকার।

প্রথম তিন অ্যাকাউন্টে যে টাকা রাখা হয়, ব্যাংকিং পরিভাষায় সেটাকে আমানত বলা হয়। তবে শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এ টাকা আমানত নয়। বরং ঋণ বা করজ। কারণ, ঋণের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এর গ্রহীতা সর্বাবস্থায় দায় গ্রহণে বাধ্য থাকবে। এই বৈশিষ্ট্যটি ব্যাংকিং আমানতে পাওয়া যায়।

এছাড়া শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো কিছুকে আমানত বিবেচনা করার জন্য শর্ত হলো, ওই জিনিসটি হুবহু সংরক্ষিত রাখা। কিন্তু ব্যাংকিং আমানত হুবহু সংরক্ষিত থাকে না। বরং ব্যাংক তা নানাভাবে বিনিয়োগ করে থাকে। সেজন্য ব্যাংকে রাখা টাকা শরিয়ত ঋণ বা করজ হিসেবে বিবেচনা করে। আমানত হিসেবে গণ্য করে না।

অবশ্য চতুর্থ যে প্রকার রয়েছে তথা লকার (ব্যাংক থেকে লোহার বক্স ভাড়া নিয়ে তাতে টাকা পয়সা বা মূল্যবান সামগ্রী রেখে তা ব্যাংকের নিকট আমানত রাখা), এই সুরতে ব্যাংকে জমানো সামগ্রী আমানত বলে গণ্য হবে।

সুদি ব্যাংকের কারেন্ট অ্যাকাউন্টে প্রয়োজন সাপেক্ষে টাকা রাখা জায়েজ। কারণ, কারেন্ট অ্যাকাউন্টে রাখা টাকার বিনিময়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের মুনাফা প্রদান করে না; উল্টা সার্ভিস চার্জ ও অন্যান্য চার্জ কাটে। সেজন্য তাতে জান ও মালের নিরাপত্তা ইত্যকার প্রয়োজনে টাকা রাখা যাবে।

তবে ইসলামী ব্যাংকের কারেন্ট অ্যাকাউন্টে রাখার দ্বারা যদি ওই প্রয়োজন পুরা করা সম্ভব হয়, তাহলে সুদি ব্যাংকে রাখার সুযোগ নেই। আর যেসব ব্যাংকের কারেন্ট অ্যাকাউন্টেও মুনাফা দেয়া হয়, সেসব ব্যাংকে টাকা রাখাই জায়েজ নেই।

আর সুদি ব্যাংকের সেভিংস কিংবা ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে টাকা রাখার কোনো অবকাশই নেই। কারণ, এসব অ্যাকাউন্টে টাকা রাখা সুদি চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। আর শরিয়তে সুদ অকাট্য হারাম।

কেউ যদি বিধান জানা না থাকার কারণে এসব ব্যাংকে টাকা রেখে থাকে, তাহলে তার করণীয় হলো, শিগগির অ্যাকাউন্টটা বন্ধ করে টাকাটা তুলে ফেলা। এক্ষেত্রে মূল টাকাটা নিজ কাজে ব্যবহার করতে পারবে।

কিন্তু মুনাফা যেটা দেয়া হবে, তা তুলে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া অসহায়-দরিদ্রদেরকে দান করে দিতে হবে। এছাড়া জনকল্যাণমূলক কাজেও ব্যয় করার অবকাশ রয়েছে। কিন্তু এর দ্বারা অন্য ব্যাংক বা একাউন্টের সুদ পরিশোধ করা বৈধ হবে না।

সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪২৬; আলমাআয়ীরুশ র্শইয়্যাহ, পৃ.  ১৫৬, ২১০-২১৬, ২৪২-২৫৫; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ৫, ২/১৫৩৯, ১৫৯৯; সংখ্যা ১২, ১/৬৯৭

উত্তর প্রদানে: ফতওয়া বিভাগ, গবেষণামূলক উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা ও দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া ঢাকা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category