• সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০১:০১ অপরাহ্ন

চিকিৎসকসহ ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু

Reporter Name / ৩ Time View
Update : সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়েই চলছে। শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজন নারী চিকিৎসকসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার ভোর সাড়ে ৫টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ডা. ফাহমিদা আজিম কাকলী। তিনি কুমিল্লা ময়নামতি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত ছিলেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন আগে ডা. কাকলী ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। রোগের জটিলতা বাড়তে থাকলে তার কিডনি ও লিভার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় শনিবার তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তার রক্তচাপ হঠাৎ কমে গেলে আইসিইউ থেকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। রাতভর চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

ডা. ফাহমিদা আজিম কাকলী ময়নামতি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে গাইনি বিশেষজ্ঞ হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সহকর্মী, শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের কাছে তিনি ছিলেন সম্মানিত ও প্রিয় একজন শিক্ষক-চিকিৎসক। স্বজনরা জানিয়েছেন, তার লাশ হিমঘরে রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তার একমাত্র মেয়ে তূর্ণা দেশে ফিরলে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে।

এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৭৮ জন। আর চলতি বছরের এ পর্যন্ত ৩৬৪ জনের প্রাণ গেছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৯০ হাজার ২৬৪ জনে। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ১ জন বরিশাল বিভাগের, ১ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ১ জন ঢাকা বিভাগের, ২ জন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এবং তিনজন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ছিলেন। এ নিয়ে নভেম্বর মাসের এ পর্যন্ত মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ৮৬ জন, যা এ বছরের কোনো মাসে সর্বোচ্চ। আর নভেম্বরের এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৪০২ জন।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় ডেঙ্গুতে এর আগে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় অক্টোবর মাসে, ৮০ জন। সেপ্টেম্বরে মারা গেছেন ৭৬ জন। জুলাই মাসে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ১০, ফেব্রুয়ারিতে ৩, এপ্রিলে ৭, মে মাসে ৩, জুন মাসে ১৯, আগস্ট মাসে ৩৯ জন মারা যান। মার্চ মাসে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি।

অন্যদিকে ডেঙ্গু নিয়ে জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৬১, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬, এপ্রিলে ৭০১, মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩, জুনে ৫ হাজার ৯৫১, আগস্টে ১০ হাজার ৪৯৬, সেপ্টেম্বরে ১৫ হাজার ৮৬৬ এবং অক্টোবরে ২২ হাজার ৫২০ জন হাসপাতালে ভর্তি হন।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে বেশি সংখ্যায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর সময় এখন পালটে যাচ্ছে। চার বছর ধরেই এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গত দুই দশকে বৃষ্টির সময় অর্থাৎ জুলাই ও আগস্ট মাসে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হতো। তবে চার বছর ধরে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটছে অক্টোবর মাসে। আর প্রায় শীতের সময় নভেম্বরে মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এ মাস ডেঙ্গুর প্রাণঘাতী মাস হিসাবে এখন চিহ্নিত হচ্ছে।

তারা আরও বলছেন, বছরের শেষ সময়ে এসে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি হওয়ার যে প্রবণতা, তা জনস্বাস্থ্যের সমস্যায় নতুন বিষয় যুক্ত করেছে। এখন ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রথাগত ভাবনাকে বাদ দিতে হবে। ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যুর সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে এ রোগ মোকাবিলার কৌশল পালটাতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category