অন্যান্য উন্নয়নশীল বা শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে চাল, চিনি, সয়াবিন তেল ও গরুর মাংসের মতো বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি বলে এক বিশ্লেষণে দেখেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
সিপিডি বলছে, টাকার মান কমে যাওয়ায় অন্তত ২৮টি নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যে এখনো উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক কর রয়েছে। এটিও মূল্যস্ফীতির জন্য দায়ী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে বৈশ্বিক বাজারে সংকটের নাম করে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছিল। তা আর কমেনি। যদিও সেসব পণ্যের দাম বৈশ্বিক বাজারে কমেছে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির সম্মেলন কক্ষে ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪: সিপিডির সুপারিশমালা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তার ভাষ্য, ‘অন্যান্য উন্নয়নশীল বা শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে চাল, চিনি, সয়াবিন তেল ও গরুর মাংসের মতো বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি।’
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য সব খাতের নিম্নআয়ের মানুষ ও অনেক পরিবার তাদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই অনেকেই তাদের খাবারের তালিকা থেকে মাংস ও মাছ বাদ দিচ্ছেন।’
এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির আগে থেকেই বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছিল। জ্বালানি দামবৃদ্ধি সেটিকে আরও খারাপ করে তুলেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে পণ্যের দাম ক্রমাগত বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধি শুধু আমদানি করা পণ্যের ক্ষেত্রেই নয়, বরং দেশে উৎপাদিত অনেক পণ্যের ক্ষেত্রেও বেড়েছে।’
সিপিডি বলছে, ‘চাল, চিনি ও সয়াবিন তেলের মতো কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস রয়েছে যা অন্যান্য উন্নয়নশীল বা শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি ব্যয়বহুল। এছাড়া যে গরুর মাংস আমরা আমদানি করি না তাও আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক বেশি। যেকোনো সংকটের সুযোগ নিয়ে পণ্যের দাম বাংলাদেশে বাড়ানো হয়।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা বলেন, ‘রাজধানী ঢাকায় চার সদস্যের একটি পরিবারের খাবারের পেছনে প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। আর খাদ্যতালিকা থেকে মাছ-মাংস বাদ দিয়ে ছোট করলে ব্যয় দাঁড়ায় ৭ হাজার ১৩১ টাকা। কিন্তু নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের যে আয় তা দিয়ে খাদ্যপণ্য কিনে টিকে থাকা কঠিন।’
‘গত বছর রাজধানীতে চার সদস্যের একটি পরিবারের খাবারের পেছনে প্রতি মাসে খরচ ছিল ১৮ হাজার ১১৫ টাকা। আর খাদ্যতালিকা থেকে মাছ-মাংস বাদ দিয়ে ছোট করলে ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ৫ হাজার ৬৮৮ টাকা।’
এমন পরিস্থিতিতে নতুন মজুরি কাঠামোতে বিভিন্ন শিল্পে শ্রমিকদের মজুরিতে ৫% বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
সিপিডির কিছু সুপারিশ
পাচারের টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে ৭% কর দিলে কোনো প্রশ্ন করবে না সরকার, আগামী বাজেটে এই সুযোগ বন্ধ করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।
সিপিডি বলছে, এই ধরনের সুযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন। এছাড়া কালোটাকা সাদা করার সুযোগও বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছে সিপিডি। অন্যদিকে ব্যাংক খাতের সংস্কারের জন্য একটি ব্যাংক কমিশন করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।
ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়িয়ে ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সমালোচনা করেছে সংস্থাটি। সিপিডি বলেছে, বিদ্যুতের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়ে প্রতি মাসে একবার পর্যালোচনা করা উচিত। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ প্রথা বাতিল করে ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পে’ ব্যবস্থায় যাওয়া দরকার।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য, রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবণতা, উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি, ব্যাংকে তারল্য ও ডলার–সংকট, আর্থিক খাতের ভারসাম্যহীনতা, রিজার্ভ হ্রাস- এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে আগামী বাজেট করতে হবে। মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতিতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা আনতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।’