• বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন

উপদেষ্টা ফারুকী সমালোচনার মুখে যা বললেন

Reporter Name / ৭ Time View
Update : বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই ছাত্র-জনতাকে সমর্থন জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হয়েছেন তিনি।এরপর থেকে তীব্র সমালোচনা শুরু হয় তাকে নিয়ে।অনেকে বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সুবিধাভোগী তিনি ও তার স্ত্রী অভিনেত্রী নুসরাত ইমরুজ তিশা।এখন ফারুকী ভোল পালটেছেন মাত্র।

এসব নানা সমালোচনার বিষয়ে মুখ খুলেছেন উপদেষ্টা ফারুকী।নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। তার সেই স্ট্যাটাস হুবহু যুগান্তরের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

“প্রিয় ভাই-বোনেরা, ঘুণাক্ষরেও যা আগে ভাবি নাই, এখন আমাকে সেটাই করতে হচ্ছে। যাই হোক শুরু করি।

আমি মাত্রই দুই দিন হলো কাজ করছি। এর মধ্যে আমার ধারণা আমার মন্ত্রণালয়ে সহকর্মীদের মাঝে এই ধারণা দিতে পেরেছি যে আমরা কিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটাতে চাই যেটা স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদে আমাদের সংস্কৃতি কর্মীদের কাজে আসবে।

যাই হোক, যদিও আমি কোনো পদ চাই নাই, তবুও দায়িত্বটা নেওয়ার পর আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে করার চেষ্টা করছি।

কিন্তু এর মধ্যে আমাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে এক অবিশ্বাস্য অভিযোগের- আমি নাকি ফ্যাসিস্টের দোসর! যেই ফ্যাসিস্টকে তাড়ানোর জন্য জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাশে দাঁড়ালাম ১৬ জুলাই থেকে, অলআউট অ্যাটাকে গেলাম এটা জেনে যে ফ্যাসিস্ট হাসিনা টিকে গেলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যু অথবা জেল, আমি তারই সহযোগী?

আমি আমার চেয়ারের জন্য কোনো সাফাই দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। কিন্তু শিল্পী হিসাবে অপমানিত বোধ করেছি বলেই কয়টা কথা বলছি।

শাহবাগ আন্দোলন যখন শুরু হয় আর সবার মতো আমিও ভেবেছিলাম এটা নির্দলীয়। যে কারণে আমার সব পোস্টে এটাকে ঠেলে ‘রাষ্ট্র মেরামতে’ এজেন্ডার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পরেই যখন বুঝে যাই, তখনই লিখি ‘কিন্তু এবং যদির খোঁজে’। যে কিন্তু এবং যদি শাহবাগ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর ইসলামকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে আজকের যে ফ্যাসিবাদের সুচনা করা হয়েছিলো তার প্রতিবাদে লিখি, ‘এই চেতনা লইয়া আমরা কি করিব’। ২০১৪ সালে। এই দুইটা লেখার যেকোনো একটা লেখা ছাপা হওয়ার পর বিএনপির শিমুল বিশ্বাস সাহেব ফোন দিয়েছিলেন কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য! আমি কোনো দল করি না। কিন্তু আমি আওয়ামী লীগ হলে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা আমার লেখায় কি খুঁজে পেলেন যে আমার সঙ্গে পরিচয় না থাকা সত্ত্বেও আমার নাম্বার জোগাড় করে ফোন দিলেন?

আমি ঘটনাচক্রে একজন পরিচিত মুখ, ভাই ও বোনেরা। একজন লেখক যতটা স্বাধীনভাবে লিখতে পারেন, ফ্যাসিবাদের কালে আমার সেই স্বাধীনতা পাওয়ার সুযোগ ছিল না। তার মধ্যেও যতটুকু করেছি তার ফলও আমাকে ভোগ করতে হয়েছে। ২০১৫ সালে সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন সেলের হেনস্তার শিকার হওয়ার মধ্যে যে দীর্ঘ অত্যাচারের শুরু। সেই বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আমার সিমপ্যাথি পাওয়ার ইচ্ছা এবং প্রয়োজন নাই।

অনেকে বলছে, আমি ভারতীয় হেজেমনির অংশ। যে লোককে বাংলাদেশের কালচারাল এস্টাবলিশমেন্ট ঘৃণা করে আমি কলকাতা কেন্দ্রিক ভাষার হেজেমনি ভেঙে দিয়েছি বলে, সেই কিনা এই হেজেমনির অংশ!!! আমি পৃথিবীর কোনো দেশেরই ঢালাও নিন্দা করি না। কারণ দেশে নানা চিন্তার মানুষ থাকে। আমি সবার সঙ্গেই কথা বলতে চাই, কাজ করতে চাই। কিন্তু আমার দেশের ক্ষতি হলে, আমি তার বিরুদ্ধে বলতে কুন্ঠা করি না। ফেলানীর মৃত্যুর পর কি পোস্ট দিয়েছিলাম ২০১৩ সালে সেটা দেখতে পারেন নিচে।

আমার অবস্থানের উপহার হিসাবে ভারতীয় হাইকমিশনে একসময় কর্মরত রন্জন মন্ডল নামের এক কর্মকর্তা তার ফেসবুকে পাবলিক পোস্ট দিয়ে বহুবার কি অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করেছিল সেটা খোঁজ করে দেখুন। আর সেই আমি পার্ট অব হেজেমনি? আমরা এক অনন্ত ভয়ের ঘরে বাস করে এসেছি। আমরা কথা বলতে ভয় পেতাম। এমন কি কথা বলার সময় ঘরে ফোন থাকলে সরিয়ে ফেলতাম। পাছে আঁড়িপাতে। আমার মনে আছে ২০১২ সালে শুধুমাত্র কথা বলার জন্য আমি আর ‘আরিফ আর হোসাইন’ লুকিয়ে আমেরিকান ক্লাবে গিয়ে বসে আলাপ করতাম কিভাবে এই জালিম সরকারকে হটানো যায়। বিএনপি এবং জামায়াত কিছু করতে পারবে? আর্মির মনোভাব কি? জোনায়েদ সাকির সঙ্গে বাটন ফোনে কথা বলে গোপনে দেখা করতাম আর পরামর্শ করতাম কি করা যায়। সেই আমি আওয়ামী ফ্যাসিজমের পার্ট?

আমি তো কোনো বিপ্লবী নই। ছিলাম না কোনো কালে। আমি ফিল্মমেকার। ঘটনাচক্রে এবং আল্লাহর রহমতে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। আমি আমার সেই পরিচয়েই গর্বিত। আমি মারা গেলে আমাকে ফিল্মমেকার হিসাবেই মনে রাখা হবে, মন্ত্রী হিসাবে না। ফলে মন্ত্রিত্ব আমার কাছে কোনো অর্জন না, পাবলিক সারভেন্টের দায়িত্ব মাত্র। আমি এটা ফাইনালি অ্যাকসেপ্ট করেছি নিজের ফিল্মের বাইরেও আমার দেশকে কিছু দেওয়ার ক্ষমতা আল্লাহ দিয়েছে- এটা বিশ্বাস করেছি বলে। আমার মনে হয়েছে, জীবনের এই পর্যায়ে এসে নিজের লাভ-ক্ষতি না ভেবে এই ক্ষমতা দেশের কাজে লাগাই।

লাস্টলি, আই অ্যাম লাভিং মাই জব। বাট আই অ্যাম হেইটিং দ্য ফ্যাক্ট দ্যাট আই হ্যাড টু রাইট দিস!”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category