খুলনা মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন দলটির নেতারা। হামলার প্রতিবাদে রবিবার (০৩ নভেম্বর) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি করেছেন তারা। এ সময় জাতীয় পার্টির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও খুলনা জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ওতপ্রোতভাবে সমর্থন দিয়েছে জাতীয় পার্টি। বিভিন্ন এলাকায় দলের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। খাবার ও পানি সরবরাহ করেছেন। অনেকে আহতও হয়েছেন। এরপরও আওয়ামী লীগ, তথা ফ্যাসিবাদের কথিত দোসর আখ্যা দিয়ে জনগণ থেকে জাতীয় পার্টিকে বিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমরা। পাশাপাশি ঢাকা, খুলনাসহ দেশের যেসব জায়গায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা হয়েছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই।’
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, হামলার সঙ্গে ছাত্র-জনতা কোনোক্রমেই জড়িত নয়। বরং যারা আমাদের পার্টি অফিস দখলে নিতে চায়, তাদের উসকানিতে তৃতীয় পক্ষ এ হামলা চালিয়েছে। সুতরাং হামলাকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘শনিবার ঠিক মাগরিবের নামাজের সময় শতাধিক লোকের একটি মিছিল নিয়ে খুলনা জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে থাকা চেয়ার-টেবিল, ফ্যান, দুটি টিভি, জেলা ও মহনগর দফতর সম্পাদকের মূল্যবান কাগজপত্রসহ নগদ ২৫ হাজার ২৯০ টাকা লুট করে। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের ছবি, বর্তমান চেয়ারম্যানের ছবি, নেতাকর্মীদের ছবি, পার্টি অফিসের সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পূর্বপরিকল্পিত এই হামলার বিষয়টি আগেই আঁচ করতে পেরেছি আমরা। এজন্য শুক্রবার মহানগর পুলিশ কমিশনারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হামলার আশঙ্কার কথা জানতো। এরপরও হামলার ঘটনায় কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’
এ ব্যাপারে মহানগর পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, ‘জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা হবে, আগে থেকে এমন কোনও শঙ্কা ছিল না। মিছিলটি ওই এলাকায় যাওয়ার কথা ছিল না। হঠাৎ সেখানে যায় এবং কার্যালয়ে ভাঙচুর করে। সবকিছু এত দ্রুত হয়েছে, যে কারও কোনও কিছু করার ছিল না।’
শনিবার সন্ধ্যায় নগরের ডাকবাংলা মোড় এলাকায় জাতীয় পার্টির খুলনা মহানগর ও জেলা কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে ডাকবাংলা মোড়ে যায়। তারা প্রথমে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে। পরে কার্যালয়ের ভেতর ঢুকে চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা জাতীয় পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
এই হামলার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনও সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির খুলনার অন্যতম সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, উত্তেজিত জনতা জাতীয় দালাল ও ফ্যাসিস্টের প্রধান সহযোগী জাতীয় পার্টির কার্যালয় ভাঙচুর করেছে এবং সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। ওই ঘটনার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনও সম্পৃক্ততা নেই।